ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুলাল আচার্য

জন্মদিনে অন্তহীন শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

জন্মদিনে অন্তহীন শ্রদ্ধা

ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’র রচয়িতা ও বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৮০তম জš§বার্ষিকী আজ। ৮১তে পা রাখলেন তিনি। পঞ্চাশের দশকের শক্তিমান গল্পকার হিসেবেও তিনি খ্যাত। ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি বরিশাল জেলার উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে জš§গ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায়। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন। ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ করার মধ্য দিয়ে মূলত তাঁর সাংবাদিকতা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে ‘সওগাত’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হয়। ১৯৫০ সালে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর দৈনিক সংবাদ, মাসিক সওগাত, মাসিক নকীব, দৈনিক ইত্তেফাক, মওলানা আকরম খাঁর দৈনিক আজাদ, দৈনিক জেহাদ, দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় চাকরি করেন। এক সময় ‘অনুপম মুদ্রণ’ নামে একটি ছাপাখানাও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক জয়বাংলা’-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ সময় কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার, যুগান্তর পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলাম লেখেন। ১৯৭৪ সালে তিনি লন্ডনে চলে যান। প্রবাসে সাপ্তাহিক বাংলার ডাক, সাপ্তাহিক জাগরণে কাজ করেন। ১৯৮৭ সালে সাতজন অংশীদার নিয়ে ‘নতুন দিন’ প্রকাশ করেন। ১৯৯০ সালে নতুন দেশ এবং ১৯৯১ সালে পূর্বদেশ বের করেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এই কলমযোদ্ধার রয়েছে অগ্রণী ভূমিকা। প্রবাসে দিনাতিপাত করলেও দেশের রাজনীতির অন্দর-বাহির সম্পর্কে তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ সকল মহলের প্রশংসীত। তাঁর রাজনৈতিক লেখায় দূরদর্শী চিন্তাচেতনার বহির্প্রকাশ সচেতন রাজনীতিকদের সাবধান বার্তা হিসেবে কাজ করে। দীর্ঘদিনের দেখা অভিজ্ঞতা তাঁর লেখায় প্রতিফলিত হয় যাতে উপকৃত হয় সবাই। নিজের কর্মময় জীবন সম্পর্কে গাফ্ফার চৌধুরীর নিজের মূল্যায়ন এভাবেÑ ‘কলাম লেখক হিসেবে আমার বয়স এখন ষাট বছরের বেশি। দাবি করতে পারি, আমি শুধু একজন কলামিস্টই নই, আমি বাংলাদেশের গত অর্ধশতকের বেশি সময়ের ইতিহাসের একজন জীবিত সাক্ষী। আমি মহাযুদ্ধ দেখেছি। মহাদুর্ভিক্ষ দেখেছি। ভাষা আন্দোলন, দেখেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। ’ (ভূমিকা পর্ব, কলাম সমগ্র) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহধন্য ও কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার অসামান্যতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী হৃদয়গ্রাহী, তথ্যনির্ভর করে, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার মতো ভাষাশৈলী দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি লিখেছেন ‘ইতিহাসের রক্তপলাশ ১৫ আগস্ট’, ‘মুজিব হত্যার নেপথ্যে’র মতো হৃদয়গ্রাহী অসংখ্য লেখাও। এখনও তিনি বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কলামিস্ট। তাঁর নাম অমর সৃষ্টিÑ চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান, নাম না জানা ভোর, তিমির সঙ্গিনী, নীল যমুনা, সর্বনাশের আশায়- এর মতো অসাধারণ উপন্যাস। লিখেছেন আমরা বাংলাদেশী না বাঙালি, পলাশী থেকে ধানম-ি, নিরুদ্দিষ্ট নয় মাস, ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা, বাঙালির অসমাপ্ত যুদ্ধ ইত্যাদি গ্রন্থ। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। আজ তাঁর শুভ জš§দিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
×