সমুদ্র হক ॥ ভাঙ্গনকবলিত যমুনা তীর ও চরগ্রামের নারী এখন সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। স্বামী পরিত্যক্ত নারীও শক্ত কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছে উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে তাদের অবদানও কম নয়। এসব নারী অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও মোটর গাড়ি মেরামতের কাজ শিখেছে। প্রশিক্ষণ নিয়েছে নিজেদের এলাকা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে নারীর প্রকৌশল কাজের যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নানের উদ্যোগে তা পুনরায় চালু করা হয়। ওই কেন্দ্র থেকে গত প্রায় ছয় মাসে প্রথম ব্যাচে ২০ জন প্রশিক্ষিত নারী বের হয়ে মাঠে নেমেছে। তিন মাস মেয়াদী এই কোর্সের দ্বিতীয় ব্যাচে আরও ২০ নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে মোটরযান চালিয়ে প্রাকটিক্যাল ক্লাস করছে। নারীদের থ্রি হুইলার চালনা দেখে যারা সন্দেহ করছিল চালাতে পারবে কিনা তারাই এখন পুরুষ চালকের চেয়ে বেশি আস্থা পাচ্ছে নারী চালকে। কজন যাত্রী বললেন নারী চালক খুব সাবধানে গাড়ি চালায়। যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি এলাকা থেকেই এভাবে প্রকৌশল ধারায় নারীর এগিয়ে চলার পথ শুরু হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নাম মা ফাতেমা (রা) মহিলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কমপ্লেক্স। সরাসরি পরিচালিত হয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মাধ্যমে। প্রশিক্ষণে সহযোগিতা দিচ্ছে বেসরকারী সংস্থা ইউসেপ। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় বন্যা ও ভাঙ্গনকবলিত সারিয়াকান্দি পরিদর্শনকালে বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান এলাকার নারীদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। এরপর সেখানে নির্মিত হয় ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে নারীর পথ চলা রুদ্ধ করতে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রটিকে আরও আধুনিক করে কমপ্লেক্স বানিয়ে নারীকে কর্মক্ষম করে তুলতে বিভিন্ন ট্রেডের সঙ্গে সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার মোটর ড্রাইভিং এবং মোটরসাইকেল সার্ভিস মেকানিক্স ট্রেড কোর্স চালু করে। আবাসিক ব্যবস্থাও করা হয়। হাতে-কলমে শিক্ষা দিতে যাতে গাফিলতি না হয় সে জন্য এই ব্যবস্থা। উচ্চমানের প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। একই সঙ্গে অটোমোবাইলের (মোটর গাড়ির মেরামতের কারখানা) উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়। সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ নজরদারিতে সারিয়াকান্দি সোনাতলাসহ নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকার নারী টানা এক শ’ দিন প্রশিক্ষণ নেয়। সোনাতলার জোরগোছার জাহিদা সুলতানা, সারিয়াকান্দির সীমা আক্তার, শিবগঞ্জের সুফিয়া সুলতানা বলেন, তারা এখন শুধু থ্রি হুইলার (টেম্পো স্কুটার অটোরিকশা) নয় মোটর গাড়ি চালাতে পারে যে কোন সড়ক ও মহাসড়কে। একই সঙ্গে যান্ত্রিক যে কোন ত্রুটির কারণে মোটরসাইকেল চলতে না পারলে তা সারিয়ে দেন তারা। এলাকার মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, পুরুষ মেকানিকের চেয়ে এই নারী মেকানিক যতœসহ মেরামত করে এবং সময়ও কম নেয়। সূত্র জানায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দির এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নারীরা এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছে যে, ইতোমধ্যে দেশের বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষিত নারীকে চাকরির অফার দিয়েছে। কয়েকজন নারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে মোটর গ্যারেজ প্রতিষ্ঠা করবে। এদের ব্যাংক ঋণ পেতে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে জন্য সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। প্রশিক্ষিত নারী এখন অন্য নারীকে ট্রেনিং দিয়ে দক্ষ করে তুলছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: