ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি এখন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ॥ নাসিম

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সম্মেলনে সর্বসম্মত কমিটি ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সম্মেলনে সর্বসম্মত কমিটি ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেন মিস করে বিএনপি এখন দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই দেশকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়, এদেশের গণতন্ত্রকে কিভাবে নষ্ট করা যায়, সেটা নিয়ে ব্যস্ত আছে। তাঁরা একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার জন্য দেশী-বিদেশী চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের গণতন্ত্র নষ্ট করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। তাদের এই স্বপ্ন কোনদিনই বাস্তবায়ন হবে না। শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনে বিশাল উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলে জামায়াত-শিবির আর মাথাচাড়া দিতে পারবে না। এই অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আখতার জাহান এমপির সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সদস্য এসএম কামাল হোসেন, সাংসদ ওমর ফারুক চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাংসদ এনামুল হক, আবদুল ওয়াদুদ দারা ও আয়েন উদ্দীন। সম্মেলনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান আসাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আগত কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিতে তাঁদের নাম ঘোষণা করেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সম্মেলনের উদ্বোধন করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে মার্শাল ল থাকত, গণতন্ত্র থাকত না। নির্বাচনেরর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের কারণেই এখন হাজার হাজার লোক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছেন। নির্বাচনের ট্রেন রাজশাহী থেকেও ছেড়ে চলে গেছে। ২০১৯ সালের একদিন আগেও সেই ট্রেন আর ফিরে আসবে না। ২০১৯ সালে নির্বাচন করে এই সরকার আবার হ্যাটট্রিক করবে। তারা নির্বাচন মিস করে এখন এই দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিচার করেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎবরণকারী লাখ লাখ শহীদের হত্যাকারীদের বিচার করছেন। যেই নেতারা, মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তাঁদের হত্যাকারীদের ওই খুনী জিয়া, মোশতাক ও এরশাদ বিচার করেননি। এই সরকার সেই যুদ্ধাপরীদের বিচার করছে। জিয়ার উত্তরসূরিরা এখন সেই বিচার নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুত সঙ্কট সমাধান করছেন, জঙ্গী দমন করেছেন। আমরা এই সরকারের সঙ্গে আছি, এই সরকারের সঙ্গে আমরণ থাকব। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নেতা নির্বাচন নয়, সৈনিক নির্বাচন করতে এসেছি। দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার পিতাও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার শরীরে রাজাকারের কোন রক্ত নেই। এজন্য আমি গর্ববোধ করি। এটাই আমাদের শক্তি। এটাই আমাদের আত্মপ্রত্যয়ের দৃঢ় ভিত্তি। তিনি সম্মেলনের সফলতা উল্লেখ করে বলেন, সম্মেলন মানে নেতা ও নেত্রী নির্বাচন নয়, এটা নেতাকর্মীদের মিলনমেলা। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব আরও পাকাপোক্ত হয়, সৌহার্দ্য বাড়ে। সম্মেলন দীর্ঘদিন পর হলে অনেক ক্ষতি হয়। এজন্য দ্রুত সম্মেলন করা উচিত। সময়মতো সম্মেলন করলে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা আসে, নেতৃত্ব প্রাণ পায়। তিনি বলেন, রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াতের তা-ব দেখেছি। সম্মেলন দেখে মনে হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে রাজশাহীতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সম্ভব না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে এসে অনেকে জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন। তাঁদের সেই জীবনদানের মধ্য দিয়েই জেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন বিশাল শক্তি নিয়ে আবির্ভূত হবে। বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, জাতির জীবনে স্বপ্ন থাকতে হয়। আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্ন দেখেই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের স্বপ্ন ছিল ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে। তারা কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন করছে। এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে, একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে বিএনপি-জামায়াত তা-ব চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সৈনিকরা সেই তা-ব মেনে নেবে না। আজকের সম্মেলন সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেই সেই ভাবধারাকে ধ্বংস করে পাকিস্তানী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত করেছিল। আওয়ামী লীগ সে চক্রান্ত প্রতিহত করেছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সেই চক্রান্ত প্রতিহত করেছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে বলে মত ব্যক্ত করেন তিনি। কমিটি ঘোষণা সম্মেলনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন সভাপতি হিসেবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান আসাদ নির্বাচিত হন। সম্মেলনে আগত কাউন্সিলরদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম নতুন নেতাদের নাম ঘোষণা করেন। ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য। আর আসাদুজ্জামান আসাদ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি এবং সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে সে বৈঠকে দুই পদের প্রস্তাবক ও সমর্থকও নির্ধারণ করা হয়। সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রার্থীদের প্রস্তাবক ও সমর্থক হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানায় সূত্রটি। সম্মেলন শেষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব করতে আহ্বান জানান মোহাম্মদ নাসিম এমপি। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সভাপতি হিসেবে ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির নাম প্রস্তাব করেন। তাঁর প্রস্তাবে সমর্থন জানান জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আখতার জাহান এমপি। এরপর সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানানো হলে আব্দুল ওয়াদুদ দারা এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের নাম প্রস্তাব করেন। তাঁর প্রস্তাবে সমর্থন জানান আয়েনউদ্দিন এমপি। এ পদেও আর কারও নাম প্রস্তাব না আসায় আসাদুজ্জামান আসাদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
×