ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে অর্ধেক দামে মিলছে

চোরাপথে আসা মোটরসাইকেলে বাজার সয়লাব

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

চোরাপথে আসা মোটরসাইকেলে বাজার সয়লাব

ডি এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ চোরাপথে আসা ভারতীয় মোটরসাইকেলে ঠাঁসা চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ এ জেলা সংলগ্ন রাজশাহীর গোদাগাড়ী অঞ্চল। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে মোটরসাইকেল ও ভেসপা ঢুকছে। একাধিক সিন্ডিকেট নতুন মোটরসাইকেল খুলে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্যাকেট করে নিয়ে আসছে। এরা সাধারণত একটি মোটরসাইকেল খুলে ২টি প্যাকেটে করছে। একটি প্যাকেটে থাকছে ২টি চাকা ও ১টি চেসিস। অপর প্যাকেটে পুরছে ট্যাঙ্ক, সাইড কভার ও ইঞ্জিনের অংশ। নতুন মোটরসাইকেলের মধ্যে রয়েছে ডিসকভার, বাজাজ পর্টনা, সিটি বাজাজ, হিরো ইসপ্লিানডার ও পালসার। জেলার রাণীহাটি অঞ্চলে প্যাকেটে আনা মোটরসাইকেল পার্টস বা অংশ এ্যাসেমবুলের মাধ্যমে নতুন ভারতীয় যান হিসেবে বাজারজাত করছে। আর এ কাজে অভিজ্ঞ এক শ্রেণীর মেকার ও মেকানিকম্যান। চোরাইপথে আসা মোটরসাইকেল মিলে অর্ধেক দামে। বিভিন্ন খোলা অংশ আলাদাভাবে কিনলে আরও কম দাম পড়ে। রিং পিস্টনের বাজারদর ৫ হাজার ৩০০ টাকা, চোরাই-২,৯০০ টাকা, সাইলেন্সর চোরাই ৬৯০০ টাকা বাজারদর ৮২৮০ টাকা, সামনের সকার চোরাই ৩,৬০০ টাকা, বাজারে ১০,১০০ টাকা, পেছনের সকার অনুরূপভাবে দাম পড়ে ২৬৫০ ও ৬১০০ টাকা, সাইড কভার চোরাই ১,৪০০ বাজারে ২,৩০০ টাকা, হর্ণ চোরাই মাত্র ৩০০ টাকা, বাজারে এক হাজার টাকা, বসার আসন চোরাই ২,৮০০ টাকা, বাজারদর ৫২০০ টাকা, হেডলাইট চোরাই ২৯০০ টাকা, বাজারে ৩৫০০ টাকা, মিটার চোরাই ১৯০০ টাকা, বাজারে ৫২০০ টাকা, ট্যাংকি চোরাই ৭,৭০০ টাকা, বাজারে ১৪,০০০ টাকা ও হ্যান্ডেল চোরাই ৯০০ টাকা, বাজারে ১২৫০ টাকা। একইভাবে কার্বুরেটর চোরাই ৭ হাজার ৩০০, বাজারে বা দোকানে ৯ হাজার ১০০ টাকা, পাশাপাশি পালসার গাড়ি এখানে পাওয়া যাচ্ছে (১৫০ সিসি) ১ লাখ ৫০ হাজারে, বাজার দর বা শো-রুমে দুই লাখের ওপর। হিরো হুন্ডা চোরাই পথে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়, বাজারে নতুন দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পাশাপাশি জঙ্গলপোর্ট হয়ে (দারস বাড়ি মসজিদের পাশ দিয়ে) এসব চোরাই মোটরসাইকেল প্রতিদিন ঢুকছে। সোনামসজিদ সংলগ্ন বালিয়াদীঘি মোড় থেকে পশ্চিম হয়ে উত্তর দিক দিয়ে ভারতে উঠবে। এই পথে ভারতের মহদিপুর বাজার যা সরশানি নামে পরিচিত। এই পথেও চোরাই মোটরসাইকেল যাওয়া আসা করে। একই সঙ্গে আসছে পুরো মোটরসাইকেল। সিন্ডিকেটকর্মীরা ফিটিং করা মোটরসাইকেল সীমান্তের কাছাকাছি সড়কের ধারের গর্তে ফেলে রাখে, পাশাপাশি ভারতের মধ্যে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ট্রাক ও ট্রেনযোগে যেসব মোটরসাইকেলের চালান পাঠান হয় তা পথে লুট করে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯টি সীমান্ত পথে বা পয়েন্ট দিয়ে ৫০ থেকে ১ শতটি নতুন গাড়ি আসছে। এই সাব সীমান্ত পথগুলো হচ্ছে সাহাপাড়া, তারাপুর, ঠুটাপাড়া, মনোহরপুর, চরপাকা, তেলকুপি, শিয়ালমারী, আজমতপুর ও শাহজাবপুর। বিআরটিএর একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মী এসব চোরাই পথে আসা মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ও নতুন লাইসেন্স পাবারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আবার একে ঘিরে জালিয়াত চক্রও যোগাচ্ছে জাল কাগজপত্র। কর্তৃপক্ষের শিথিল মনোভাব ও সক্রিয় সহযোগিতার কারণে চোরাপথে আসা মোটরসাইকেল ও ভেসপা আটক করা সম্ভব হচ্ছে না। অবৈধ পথে আসা মোটরসাইকেল কাগজ পত্রের ও রেজিস্ট্রেশনের বৈধতা নিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের নানান স্থানে।
×