ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন ১৯ মার্চ

এতিমের টাকা আত্মসাত ॥ আসামি পক্ষের তুমুল হট্টগোল, অশ্লীল বাক্যবাণ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

এতিমের টাকা আত্মসাত ॥ আসামি পক্ষের তুমুল হট্টগোল, অশ্লীল বাক্যবাণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য মুলতবির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে এই দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলো সোমবার। সাক্ষ্য চলাকালে বিচারক বাসুদেব রায় এবং এই দুই মামলার সাক্ষী দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক হারুন অর রশীদকে ‘ভারতের দালাল’ এবং ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে আঙ্গুল তুলে দেখালেন আসামি পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আইনজীবী। আসামি পক্ষে আদালতে ৫০ জনের বেশি আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের মাঠে তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়ের আদালতে সোমবার দুপুরে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। অশ্লীল মন্তব্যকালে মৃদুভাষী বিচারক বাসুদেব রায় আসামি পক্ষকে বার বার সতর্ক করার চেষ্টা করলেও তুমুল হট্টগোলে বিচারকের সতর্কবার্তা হারিয়ে যায়। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর মোশররফ হোসেন কাজল জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক সিনিয়র আইনজীবীর সামনে নিয়মিত কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি এভাবে আদালত অবমাননা করে যায়, আইনের প্রতি বিচার ব্যবস্থার প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মানবোধ থাকলে কখনও আদালতের প্রতি এমন অশালীন ভাষা কেউ উচ্চারণ করতে পারে না। মোশররফ হোসেন কাজল বলেন, উচ্চতর আদালত থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এই প্রসঙ্গটি টেনে আসামি পক্ষ মামলা মুলতবির অযৌক্তিক দাবি করে প্রতি কার্যদিবসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একের পর এক দরখাস্ত দিতে থাকেন, আর অশ্লীল গালাগাল করতে থাকেন। মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আসামি পক্ষের কিছু আইনজীবীর এ ধরনের বেআইনী কর্মকা-ের উদ্দেশ্য বিচারপ্রক্রিয়া বিঘিœত করা। নিয়মিত এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা আমাদের জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক।’ তিনি বলেন, আরও দুর্ভাগ্যজনক মনে হয়, যখন এ ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটার পরও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোন দায়িত্বশীলতা দেখতে পাই না। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রবিবার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় বিচারিক আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন থাকায় খালেদার আইনজীবী এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সময়ের আবেদন জানান। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের এদিন ধার্য করেন। চলতি বছরের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। মামলার এজাহারে প্রকাশ, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আর একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজি সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
×