ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের প্রত্যাশা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের পুরুষ ও মহিলা ফুটবলের সময়সীমার ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেই ইংরেজ আমল, পাকিস্তান আমল বর্তমানে বাংলাদেশ আমল ... চর্চার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে পুরুষ ফুটবলই। সে তুলনায় মহিলা ফুটবলের চর্চার ইতিহাস এক যুগও হয়নি। অথচ যদি বলা হয় সাম্প্রতিককালে কোন্ ফুটবলের উন্নতির ধাপ সবচেয়ে উঁচুতে, তাহলে সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা একবাক্যে বলে দেবেনÑ মহিলা ফুটবল? হ্যাঁ, ঠিক তাই। মাত্র কয়েক বছর আগেও এদেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে হাসাহাসি হতো বিস্তর অথচ আজ তাদের নিয়ে সুনীল স্বপ্ন দেখে এদেশের ফুটবলমোদীরা। ক’মাস আগে ঘরের মাঠে ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর বাছাইপর্বে দুরন্ত ফুটবলশৈলী উপহার দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বাংলার দামাল কিশোরীরা। এর ক’দিন বাদেই পাকিস্তানের ইসলামাবাদে তৃতীয় সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে সেমিফাইনালে খেলে বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দল। বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন সুকিতাতে নোরিও। জাতিতে জাপানী, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ইতিহাসের প্রথম বিদেশী কোচ। নিজের প্রথম এ্যাসাইনমেন্টে প্রায় সফলই হয়ে যাচ্ছিলেন। অল্পের জন্য পারেননি। কিন্তু তাই বলে তিনি ব্যর্থ হয়েছেনÑ এমনটাও কেউ বলেনি। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১০ ও ২০১৪ সালে সেমিফাইনাল খেলে, এ ছাড়া সাউথ এশিয়ান গেমসে ২০১০ সালে করায়ত্ত করে তাম্রপদক। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ১১৭ নম্বরে (১৭৭ দেশের মধ্যে), এশিয়ার মধ্যে ২৫ নম্বরে ও সাফ অঞ্চলে ৩ নম্বরে। এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলতে পারত, যদি নোরিও আরও বেশি সময় ধরে দলটাকে নিয়ে কাজ করতে পারতেনÑ এমনই মনে করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। এক্ষেত্রে দলীয় সাফল্যের নেপথ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের যে কোন বিকল্প নেই, সেটাই যেন নতুন করে প্রমাণ হলো আবার। কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হয়ে সারা বছর মাঠে ফুটবল রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করেছেন ঠিকই। কিন্তু মাঠ সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। এক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ওপর দিয়েই বয়ে যায় যত ঝড়। এখানে প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ, স্বাধীনতা কাপ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবলের ফাইনাল, অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। তাছাড়া খেলা ছাড়াও এখানে হয়ে থাকে কনসার্টও। ফলে মাঠের বারোটা বেজে যায়। এদিকে কমলাপুর স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে সিনিয়র ডিভিশন, চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ, পাইওনিয়ার লীগের খেলা। কিন্তু এদের ভিড়ে যেন সুযোগই হয় না মহিলা ফুটবলারদের। যদিও তাদের খেলাই হয় খুব সীমিত পরিসরে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতে গিয়ে তাদের সবচেয়ে বেশি পড়তে হয় মাঠ সঙ্কটে। প্রতিটি মাঠের যে বেহাল দশা, এর জন্য অনায়াসেই দায়ী করা যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি)। কারণ প্রতিটি মাঠই তাদের। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই মাঠ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সেটি তারা করছে না। আর বাফুফেও মাঠগুলোকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে না (যদিও বিলম্বে হলেও টার্ফ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে কমলাপুর স্টেডিয়ামে)। মেয়েদের ফুটবল বাংলাদেশে এমনিতেই কম হয়। তার ওপর মাঠ সমস্যার কারণে মহিলা ফুটবলের বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না। যদি মেয়েদের জন্য আলাদা একটি মাঠ পাওয়া যেত, তাহলে এ সমস্যার সমাধান বহুলাংশেই হতো। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল কতটা এগুতে পারে।
×