ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবস এবং কিছু কথা

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

বিজয় দিবস এবং কিছু কথা

দুদিন পাই ১৬ ডিসেম্বও । আমাদের মহান বিজয় দিবস। আনন্দ বেদনায় মিশ্রিত এ বিজয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ৩০ লাখ লোকের তাজা প্রাণ, অসংখ্য মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়। বিজয় প্রিয় দেশ এখন পরিণত হয়েছে সোনার বাংলায়। এদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরুষদের আকাংখা ছিল অনেক, তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন তাদের স্বপ্ন ছিল সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক মানবিক, সহনশীল শান্তিময়, সমৃদ্ধ একটি বাংলাদেশ গড়ার। তাদের যে স্বপ্ন পূরণ হয়েছি কি? বোধ করি তা এখন ভেবে দেখার সময় হয়েছে। বাংলাদেশে বহু শতাব্দি ধরে এই ভূখ-ে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম, কর্ম, সাংস্কৃৃতি, আচার, অনুষ্ঠানসহ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এসেছে। এই সহাবস্থানের মাধ্যমে এদেশের মানুষ গড়ে তুলেছে ঐতিহ্য। তবে যুগে যুগে তারা এই ভূখ-ে বিদেশী শাষক গোষ্ঠীর দ্বারা শোষিত, অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হয়েছে। ব্রিটিশদের ২০০ বছরেরও বেশি সময় শোষণ এখনও অনেকের স্মৃতিতে দুঃস্বপ্নের মতোই ভেসে উঠে। যুগে যুগে বাঙালী শাষক ও শোষিতের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। কখনও কখনও সংঘবদ্ধভাবে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল বাঙালী জাতীর ধারাবাহিক মুক্তি আন্দোলনের একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় রূপ। ১৯৭১ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি যুগান্তকারী রূপ ও গৌরবময় অধ্যায়। এ অধ্যায় রচনা করতে অসীম ত্যাগ তিতিক্ষার শিকার হতে হয়েছে। স্বপ্ন ছিল স্বাধীন মুক্ত হওয়া এবং একটি শোষণহীন সমাজব্যবস্থা। দেশ স্বাধীন হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়ভিত্তিক গতি প্রকৃতি সময়েরও বাস্তবতার সঙ্গে পরিবর্তন এদেশে। স্বাধীনতাও চেতনায় মধ্যে কিছু মৌলিকও সাধারণ পার্থক্য ও রয়েছে। কিন্তু চিন্তাশীলদের প্রভাবেই মানব জাতি এভাবেই উন্নতি লাভ করছে এবং করবে। চিন্তা জাতীয় জীবনকে সুসংগঠিত করে, বলিষ্ঠ করে কারণ চিন্তাশীল ব্যক্তিরা সমাজ গঠনের ধারকস্বরূপ। যে সমাজে চিন্তাশীল ব্যক্তি যত অধিক সে সমাজ তত বেশি উন্নত। সমাজে চিন্তাশীল মনীষীরা যুগে যুগে জম্ম নেন বলেই সমাজ উন্নত এবং প্রবল হয় এবং একটি স্বাধীন পরিবেশেই সম্ভব চিন্তাশীলতার অনুশীলন এবং জন সমাজের উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া তাই প্রয়োজন স্বাধীনতার জাতীয় চেতনাকে সমুন্নত ও সমৃদ্ধ করা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত বছরে নানা খাত প্রতিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে দেশ, আবার নতুন উদ্দীপনায় আশা আকাক্সক্ষা আর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে জাতি এগিয়ে এসেছে। বাঙালী জাতি আবেগপ্রবণ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন। এ বিজয় যেমন আনন্দের তেমনি বেদনাও। আনন্দ হলো মানুষের আকাঙ্কার চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে আর বেদনার হলো বিজয় আনতে গিয়ে যারা জীবন দিয়েছে, মা হারিয়ে সন্তানকে, সন্তান হারিয়েছে মাকে, মা হারিয়ে বাবাকে, ভাই হারিয়ে বোনকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে, স্বামী-স্ত্রীকে স্ত্রী-স্বামীকে হারিয়েছে। তবু এই হারানো বেদনাতুর গণমানুষের জন্য একটি শান্ত¡না এ দেশের বিজয় এবং একটি জাতীয় পতাকা। তাদের ত্যাগই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে স্বগৌরবে খাড়া করেছে যা আমাদের দেশের সং¯ৃ‹তি, আশা আকাক্সক্ষা এবং আদর্শের রূপ বহন করছে। এই জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদশন করা এ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের কর্তব্য। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মর্যাদা অপরিসীম। আমরা কি চেয়েছি, কি পাইনি সেগুলো ভুলে, আমরা চাই শান্তি, নিরাপত্তা, সচ্ছলতা ও অহঙ্কার নিয়ে বেঁচে থাকতে। দেশ থেকে সকল অশুভ শক্তির বিন্যাস করে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রাচীর গড়ে তুলতে হবে। তবেই বাংলাদেশ হবে একটি সুখীসমৃদ্ধ দেশ। হাসিনা মতীন ঢাকা।
×