ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক চক্রের নিরাপদ ঘাঁটি

হেরোইন ফেনসিডিল ও ইয়াবার স্বর্গরাজ্য এখন গোদাগাড়ী

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

হেরোইন ফেনসিডিল ও ইয়াবার স্বর্গরাজ্য এখন গোদাগাড়ী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এখন হেরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ভারত থেকে এসব মাদক পাচার হয়ে এসে এখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। গোয়েন্দা সূত্রগুলোর তথ্যানুযায়ী হেরোইন আর ফেনসিডিলকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে এখানকার ইয়াবার বাজার। গোদাগাড়ীর মাদক কারবারিদের মাধ্যমেই ইয়াবা হেরোইন ও ফেনসিডিল ছড়াচ্ছে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে। সূত্র জানায়, গোদাগাড়ী উপজেলা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলি এবং কোদালকাটি ইউনিয়ন মিলে প্রায় হাজারখানেক মাদক কারবারি সক্রিয়। এর মধ্যে চার শতাধিক কারবারি ভারত থেকে সরাসরি ফেনসিডিল আমদানির সঙ্গে জড়িত। আরও চার শ’ খুচরা বিক্রেতা। বাকি দুই শ’ হেরোইনের। বড় মাপের এই দুই শ’ জন নিয়ন্ত্রণ করে হেরোইনকেন্দ্রিক কারবার। এরাই ভারত থেকে হেরোইন এনে রাজধানীসহ সারাদেশে পাঠিয়ে থাকে। আবার হেরোইন ও ফেনসিডিলের যে চালানগুলো কক্সবাজার কিংবা টেকনাফের দিকে যায় সেগুলোর বিনিময়ে আনা হয় মিয়ানমারের ইয়াবা। ইয়াবা প্রথমে গোদাগাড়ীতে এসে ছড়িয়ে পড়ছে রাজশাহী সদর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও নওগাঁসহ সমগ্র উত্তরবঙ্গে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় সীমান্ত দিয়ে অবাধে ঢুকছে মাদক। প্রতিরাতেই সীমান্তে চোরকারবারিদের আনাগোনা থাকে। ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন চর কানাপাড়ার নাম প্রকাশ করার শর্তে এক দম্পত্তি বলেন, তাদের এলাকায় সারারাতই চোরাচালানিদের আনাগোনা থাকে। এদিকে চোরাকারবারি দলের কয়েক সদস্য জানায়, ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার রানীনগর ও লালগোলা-পলাশীর গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে হেরোইন তৈরির কারখানা। সীমান্ত ঘেঁষা এসব এলাকায় চাষ হচ্ছে পপি গাছ। ভারতীয় হেরোইন ডনেরা এই গাছের আঠা দিয়ে বিশেষ কায়দায় হেরোইন তৈরি করে পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গোদাগাড়ীর হেরোইন লেনদেন হয় ভারতের লালগোলার হেরোইন সম্রাট সেলিম, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাবু ইঞ্জিনিয়ার, গোলাম মুস্তাফি, রেজাউল করিম, রবিউল শেখ, আজিজুল শেখ, আনোয়ার খানসহ শতাধিক হেরোইন কারখানা মালিকের। আন্তর্জাতিক এই পাচার চক্রটি গোদাগাড়ীতে হেরোইনের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তবে এসব চালানের খুব কমই আটক করতে পারছে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা। যারা আটক হচ্ছে তারা মূলত বহনকারী। গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘পুলিশের তালিকায় প্রায় দুই শ’র মতো বড় মাপের মাদক কারবারি রয়েছে। এদের কেউ কেউ আবার সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি। পুলিশ তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করে। সাম্প্রতিক সময়ে মাদকবিরোধী অভিযানও বাড়ানো হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, তারাও চেষ্টা করছেন গোদাগাড়ীকে মাদকমুক্ত করতে। তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিদের বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও দাবি এই কর্মকর্তার।
×