ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে অথচ ওরা শুধুই নেগেটিভ বলছে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে অথচ ওরা শুধুই নেগেটিভ বলছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশী অর্থে পরিচালিত টিআইবিকে এনজিও আখ্যায়িত করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানতে চেয়েছেন কাজ শুরুর পর থেকে সংস্থাটি কি বাংলাদেশ নিয়ে পজেটিভ কিছু বলেছে? তারা তাদের মতো করে মূল্যায়ন করে আর আমরা আমাদের মতো দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সফররত জার্মানির ফেডারেল মিনিস্ট্রির শ্রম ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক পার্মানেন্ট স্টেট সেক্রেটারি জর্জ অসমুসিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কি কখনও পজিটিভ কিছু বলছে? টিআইবির দুর্নীতির সূচক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের কি কোন প্রবৃদ্ধি বাড়েনি, কোন উন্নয়ন হয়নি? এমন কোন সেক্টর নেই, তারা সেই সেক্টর নিয়ে পজিটিভ কিছু বলেছে? শুধু তাই নয়, এ প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে কখনও কি পজিটিভ কিছু বলেছে? গত মঙ্গলবার প্রকাশিত সিপিডির এক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্বের সবাই যখন বলছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তারা নেগেটিভ কথা বলছে। এর আগে বুধবার বিশ্বের মোট ১৭৫টি দেশের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, দুর্নীতিতে এ বছর বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। গত বছর এ অবস্থান ছিল ১৬তম। অর্থাৎ, এদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। দুর্নীতির বৈশ্বিক ধারণা সূচকে বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে বলেও মন্তব্য করে টিআইবি। পৃথিবীর কোন দেশই দুর্নীতিমুক্ত নয় মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের শুধু টাকা আছে। সুশীল সমাজ আর পত্রিকার মালিকদের কোন টাকা নেই? সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যদি কোন উন্নয়ন না হয়ে থাকে, তাহলে রিজার্ভ, রেমিটেন্স বাড়ত না। এ সময় দেশের একটি প্রথম সারির দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদাহরণ টানেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা কিছু বলতে পারব না, লিখতেও পারব না। ওই পত্রিকাটির অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদের উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে প্রতিবেদনের খারাপ অংশ লিখেছে। তাহলে ভাল অংশ লেখেনি কেন? ভাল লিখলে মানুষ পড়ে না, তাই নিগেটিভটাই লিখবেন? বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের খারাপটা লিখবেন আর ভালটা লিখবেন না, তা কি করে হয়? পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট কোটা প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি আগে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যদি কোন মালিক দেশ থেকে এক টন কাগজ নেন, তাহলে বিদেশ থেকে একটন ডিউটি ফ্রি কাগজ আনতে পারবেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের সময় কিছু পত্রিকার মালিক-সম্পাদক আবার আগের জায়গায় ফিরে গেলেন। আর এখন কি হচ্ছে? ২০০ কপি পত্রিকা ছেপে ২০ হাজার টন কাগজ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করে নয়াবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে দেশের কাগজ শিল্প মালিকরা এখন আমার কাছে আসছে ডিউটি ফ্রি নিউজপ্রিন্ট কাগজ আমদানি বন্ধের জন্য। কারণ, দেশের কাগজ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চুপচাপ থাকি, কারণ আমরা লিখতে পারব না। প্রত্যেক দিন জবাবও দিতে পারব না। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে ভাল আছে, মন্দও আছে। এমন অনেক ডাক্তার আছেন যিনি ৮০ লাখ টাকা আয়কর দিয়েছেন। তাই বলি, আমাদের ১০০ শতাংশ আয়কর দেয়ার লোকও আছেন। যারা আমাদের উপদেশ দেন, গিয়ে দেখেন তাদের আয়করও সেরকম নাই। সুতরাং, একটা সমাজে আমাদের ভাল-মন্দ থাকে। জার্মান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক ॥ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে জার্মান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ওই সময় তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জার্মানি হবে বাংলাদেশের এক নম্বর রফতানি বাজার। এ মুহূর্তে জার্মানি বাংলাদেশের একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার। জার্মানি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জার্মানি খুশি। আগামী দিনগুলোতে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন এবং বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহযোগিতার প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে জার্মানি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন শুধু তৈরি পোশাক রফতানির মধ্যে না থেকে রফতানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বে বিভিন্ন উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের ওষুধ, জাহাজ, আইসিটি এবং চামড়া আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×