ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাসসকে নাসিম আক্তার বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাইতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

বাসসকে নাসিম আক্তার বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাইতে হবে

পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী বেগম নাসিম আখতার মালিক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারী-শিশুসহ এদেশের মানুষের ওপর যে হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠন চালানো হয়েছে তার জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত। ‘আজ হোক কাল হোক’ বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতেই হবে। কারণ, পাকিস্তানের প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সেদেশের সাধারণ মানুষও এখন মনে করে, বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত, একাত্তরের ভয়াবহ ২৫ মার্চের সাক্ষী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেত্রী নাসিম আখতার মালিক বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে একথা বলেন। নাসিম আক্তার মালিক বলেন, যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায়, সে-ই প্রকৃত মুসলমান। পাকিস্তান যদি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চায়, তাতে পাকিস্তানের ছোট হওয়ার কিছু নেই। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ন্যাপের সমাবেশে যোগ দিতে নাসিম আখতার ২২ মার্চ ঢাকায় আসেন। ২২ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় থেকে তিনি এদেশের মানুষের প্রকৃত দাবি ও অবস্থা বুঝতে পারেন। ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ন্যাপের পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেশে ফেরার পথে সে রাতের যে হত্যাযজ্ঞ তিনি দেখেছিলেন, সে স্মৃতি মনে করে এখনও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাংলাদেশের মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু বেগম নাসিম আখতার। একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ২৫ মার্চের রাতে কার্ফ্যুর ভেতরে ট্রাকে করে যখন আমাদেরকে আর্মি পাহারায় এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন হত্যাযজ্ঞের যে নজির আমি দেখেছিলাম, সে স্মৃতি আমাকে এখনও তাড়া করে। ’৭১’এর যুদ্ধের নয়মাসে সে স্মৃতি মনে করে আমি অনেক কেঁদেছি। পাকিস্তানে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরি করতে গিয়ে অনেক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কিন্তু আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরে যাইনি। তিনি বলেন, সে সময় যুদ্ধে যারা মদদ দিয়েছেন, কিংবা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন, তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের কোন সংযোগ বা সমর্থন না থাকলেও তৎকালীন ভুট্টোর সরকার সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের যে অন্যায়, নিপীড়ন ছিল তা যৌক্তিক। সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাসও করেছিল। কিন্তু যুদ্ধের পর চারযুগের বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। ’৭১’এ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করতেন গণমাধ্যমের কল্যাণে এখন অনেকটাই বদলেছে। তাই তারাও মনে করে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত। বেগম নাসিম আখতার তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের পেছনে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতিই আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। সে সময় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দুই পাকিস্তানের ভেতরে দ্বন্দ ও সংঘাত সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটেছেন। তিনি আরও বলেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলো কখনই মানুষের কল্যাণ চায় না। তারা ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যতদিন থাকবে ততদিন দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হবে না। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শিকার সাধারণ মানুষকে স্বকীয় সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারকে সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মানুষ প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে এবং তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হলে, ধর্মের নামে কেউ তাদের অন্যায় কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে না। তিনি বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পাকিস্তান, ভারত বা বাংলাদেশ কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনেনি। আমরা বিভক্ত হয়েছি। কিন্তু তাতে কারো কোন লাভ হয়নি। কিন্তু আমাদের জাতিগত শক্তি অনেকাংশেই কমে গেছে। নাসিম বলেন, আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাজনৈতিক অনেক উত্থানপতন দেখেছি। দেশ বিভাগ দেখেছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সার্বিক উন্নয়নে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করার আহ্বান জানান।
×