ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে ॥ মালয়েশিয়ায় পাচারের সিন্ডিকেট ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত

বন্ধ হচ্ছে না মানব পাচার

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

বন্ধ হচ্ছে না মানব পাচার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মালয়েশিয়ায় মানব পাচার তৎপরতা শুধু দেশে নয়, ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে মানবপাচারকারী গডফাদাররা। মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের খপ্পরে পড়ে ভারতের এক যুবক সেন্টমার্টিন হয়ে টেকনাফ পৌঁছেছে। মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটের গডফাদার টেকনাফ শাহপরীদ্বীপ এলাকার শরীফ হোছন প্রকাশ সরহোছনের নিয়োজিত কিছু লোক ভারতে অবস্থান করে সেখান থেকে ট্রলারযোগে থাইল্যান্ডে লোক পাঠাচ্ছে। মঙ্গলবার টেকনাফে ফিরে আসা ভারতের গান্দিরচর সাপড়া উত্তর প্রদেশ বিহারের মকবুল আহমদের পুত্র মোহাম্মদ আশরাফ হোসাইন (৩৫) হিন্দী ভাষায় জানান, দালালের হাতে নির্যাতনের এ লোমহর্ষক কাহিনী। ১২ দিন আগে (২৭ নবেম্বর) ভারতের উড়িষ্যা থেকে ৭৩ হাজার রুপির বিনিময়ে মালয়েশিয়ায় যাবার উদ্দেশে দালালের মাধ্যমে ফিশিং বোটে ওঠেন ৮৩ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম। ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দু-মুসলিম মিলে ৮৩ জনকে ফিশিং বোটের কোল্ড স্টোরেজে গাদাগাদি করে বসিয়ে সাগরে রওনা দেয় দালালের ট্রলারটি। সাগরে বোট চলার ২ দিন পর তাদের বাংলাদেশী আমির আলী নামের এক দালালের ফিশিং বোটে বদল করে দেয়া হয়। ঐ আমীর আলী দালাল ৪ দিন বোট চালানোর পর একটি উপকূলের কাছে এসে অসহায় ঐসব লোকদের বলে যে এইতো মালয়েশিয়ায় পৌঁছেছি। পরে প্রথমে ২০ জনকে নামিয়ে দেয়। এভাবে কয়েক দফায় নামানোর পর বোটে ছিল ২৩ জন। ২ দিন পর ওই ২৩ জন থেকে ৯ জনকে অন্য একটি উপকূলে গভীররাতে মালয়েশিয়ায় অন্য ঘাটে এসেছি বলে নামিয়ে দেয়া হয়। তিনি জানান, দেশে ফলের দোকান করতেন আশরাফ। পরিবারের অভাব দূর করতে এত বড় বিপদে পড়েছেন বলে কেঁদে ওঠেন তিনি। তার ভাষ্য মতেÑ শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত হয়েও মালয়েশিয়ায় মানবপাচার কাজ চলছে। ইতোপূর্বে অনেক বাংলাদেশীকে ভারতে নিয়ে মালয়েশিয়া বলে নামিয়ে দেয় মানবপাচারকারীরা। এভাবে বাংলাদেশের হাজারো যুবক এখনও ভারতের কারাগারে মানবপাচারের শিকার হয়ে বন্দী রয়েছে বলে ভারতীয় এ ব্যক্তি জানিয়েছেন। নুরুল কবির ও তার স্ত্রী রেবি প্রকাশ ম্যাডাম নামে দুই গডফাদারকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে পাঠালেও শাহপরীদ্বীপ মিস্ত্রি পাড়ার শরীফ হোছন এখনও অধরা রয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা থাকার পরও টেকনাফ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি এ পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, মানবপাচারকারী এ গডফাদার থানার কয়েক পুলিশকে মাসিক নিয়মিত মোটা অংকের টাকা প্রদান করে আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়ায় সমুদ্র পথে চাকরি ও মাসে ৫০Ñ৬০ হাজার টাকা রোজগারের প্রলোভন দিয়ে মালয়েশিয়ায় নিরীহ লোকদের পাচার করে যাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, মানবপাচারকারী গডফাদার শরীফ হোছনের দেশব্যাপী এমন কিছু লোক রয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিক, দিনমজুর শ্রেণীর নিরীহ মানুষদের কাজের কথা বলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফে নিয়ে এসে মানবপাচারকারী শরীফ হোছনের সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়। সোনারপাড়া চেপটখালির গডফাদার ফয়েজুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে ওইসব লোকদের পাচার করে দেয়া হয় মালয়েশিয়ায়। পাচার হওয়া ব্যক্তিরা থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার সীমান্তে পৌঁছলে তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে ফোন করে জনপ্রতি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়ে থাকে। তবে কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের জন্য কিছুটা ছাড় রয়েছে। তাদের জনপ্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। শীর্ষ মানবপাচারকারী শরীফ হোছনের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে চিহ্নিত বিভিন্ন ঘাট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের শতাধিক দালাল দেশব্যাপী বিস্তৃত রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
×