ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিআইএর নির্যাতন সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রকাশের পর জাতিসংঘ ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর আহ্বান

সিআইএ’র নির্যাতন ॥ দোষীদের শাস্তি চাই

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

সিআইএ’র নির্যাতন ॥ দোষীদের শাস্তি চাই

জাতিসংঘ ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সিআইএর আল কায়েদা সদস্যদের ‘নৃশংস’ কায়দায় জিজ্ঞাসাবাদ করার দায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিচারে দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে সিনেটের এক রিপোর্টে বলা হয়, ঐ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্বের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালানোর মাত্রা ধামাচাপা দিতে কংগ্রেস, হোয়াইট ও ব্রিটেনের কাছে মিথ্যা কথা বলেছিল। মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর বছরের পর বছর ধরে সিআইএর সন্দেহভাজন আল কায়েদা সদস্যদের অমানুষিক কায়দায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির ডেমেক্র্যাটদের সঙ্কলিত রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, সিআইএ কি করছিল তা নিয়ে সংস্থাটি আমেরিকানদের বিভ্রান্ত করেছিল। সিআইএ এক বিবৃতিতে ঐরূপ জিজ্ঞাসাবাদ জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছিল বলে দাবি করে। খবর বিবিসি ও টেলিগ্রাফ অনলাইনের। মানবাধিকার ও সন্ত্রাস দমন বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত বেন ইমারসন বলেন যে, অপরাধগুলোর পরিকল্পনা ও অনুমোদন করেছিল জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের এমন সব উর্ধতন কর্মকর্তা এবং ওয়াটারবোর্ডিয়ের মতো নির্যাতন চালানোর জন্য দায়ী সিআইএ ও মার্কিন সরকারী কর্মকর্তাদের অবশ্যই বিচারে সোপর্দ করতে হবে। জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইমারসন বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের এক বিষয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে আইনত বাধ্য। তিনি বলেন, মার্কিন এ্যাটর্নি জেনারেলের আইনগত কর্তব্য হলো দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনয়ন করা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক্সিকিউটভ ডিরেক্টর কেনেথ রোথ বলেন, সিআইএর কার্যকলাপ ছিল অপরাধমূলক এবং সেগুলোকে কখনও সমর্থন করা যেতে পারে না। তিনি বলেন, যদি এ গুরুত্বপূর্ণ সত্য উদ্ঘাটন প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বিচার না করা হয় তাহলে ‘নির্যাতন’ ভবিষ্যত প্রেসিডেন্টদের জন্য এক বিকল্প নীতি হয়ে থাকবে। আমেরিকান সিভিল লিবার্র্টিজ ইউনিয়ন যুক্তি দেয় যে, নির্যাতনমূলক কার্যকলাপের পরিকল্পনা, অনুমোদন, বাস্তবায়ন ও ধামাচাপা দিয়েছিলেন বুশ প্রশাসনের এমন কর্মকর্তাদের বিষয়ে স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাতে এ্যাটর্নি জেনারেলের এক বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগ করা উচিত। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রিপোর্ট প্রকাশের ফলে পুরনো তর্কবিতর্ক আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠবে না বলে মঙ্গলবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি, রিপোর্ট ঐসব কৌশলকে অতীতের ঘটনায় পরিণত করতে আমাদের সহায়তা করবে। তিনি ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্মম কৌশল অবলম্বন নিষিদ্ধ করেন। সংবাদদাতারা বলছেন, বুশ প্রশাসনের সদস্যদের বিচারে সৌপর্দ করার সম্ভাবনা নেই, কারণ বিশেষত বিচার দফতর বলেছে যে, তারা ২০০০ সালের পর থেকে কয়েদিদের প্রতি নির্যাতনমূলক আচরণের বিষয়ে দু’বার তদন্ত অনুষ্ঠান করে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, কাউকে দোষী সাব্যস্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ব্রিটিশ দৃষ্টিকোণ থেকে ইস্যুটিকে দেখা হয়েছে। তিনি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বরের পর এমন সব কাজ করা হয়েছিল যেগুলো ছিল অন্যায়মূলক। সেগুলো যে অন্যায়মূলক ছিল, সেই সত্য সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। সিআইএর কৌশলগুলোর প্রতি যে যুক্তি দেখিয়েছে, তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণভাবেই যুক্তিসঙ্গত ছিল বলে নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান।
×