ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতের বিচারে আইন সংশোধন আগামী সংসদ অধিবেশনে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

জামায়াতের বিচারে আইন সংশোধন আগামী সংসদ অধিবেশনে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনের সংশোধনের প্রস্তাব আগামী এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সভায় উঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। আগামী সংসদ অধিবেশনে এ আইন পাস হতে পারে বলেও জানান তিনি। রবিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর এ সংশোধনীর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের দল বলে অভিযুক্ত জামায়াত ও তার সকল অঙ্গ-সংগঠন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর সহযোগী বাহিনীগুলোর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব হবে। এর আগে আইনমন্ত্রী ৩ নবেম্বরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনটির সংশোধনীর অনুমোদন নিয়ে সংসদের সদ্যসমাপ্ত চতুর্থ অধিবেশনে পাস করার কথা জানিয়েছিলেন। রবিবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু সফর থাকার কারণে মন্ত্রিসভার কয়েকটি বৈঠক হয়নি। এ কারণে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ঝুলে গিয়েছিল। ফলে ওই আইনটি সংশোধন করে গত সংসদ অধিবেশনে পাস করা সম্ভব হয়নি। একাত্তরে জামায়াতের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষে অনেক আগেই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছেন তদন্ত সংস্থা। এর ভিত্তিতে প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করার পর জামায়াতের বিচার শুরু হবে। তবে ব্যক্তির পাশাপাশি দলের বিচারের বিধিসম্বলিত ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী পাসের অপেক্ষায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করতে পারেননি প্রসিকিউশন। এ আইন চূড়ান্ত হলে তারা এটি তৈরি করে দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউটররা। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে আনিসুল হক জানান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার পর বিচারপতি অপসারণ আইনটি পাস করা হবে। এ বিষয়ে কাজ চলছে। এর আগে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) উদ্যোগে আয়োজিত আরবিট্রেশন বিষয়ে প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই আরবিট্রেশন ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ পেশাজীবী তৈরি করতে পারলে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলোর জট এড়াতে আরবিট্রেশন অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশের আদালতগুলোতে প্রায় ২৪ লাখ মামলা নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। আর এত বেশি পরিমাণ মামলা জট ও জটিল বিচার পদ্ধতির কারণে বিদেশী কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগ করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এছাড়া বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাও এ দেশের বিচার পদ্ধতিকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে মনে করে থাকেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিয়াক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন বিয়াকের সিই ড. তৌফিক আলী, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট রোকেয়া আফজাল রহমান প্রমুখ।
×