ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে মৌলবাদীরা ফের মাঠ গরম করতে চায়

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে মৌলবাদীরা ফের মাঠ গরম করতে চায়

বিভাষ বাড়ৈ ॥ হজ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার এমনকি জেলে পাঠিয়ে বিচার শুরু করলেও সঙ্কট তৈরি করতে চায় বিএনপি সমর্থিত ইসলামী দলগুলো। বিএনপির নির্দেশ অনুসারে দলগুলোকে নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়েছে জামায়াতীরা। এবার নতুন আবদার তুলে বিএনপি নেপথ্যে থেকে উগ্রবাদী দলগুলোকে মাঠে নামিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। এ লক্ষ্যেই মাঠে নামানো হয়েছে হেফাজতের একটি অংশ, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনসহ ২০ দলের শরিক উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও ইসলামী আন্দোলনকে। কথিত সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের ব্যানারে হুমকি দেয়ার পর এবার ইসলামী আন্দোলন হুমকি দিয়েছে, মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করলেই হবে না। সাধারণ আইনে বিচার করলেও হবে না। তার ফাঁসির দাবিতে আজকের (শুক্রবার) মহাসমাবেশের অনুমতি না দেয়া হলে রবিবার সারাদেশে হরতাল হবে। বৃহস্পতিবার পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ঘোষণা করেছেন, লতিফ সিদ্দিকীর সর্বোচ্চ শাস্তি ও এ সংক্রান্ত আইন পাসের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে শুক্রবারের (আজ) মহাসমাবেশের অনুমতি না দিলে রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হবে। বাধা দিলে সোমবারও হরতাল হবে বলে হমকিও দেন তিনি। একই সঙ্গে বলেছেন, আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে কিংবা সরকার উৎখাত নয়। একজন নাস্তিক-মুরতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাসের দাবিতে আমাদের মহাসমাবেশ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, আমিরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, নগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন প্রমুখ। জানা গেছে, ২০ দলের শরিক ইসলামী দলসহ বেশ কিছু ইসলামী দলের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। বেশ কিছু দল সরাসরি জামায়াতের নির্দেশ অনুসারেই বিভিন্ন ইস্যুতে সব সময় আন্দোলন করে। যাদের নেতাদের সঙ্গে জামায়াতের রয়েছে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও। সম্প্রতি খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিবের পদে থেকে সরাসরি জামায়াতের রাজনীতি করার ঘটনায় পদ থেকে অপসারণ হয়েছেন জাফরুল্লাহ খান। যিনি হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন। সূত্রগুলো বলছে, উগ্রবাদী কিছু ইসলামী দল জোটে থাকার পরেও লতিফ সিদ্দিকীর ইস্যু নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় কোন ফায়দা লুটতে না পারলেও হাল ছাড়েনি বিএনপি। তবে জনগণের কাছে ধর্মের নামে ভাওতাবাজির রাজনীতি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি নেপথ্যে থেকে জামায়াত-শিবিরকে দিয়ে উদ্দেশ্য সফল করতে চায়। জামায়াত-শিবিরও চায় তাদের মদদপুষ্ট উগ্রবাদীদের মাধ্যমে সঙ্কট সৃষ্টি করতে। সরকারের কঠোর অবস্থানে লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনগণকে প্রকাশ্যে বিভ্রান্ত করতে না পেরে তাই সমমনা কিছু সংগঠনকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি-জামায়াত। এরই অংশ হিসেবে এ সপ্তাহে সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহের ব্যানারে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। যেখানে ছিলেন ২০ দল ও হেফাজতের ব্যানারে থাকা বিতর্কিত সেই নেতারা। সংগঠনের কয়েক শীর্ষ নেতা হরতাল দিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যদিও তাঁরা দাবি করছেন, আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছি সরকারের কারণে। সরকার তো মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর দাবির চেয়েও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তাহলে আবার কেন আন্দোলন? এসব প্রশ্নে নেতারা বলছেন, লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম পদ থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্তকে আমরা মোবারকবাদ জানাই। তবে তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ আইনে এটা হবে না। নতুন আইন পাস করতে হবে। আবদুল লতিফ সিদ্দিকীতে জেলে পাঠানোর পর হরতালসহ আন্দোলন থেকে সরে গেলেও এবার মাঠে নেমেছে হেফাজতের একটি অংশ। এরাই আমিরকে দিয়ে বুধবার রাতে বিবৃতি দিয়েছে যে, লতিফ সিদ্দিকীকে জেলে রাখা হলেই হবে না।
×