বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দুটি ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শেষে চারটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। সিএভিকৃত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার ও জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে শীঘ্রই এ মামলাগুলোর রায় ঘোষণা করা হতে পারে। তবে চলতি সপ্তাহে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোঃ কায়সারের মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত মোট ১৪টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদ-, আমৃত্যুকারাদ-সহ যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে আরও আটটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। অন্যদিকে তদন্ত সংস্থা আরও ডজন খানেক মামলার তদন্ত করছে। চলতি মাসে আরও কয়েকটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে মোট চারটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়েছে। এই চারটির মধ্যে সবার আগে সৈয়দ মোঃ কায়সারের মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি ) রাখা হয়। সেদিক থেকে আমরা আশা করতেই পারি কায়সারের মামলাটি শীঘ্রই রায় প্রদান করা হতে পারে। আমরা আশা করছি চলতি সপ্তাহে কায়সারের মামলার রায় হতে পারে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। কোন অবস্থাতেই ট্রাইব্যুনালকে মামলা শূন্য হতে দেব না। তদন্ত সংস্থায় বর্তমানে যে ৬ শতাধিক অভিযোগ এসেছে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এখান থেকেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে প্রায় ৪৫টি মামলার তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছি। বর্তমানে আরও ডজনখানেক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। আমরা চলতি মাসে আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত মোট ১৪টি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। যাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছে তারা হলেন বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ, কাদের মোল্লা, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, গোলাম আযম, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, আব্দুল আলীম, চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং মোঃ আশরাফুজ্জামান খান, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী, জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকার, মোঃ মোবারক হোসেন। আর চারটি মামলা সিএভি রাখা হয়েছে। যে কোন দিন এসব মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
সৈয়দ মোঃ কায়সার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও একটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ২০ আগস্ট রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য রয়েছেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম।
এটিএম আজাহারুল ইসলাম ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রাজাকার কমান্ডার এটিএম আজাহরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর সিএভি রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বোধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য রয়েছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশন পক্ষ এটিএম আজহারুল ইসলামের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- কামনা করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষ বলে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা তাই তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন।
আব্দুল জব্বার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারের মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে মর্মে অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ৩ ডিসেম্বর বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। জব্বারের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে লুটপাট চালানো ও অগ্নিসংযোগের মতো পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
আব্দুস সুবহান ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ আব্দুস সুবহানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ও তার হাতে নির্যাতিত-ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: