ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থ বরাদ্দ বাড়ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচীতে

প্রকাশিত: ০২:৩৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৪

অর্থ বরাদ্দ বাড়ছে স্কুল ফিডিং কর্মসূচীতে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সম্প্রসারিত হচ্ছে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুলফিডিং কমসূচী। সাত বিভাগের নির্বাচিত ৯৩টি উপজেলা নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৭২টি উপজেলায় এবং ডব্লিউএফপি অনুদানে ২১টি উপজেলায় এ কর্মসূচী পরিচালিত হবে। দ্বিতীয় বারের মতো এ কর্মসূচীটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে তিন হাজার ১৪৫ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে দুই হাজার ১৪৫ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার এবং ডব্লিউএফপির অনুদান থেকে ৯৯৯ কোটি ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আড়াই বছর বাড়ছে সময়ও। ফলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত বিদ্যালয় এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালয় দিবসে পুষ্টিকর বিস্কুট খেতে পারবে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য হুমায়ুন খালিদ বলেছেন, জাতিসংঘের অনুদান সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে ৯৩টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপুষ্টির হার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে এবং শিশুরা বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হতে উৎসাহিত হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা ও পুষ্টিহীনতা হ্রাসের জন্য দারিদ্রপীড়িত এলাকায় স্কুলফিডিং কর্মসূচী শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। দেশের ছয়টি বিভাগের নির্বাচিত ৮৬টি উপজেলার প্রায় ২৩ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে প্রতিদিন বিদ্যালয় দিবসে পুষ্টি বিস্কুট সরবরাহের লক্ষ্যে মূল প্রকল্পটি ২০১০ সালের ১৯ অক্টোবর অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সেই সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ১৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ ৫৬ হাজার এবং ডব্লিউএফপির অনুদান থেকে ৫৪৫ কোটি নয় লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। এটি ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে গত বছরের ২২ জানুয়ারি একনেকে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এর মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচিত ৭২টি উপজেলার ২৬ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ওই সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৫৭৭ কোটি ৯৩ লাখ ১১ হাজার টাকায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দ্বিতীয় গোল অর্জনে অবদান রাখা, খাদ্য নিরাপত্তাহীন এলাকার প্রাথমিক বিদ্যলয়সমূহের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানো, পুষ্টির মান বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শিক্ষা গ্রহণের সক্ষমতা বাড়ানা এবং স্কুলফিডিং কর্মসূচী সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ। সূত্র জানায়, বর্তমানে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটির বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদানে দেশের সাতটি বিভাগে নির্বাচিত দশটি উপজেলায় প্রায় তিন লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে পুষ্টিকর বিস্কুট সরবরাহের জন্য ইসি এ্যাসিস্টেড স্কুলফিডিং প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তায়নে ব্যয় হচ্ছে ২০৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এটির মেয়াদ রয়েছে। বর্তমানে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পভুক্ত উপজেলাগুলোকে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুলফিডিং কর্মসূচীর আওতায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির বর্ধিত অংশসহ পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে এক হাজার ২১৫ কোটি ৬১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৫৮ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৯২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটির ওপর গত ২৫ সেপ্টম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে বর্তমানে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মঙ্গলবার দ্বিতীয় সংশোধনীর এ প্রস্তাব অনুমোন দেয়া হয়েছে।
×