ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপা-চরফ্যাশন সীমান্তে ধান কাটা নিয়ে উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

গলাচিপা-চরফ্যাশন সীমান্তে ধান কাটা নিয়ে উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গত কয়েক বছরের মতো এবারও পটুয়াখালী ও ভোলার আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ চাঙ্গা দিয়ে উঠেছে। রোপা আমন ধান কাটা নিয়ে গলাচিপা উপজেলার চরকপালবেড়া ও চরবিশ্বাসে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। এলাকার চাষী ও কৃষকরা অন্তত এক হাজার একর জমির ধান লুট হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। এলাকার আতঙ্কিত কৃষকদের অভিযোগ, ভোলার লালমোহন ও চরফ্যাশনের জোতদার-লাঠিয়ালরা জমির ধান লুটের পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। তারা যে কোন সময় তাদের ওপর হামলা চালাতে এবং ধান লুট করে নিয়ে যেতে পারে। কৃষক ও চাষীদের এ আতঙ্কের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে গলাচিপা ও চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন এক দফা বৈঠক করেছে। তাতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও কৃষকদের আতঙ্ক দূর হয়নি। ভোলা ও পটুয়াখালীর এ আন্তঃজেলা বিরোধ একযুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে। গলাচিপা উপজেলা প্রশাসন চরকপালবেড়া ও উত্তর চরবিশ্বাসের বুড়াগৌরাঙ্গ নদের বুকে জেগে ওঠা চরভূমির খাসজমিতে স্থানীয় ভূমিহীনদের বন্দোবস্ত দিয়েছে। আবার চরফ্যাশনের উপজেলা প্রশাসনও একইভাবে একই জমি সেখানকার কৃষকদের বন্দোবস্ত দিয়েছে। ফলে গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে সীমানা বিরোধ। প্রতি বছর ধান কাটা মৌসুম এলেই এলাকায় টানটান উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। চরকপালবেড়া ও চরবিশ্বাসের কৃষকদের অভিযোগ, চরফ্যাশন ও লালমোহনের ভূমিদস্যুরা শত শত লাঠিয়াল ভাড়ায় এনে প্রতি বছর তাদের চাষ করা জমির ধান লুট করে নিয়ে যায়। বাধা দিতে গেলে তাদের বাড়িঘরেও হামলা চলে। পুড়িয়ে দেয় বাড়িঘর। এমনকি নারীদেরও ধরে নিয়ে যায়। গত ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভোলা জেলার চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলার ভূমিদস্যুদের নেতৃত্বে কয়েক হাজার সন্ত্রাসী লাঠিয়াল আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে নারকীয় তা-ব চালায়। লাঠিয়ালরা শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। লুটপাট করে কয়েক কোটি টাকার মালামাল। এ অবস্থায় এবারও কৃষকরা একই ধরনের আতঙ্কে ভুগছে। স্থানীয় কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দিনভর গলাচিপা ও চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে উভয় এলাকার কৃষকদের নিয়ে সমস্যা সমাধানে ফ্লাগ মিটিং করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গলাচিপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সামসুজ্জামান লিকন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী সায়েমুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা শিশির কুমার পাল। অপরদিকে উপস্থিত ছিলেন চরফ্যাশন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন আকন্দ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোকলেছুর রহমান ও ওসি আবুল বাশার। ওই ফ্লাগ মিটিংয়ে যারা জমি চাষ করেছে তাদের ধান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অবিলম্বে দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে সীমানা চিহ্নিতসহ বিরোধ নিরসনের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত চরফ্যাশনের ভূমিদস্যু ও জোতদারদের মনঃপুত হয়নি। ফলে যে কোন সময় চরকপালবেড়া ও চরবিশ্বাসের কৃষকরা ধান লুট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। তাই তারা পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছে।
×