ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরা ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা এখনও চলছে

প্রকাশিত: ০২:৪০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

উত্তরা ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা এখনও চলছে

বাংলাদেশের বর্তমান ইতিহাসে ষড়যন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা, জাতির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার প্রধান নায়ক হলেন খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান নিহত হলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং আবদুল মান্নান ভূঁইয়ারই স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী বিএনপি দলটির সভাপতি ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব লাভ করার কথা। সে সময় ’৮১ সালে তাঁদের দু’জনের গ্রহণযোগ্যতা দলের নেতাকর্মীদের কাছে অনেক বেশি ছিল এবং গৃহকোণ থেকে অল্পশিক্ষিত জিয়াস্ত্রীর দলটির নেত্রী-সভাপতি হওয়ার বিষয়টি ছিল অচিন্তনীয়! কেন, কোন শক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে পাকিস্তানী জেনারেল ও সেনা কর্মকর্তা অধ্যুষিত, বাঙালী সেনাশূন্য ঢাকা সেনানিবাসে বাস করা একমাত্র বাঙালী মেজর জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে এ দলের নেতৃত্বে বসিয়ে দিয়েছিল- তা আজ ইতিহাস গবেষকদের খুঁজে বের করার বিষয় বৈকি! এর বড় কারণ, এই মহিলা সব সময় হয় সেনাদের দ্বারা, নতুবা আমলাদের দ্বারা, নতুবা যুদ্ধাপরাধীদের সাহায্যে, জঙ্গী মৌলবাদীদের জঙ্গী তৎপরতা, খুন-হত্যাকা- দ্বারা বার বার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং জাতির শান্তি ও অগ্রগতিবিরোধী কর্মকা- পরিচালনা করেছে! এই কাজের জন্য তাঁর প্রধান লক্ষ্য সব সময় ছিল এবং আছে- কেবলই ক্ষমতা দখল, জাতির উন্নয়ন নয়। সে জন্য বার বার সুষ্ঠু ভোট প্রদান, সুষ্ঠু নির্বাচনকে পেশীশক্তি ও কালো টাকা দিয়ে ভ-ুল করে নির্বাচনের ফল দখল ছিল তাঁর ক্ষমতাকালীন সময়ের প্রধান কাজ! পাঠক জানেন ২০০১ সালের নির্বাচনকালে এবং পরে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে, নির্বাচনী ফল দখলের জন্য তিনি যা যা করেছিলেন, তা আজ সময়ের প্রয়োজনে আরেকবার স্মরণ করে নেয়া ভাল- ২০০১ সালে দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে লতিফুর রহমানকে লাভ করেন খালেদা, যিনি প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধপন্থী সচিবদের স্বরাষ্ট্র, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষা ইত্যাদি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনকারী মন্ত্রণালয় থেকে বদলি করে এ সব স্থানে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের নিয়োগ দেন! সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু সাঈদের সহযোগিতাও লাভ করেন। ২০০১ সালে সেনাবাহিনীর একটি অংশকে তৃণমূলে নির্বাচনকালে নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও পরে সেই ’৭১-এর পাকবাহিনীর অনুসরণে তাদের দিয়ে আক্রমণ করায় সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর। এরা সেসময় নির্দেশ মেনেছে খালেদা ও আইএসআইএর। আরও দুঃখের বিষয়, নির্বাচনের ২/৩ দিন আগে অশুভ আশঙ্কায় যখন মন ভারাক্রান্ত, তখন অনেকে সান্ত¡না দিয়ে বলেছিলেন, সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ মুক্তিযোদ্ধা, ওদের পরিবার আওয়ামীপন্থী, ওরা নিরপেক্ষ থাকবে এবং ওরা নিরপেক্ষ থাকলে পাঁচ বছরের এত সফলতার পর আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। এর পরের ঘটনা, আওয়ামী লীগের পরাজয় ছাড়াও সূচিত হলো সংখ্যালঘু, আওয়ামী লীগ, প্রগতিশীল খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, গ্রাম-বসতবাড়ি ত্যাগে বাধ্য হওয়ার মতো পাশবিক নির্যাতন, যা হুবহু ’৭১-এর পুনরাবৃত্তি! এরই মধ্যে, ইন্টারনেটে কোন সূত্র ছাড়াই একটি তথ্য বার বার ভেসে আসছিল- বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ৪০০ কোটি রুপী (পাক সরকার) দেয়া হয়েছে শুধু আওয়ামী ভোটারদের ভোটকেন্দ্র, গ্রাম, বসতি ছাড়া করতে। জাতিকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিতে জানাচ্ছি, ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত ধর্ষণ, হত্যা, বসতি, ভূমি দখলের ফলে কয়েক লাখ হিন্দু এ সময় আরেকবার দেশত্যাগ করে! হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্র্মী প্রাণ বাঁচাতে বিদেশে পাড়ি জমায়, এমনকি অনেক তরুণ বিদেশেও খুন হয়! তারেক-বাবরদের মুক্তিযোদ্ধাবিরোধী তৎপরতার প্রথম আঘাত তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সব রকমের আইন ভঙ্গ করে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়ন! এরপর তো বাংলাদেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করতে জন্মদান করা হয় জেএমবির বাংলা ভাই, আব্দুর রহমান গংয়ের, মন্ত্রিত্ব প্রদান করা হয় জামায়াতের দুই যুদ্ধাপরাধীকে! বন্ধ করা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা, সুযোগ সুবিধা। হাওয়া ভবনে হত্যা পরিকল্পনা হলো শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে! সংঘটিত হলো ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। পরের বছর হলো খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ শাহ্ কিবরিয়া ও হবিগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকা-! এ ছাড়াও আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ প্রায় বিশ হাজার নেতকর্মী খুন হয়েছে খালেদা-তারেক-জামায়াতের শাসনকালের পাঁচ বছরে! এমনকি আক্রমণ হয়েছে শাহজালালের দরগা, বায়েজিদ বোস্তামীর প্রাচীন কচ্ছপগুলো! জিয়া পরিবার দ্রুত অনেক শিল্পকারখানা, লঞ্চ কোম্পানি, গার্মেন্টসের মালিক হয়ে যায়! এগুলোর অর্থের উৎস দুদক কখন অনুসন্ধান করবে, জাতি সে অপেক্ষা করছে। ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের ফল দখলের লক্ষ্যে আমলাদের দ্বারা সংঘটিত হলো উত্তরা ষড়যন্ত্র, যার নেতৃত্বে ছিল সে সময়ের খালেদার জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান! এ ষড়যন্ত্রটি উদ্ঘাটন করে ছোট কোন প্রিন্ট মিডিয়া, পরে যেটি বড় প্রিন্ট মিডিয়ায় ফোকাস পায়। জানা গেছে, ২০০১ সালে নির্বাচনী অফিসের ভেতরে ভোট পরিবর্তন করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে জিতিয়েছিল তারেক, ৪ জন সচিব ও এক বিদেশী দূতাবাসের কম্পিউটার এ্যানালিস্ট! ২০০৬ সালের নির্বাচনের জন্যও তেমনই পরিকল্পনা হয়েছিল ওই উত্তরার সভায় এই আমলাদের দ্বারা। ২০০৬ সালে সবচাইতে নির্লজ্জ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন খালেদা জিয়া এবং তাঁর নির্দেশে তদানীন্তন বিএনপি দলীয় প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীন আহমদ স্বপদে থেকেও ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান’ পদে নিজেই নিজেকে নিয়োগ দেন! এরপর চলে উপদেষ্টা নিয়োগের এক নির্লজ্জ খেলা। একদিন একদল উপদেষ্টা যোগ দেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারে না বলে কিছুদিন পর পদত্যাগ করেন, আবার আরেক দলকে নিয়োগ দেয়া হয়, আবার তাঁরা পদত্যাগ করেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন প্রধান, সচিব, মেম্বার পদে বিএনপিপন্থী কয়েক ‘পুতুল’ নিয়োগ পায়, ওখানেও চলে বিএনপির পক্ষে ভোটার তালিকা তৈরির নানা খেলা। যখন দেশকে এক অদ্ভুত সঙ্কটে ফেলে খালেদা সেনাশাসন আনার পাঁয়তারা