ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজেটের আকার বাড়ছে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

বাজেটের আকার বাড়ছে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা হতে পারে

এম শাহজাহান ॥ ‘রূপকল্প-২০২১’ সামনে রেখে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং রূপকল্প বাস্তবায়নে বাজেটের আকার এবারও বাড়ছে। আগামী অর্থবছরে পৌনে ৩ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুন বাজেটের ব্যয় প্রাক্কলনসহ প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পরিপত্র পাঠিয়েছে। পরিপত্র পেয়ে মন্ত্রণালয়গুলো এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট কাঠামো চূড়ান্ত করবে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, আগামী চার বছরে বাজেটের আকার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। সেক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের শেষ অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৫ লাখ কোটি টাকা। রূপকল্প বাস্তবায়নে আগামী বছরের মধ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অসমাপ্ত কাজ শেষ করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে সরকার। আর এতে প্রবৃদ্ধির বর্তমান হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ শতাংশ এবং দারিদ্র্যের হার ২৬ ভাগ থেকে নামিয়ে ১৩ শতাংশ নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আগামী বাজেটে এই স্বপ্নপূরণের আগাম অর্থনৈতিক রূপরেখা তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই সঙ্গে আগামী বাজেটে কিছু চমক দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ বর্তমান সরকারের এটিই হবে দ্বিতীয় বাজেট। অহেতুক করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া হবে। গুরুত্ব দেয়া হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। সূত্র মতে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থ ও পাটমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম বাজেট। এরপর গত ৪২ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৩২০ গুণ। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে ৫ বছরেই বাজেটের আকার দ্বিগুন হয়ে যায়। এর আগে ১১ বছরে বাজেটের আকার দ্বিগুণ হয়েছিল। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে বাজেটের আকার যেমন দ্বিগুণ হয়েছে তেমনি বাস্তবায়নেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় সরকার। বাজেটের আকার বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়নের এই ধারাবাহিকতা আগামীতেও ধরে রাখার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরের ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেটের আকার ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের ব্যয় বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে রাজস্ব আয়ও। ফলে বাজেটের আকার বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১ সাল সামনে রেখে বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা জানানো হয়েছে। জানা গেছে, সরকারী ব্যয়ে দক্ষতা বাড়াতে এবং কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনে কয়েক বছর ধরে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতিতে বাজেট প্রণীত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আয় ও ব্যয় প্রাক্কলন করা হবে। পাশাপাশি পরের দুটি অর্থবছরের বাজেটের প্রক্ষেপণ থাকবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটও একই প্রক্রিয়ায় প্রণীত হয়েছে। ফলে নতুন বাজেট সামনে রেখে মূলত আগের কাঠামো সংশোধন ও হালনাগাদ করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়গুলো রাজস্বপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রাথমিক সম্ভাব্য ব্যয়সীমা পাঠাবে। এটি বাজেট কাঠামোর প্রথম ভাগ। বাজেট ওয়ার্কিং গ্রুপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে এ বিষয়ে সুপারিশ পাঠাবে। বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা এবং সম্ভাব্য ব্যয়সীমা প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আগামী ১৪ জানুয়ারির মধ্যে যাবতীয় তথ্য পাঠাতে হবে। জানা গেছে, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে দায়িত্ব নিয়েই প্রণয়ন করে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১।
×