ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিযোগ ত্বকী মঞ্চের

ওসমান পরিবার প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

ওসমান পরিবার প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিষয় থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার কৌশল হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে ওসমান পরিবার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ। বুধবার বিকেলে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ও সংগঠনের সদস্য সচিব ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানানো হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ মার্চ ১৩ ত্বকী নিখোঁজ হয় এবং এর দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। ঐ রাতেই নারায়ণগঞ্জ থানায় কারও নাম উল্লেখ না করে ত্বকীর বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৩ মার্চ বিকেলে মোবাইল নং ০১৯৭৭৭৯৭৭৭৫ থেকে নাসিম ওসমান ও মোবাইল নং ০১৭৪০২২২২২২ থেকে আজমেরী ওসমানের ৫ মিনিট কথোপকথনের মধ্যদিয়ে ত্বকী হত্যায় তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রথম প্রকাশ পায় (যে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড একাধিক সংস্থার কাছে রয়েছে)। ১৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জন হত্যাকা-ে জড়িত বলে অবগতিপত্র দেয়া হয়। মামলায় উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় মামলার বাদী এ মামলাটি পুলিশের কাছ থেকে র‌্যাবে হস্তান্তরের জন্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করলে হাইকোর্ট বিভাগ ২৮ মে মামলাটি র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। মামলার কার্যভার গ্রহণ করে র‌্যাব দু’জন ঘাতকের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণ করেন এবং আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশন খ্যাত টর্চার সেলে অভিযান চালায়। অভিযানে সেখান থেকে হত্যার বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়। ৬ মার্চ ’১৪ ত্বকী হত্যার এক বছর পূর্তিতে র‌্যাবের সহকারী মহা পরিচালক গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ কর্মীদের ত্বকী হত্যার তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দেন। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের ত্বকী হত্যার খসড়া অভিযোগপত্র সরবরাহ করেন। খসড়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন এ হত্যাকা-ে অংশগ্রহণ করে। হত্যায় কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। আজমেরী ওসমানের টর্চার সেলে ৬ মার্চ ত্বকীকে গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটায় হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর আজমেরী ওসমানের গাড়িতে করে ত্বকীকে শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনীর পাশে ফেলে দেয়া হয়। হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বির ভূমিকা, পরিবহনে অযৌক্তিক ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে তার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে রফিউর রাব্বির ওপর প্রতিশোধ নিতে ঘাতকচক্র এ হত্যাকা- সংঘটিত করে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে অচিরেই এ অভিযোগপত্র আদালতে প্রদান করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি অভিযোগপত্র প্রদান করা হয়নি। গত ৫ ডিসেম্বর শুক্রবার ত্বকী মঞ্চের সমাবেশ নিয়ে তারা একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি করে মূল বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে ত্বকী হত্যার বিষয় থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার কৌশল গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অপকৌশল গ্রহণ করেছে। তারা বলছে, ‘ত্বকী মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দেয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়েছে’ ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ত্বকী মঞ্চ থেকে কি বলা হয়েছে তার ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে। ত্বকী মঞ্চ কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করা বা কাউকে ক্ষমতায় বসানো ত্বকী মঞ্চের উদ্দেশ্য বা কাজ নয়। ত্বকী মঞ্চ তাদের বলার স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে দেশের মঙ্গল ও কৃতিত্বের অধিকারী যেমনি প্রধানমন্ত্রী তেমনি রাষ্ট্রের অনিয়ম, অন্যায় ও ভুলের দায়ভারও প্রধানমন্ত্রীর কাঁধেই বর্তায়। দেশের যেকোন নাগরিক তার প্রতি রাষ্ট্রের অন্যায় আচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার বা জবাব চাওয়ার অধিকার রাখে। আর এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য। ত্বকী হত্যার দুই বছর হতে চলল অথচ এখনও কেন অভিযোগপত্র দেয়া হলো না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা জানতে চাওয়ার অধিকার দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই আছে। যাঁরা মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর নাম নেয়াই কবিরা গুনাহ, ত্বকী মঞ্চ তা সেভাবে মনে করে না। ত্বকী মঞ্চ ত্বকী হত্যা, সাত খুনসহ বিভিন্ন হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হবে না। চরিত্র হনন, ভয়ভীতি, হুমকি-ধমকি দিয়ে ত্বকী মঞ্চের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। মানুষের শক্তি ও ইতিহাসের শিক্ষা আমাদের রয়েছে।
×