করছিল, তখন ড. ফখরুদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে সেনাপ্রধানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে রঙ্গমঞ্চ থেকে পিঠটান দিতে বাধ্য হয় খালেদার হুকুমের পুতুল ইয়াজউদ্দীন থেকে শুরু করে সব নট-নটী! তবে আশ্চর্য হলেও সত্য- এরা ক্ষমতায় এসে প্রথমেই গ্রেফতার করে পাঁচ বছর নির্যাতন খুন-হামলা-মামলার শিকার আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে! পরে গ্রেফতার করে খালেদা জিয়াকে! প্রথমজনকে রাখা হয় পুরনো, ভাঙ্গা আসবাবসহ এক নিকৃষ্ট বাড়িতে আর দ্বিতীয়জনকে সুসজ্জিত টিপটপ বাড়িতে। অবশেষে এই সেনাসমর্থিত সরকারই সুষ্ঠু ভোটার তালিকা ও জাতীয়তা কার্ড তৈরি করে জাতিকে একটি পুরোপুরি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয় ২০০৮ সালের শেষ দিকে। এই নিরপেক্ষ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। এ কারণেই এই সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করতে সক্ষম হয় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের আপীল সম্পন্ন করে রায়, খুনীদের মৃত্যুদ- কার্যকর করে জাতির এক বিশাল কলঙ্কমোচন করতে সক্ষম হয়। গুজব আছে, ২০০৬ সালে খালেদা সপরিবারে বিদেশে ২৫০ ট্রাঙ্ক, স্যুটকেসে ডলার ভর্তি করে নিয়ে গেছে, যা সৌদি আরবে, নাকি লন্ডনে, নাকি সুইস্ ব্যাংকে আছে- তাও এখনও দুদকের অনুসন্ধানের অপেক্ষায় আছে! কী ছিল ওই ট্রাঙ্কে, স্যুটকেসে, তা জানার অধিকার জনগণের আছে বৈকি। পাঠক দেখেছে, জাতিও দেখেছে, খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালজুড়ে সারাদেশে উগ্র-ধর্মীয়, যুদ্ধাপরাধী ও হেফাজতের মৌলবাদী অর্থলোলুপ মোল্লাদের কিনে নিয়ে তাদের দিয়ে তার নির্দেশে সরকার পতনের নামে কি ভয়ঙ্কর দেশবিধ্বংসী খুন-অগ্নিসংযোগ, তা-ব, বোমা হামলা চালিয়ে দেশের উন্নয়নের অগ্রগতির দ্বার রুদ্ধ করে দিতে একের পর এক সহিংস হরতাল-অবরোধের কর্মসূচী পরিচালনা করেছিল! তারপর চলল লোক দেখানো সংলাপের আয়োজন। দেশী, বিদেশী, জাতিসংঘ, দূতাবাসগুলো বিএনপির অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নানা ফর্মুলা এনে বারবার খালেদার অনুমতি প্রার্থী হয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছিল! শেষ পর্যায়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে সংঘটিত সংলাপ যখন প্রায় সফল হচ্ছিল, শোনা যায় লন্ডন থেকে তারেক নির্বাচনে অংশ না নেয়ার পক্ষে চূড়ান্ত মত দিলে খালেদা সেটিই গ্রহণ করে। অথচ জানা যায়, বিএনপির অন্য নেতাদের ছিল ভিন্ন মত। এরপর খালেদা তারেক জামায়াত-হেফাজতকে নিয়ে নির্বাচন বন্ধের চেষ্টায় যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ, নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে, তা নিশ্চয়ই সবার জানা। এ ঘটনাই কিন্তু প্রমাণ করে- খালেদা, তারেক, যুদ্ধাপরাধী, হেফাজতী খুনীরা গণতন্ত্র, মানুষের স্বাধীনতা, মানুষের অধিকার বিশ্বাস করে না। করলে তাদের এমন মানুষ হত্যা, বৃক্ষ, রেল, বাস, ট্রাক, রাজপথ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করার পন্থা অবলম্বন করার কথা নয়। বর্তমানে খালেদা আবারও কোমর বেঁধে নেমেছে বলে দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে এবং জাতিকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, খালেদা ও তারেক সব সময় বাঙালী জাতির স্বার্থবিরোধী আইএসআই নির্দেষিত, যুদ্ধাপরাধীদের স্বার্থ রক্ষার, ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়ন করে ! সুতরাং সাবধান হতে হবে সবাইকে। এ সঙ্গে মেলাতে হবে কিছু দেশী-বিদেশী তৎপরতার ঘটনাও। কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিশা দেশাই সংসদের বিরোধী নেত্রীকে প্রটোকল ভঙ্গ করে প্রশ্ন করেছেÑ ‘কখন নির্বাচন হবে?’ আমাদের শিক্ষিত, ভদ্র, বিরোধী নেত্রী এর যথার্থ উত্তর দিয়েছেন- ‘সময়মতো হবে।’ তাঁর সঙ্গে যত সময় ব্যয় করেছে নিশা দেশাই, সংসদে বর্তমানে প্রতিনিধিত্বহীন, সেই বিএনপি নেত্রী খালেদার সঙ্গে ব্যয় করেছে অনেক বেশি সময়! বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিকে রুদ্ধ করায় সক্ষম খালেদাকে সক্রিয় করার নানামুখী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। এদিকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন তারেকের বিরুদ্ধে যে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই সাক্ষ্য দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২০০৪-০৬ সালের রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির বিরূপ মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, সে সবকে এই বিদেশীরা সম্ভবত এরা ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে! এরই প্রকাশ- খালেদার এ বয়সে হঠাৎ জনসভা করা, সুশীল সমাজের একাংশের সঙ্গে সভায় বসা, বিএনপিপন্থী আমলাদের নিয়ে উত্তরা ষড়যন্ত্রের আদলে মধ্যরাতে মিটিং করা ইত্যাদি। জনগণকে আরও খেয়াল রাখতে হবে- এবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনার স্থলে যে ব্ল্যাক মহিলা রাষ্ট্রদূত হয়ে আসছেন, তিনি বিউটিনিসের মতোই ভূমিকা পালন করতে আসছেন, মরিয়ার্টির মতো নয়! মনে রাখতে হবে- প্রেসিডেন্ট ওবামা যা চান, তা সিআইএ, পেন্টাগন সব সময় চায় না। তাদের স্বার্থ একেবারে ভিন্ন তাদের প্রয়োজন জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা অভিবাসীদের দুর্দশা লাঘব নয়, বরং যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির বিপুল অর্থ আয়ের উৎস খোঁজা এদের প্রধান লক্ষ্য। পুঁজিবাদের এই আগ্রাসী লোভের কাছে প্রকৃতপক্ষে শান্তি ও গণতন্ত্র তুচ্ছ! সেজন্য, যুদ্ধ বাধানো, সেজন্য মৌলবাদী জঙ্গী অস্ত্র ব্যবহারকারী যোদ্ধা ও যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহারের জন্য যুদ্ধই তাদের প্রয়োজন। সাপের মতো এই জাতির শত্রুদের উত্থিত ফণাকে নত করতে সরকারের উচিত দ্রুত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র খালাস মামলা, শাহএএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দ- কার্যকর করা। এছাড়া সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশী কালো টাকার এ্যাকাউন্টধারীদের নাম প্রকাশ ও আইনানুযায়ী দ্রুত বিচার করাও উচিত হবে। মনে হয়, বিদেশী দূতদের এ দেশে রাজনীতিকদের সঙ্গে সাক্ষাত করা, প্রশ্ন করা, কথা বলার বিষয়ে একটি প্রটোকল বা সীমারেখা টেনে পত্র প্রেরণ করা উচিত। সংসদে প্রতিনিধিত্বহীন রাজনীতিকদের সঙ্গে বিদেশী রাষ্ট্রের সরকারী প্রতিনিধিরা সাক্ষাত করতে পারে কি? যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমাদের কোন সরকারী প্রতিমন্ত্রী কি সাংসদ নন, সংসদে প্রতিনিধি নেই এমন কোন রাজনৈতিক নেতা, নেত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা-সাক্ষাত করতে সক্ষম? আমাদের প্রতিমন্ত্রী কি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দলের নেতাকে প্রশ্ন করতে পারবে- নির্বাচন কবে হবে? এতবড় সাহস- এটা তো বাংলাদেশের মানুষও গ্রহণ করবে না; যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, সরকার তো ক্রদ্ধই হবে। নিশা দেশাইয়ের ওপর আবার আমাদের এক পত্রিকা দেখি বিশাল মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছে। তাঁকে বলি- ঘটনাটিকে উল্টো করে দেখুন, বুঝবেন ও কতটা প্রটোকলের সীমা লঙ্ঘন করেছে! আমাদের দেশে অনেক কিছু আছে, তবে আত্মসম্মান বোধ, আত্মমর্যাদাবোধের এখনও কমতি আছে, তা বোঝা যাচ্ছে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×