ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লক্ষ্য ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় শীঘ্রই আইন কার্যকর করা

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট রোধে কমিশন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

দ্রব্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট রোধে কমিশন হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রাইস ফিক্সিং প্রতিরোধে নতুন বছরে কার্যকর করা হচ্ছে প্রতিযোগিতা আইন। আইনটি কার্যকর করার আগে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন নামে একটি কমিশন গঠন করবে সরকার। এর পর একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইনটি কার্যকর হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে প্রতিযোগিতা আইনটি কার্যকর না করতে মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদেরও কারসাজি ছিল। ফলে দীর্ঘ আড়াই বছরেও আইনটি কার্যকর হতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিধিমালা তৈরি না হওয়ায় প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ কার্যকর হতে পারছে না। তবে বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর ও বিধিমালা প্রণয়নে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে উধর্তন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আইনটি দ্রুত কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে বিধিমালা প্রণয়ন করা গেলে আগামী বছরের শুরুতেই আইনটি কার্যকর হতে পারে। ২০১২ সালের ১২ জুন পাস হওয়া প্রতিযোগিতা আইনে বলা হয়েছে-এই আইন প্রবর্তনের পর, যথাশীঘ্র সম্ভব সরকার, সরকারী গ্যাজেটের প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন নামে একটি কমিশন গঠন করবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আইনটি কার্যকর করতে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। প্রতিযোগিতা আইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিযোগিতা আইন পাস করা হয়েছে। তবে আইনটি কার্যকর করতে হলে বিধিমালা তৈরি ও তা ভেটিংয়ের প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বিধিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিধিমালা সম্পন্ন হওয়ার পর চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হবে। আশা করছি, ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় শীঘ্রই প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে। জানা গেছে, কমিশন গঠিত না হলেও ইতোপূর্বে একজন যুগ্ম সচিবকে ‘কমিশনের সচিব’ নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তার মূল কাজ ছিল খসড়া প্রণয়ন কমিটিকে বিধিমালা তৈরিতে সহযোগিতা করে দ্রুত বিধিমালার কাজ শেষ করা। কিন্তু বিধিমালা তৈরি সম্পন্ন হওয়ার আগে এই সচিবকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বিধিমালার একটি খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন কমিটির মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই এটি চূড়ান্ত করে তা ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত করে। পণ্যমূল্যের ক্ষেত্রে তারা কর্তৃত্বময় ভূমিকায় নামে এবং পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির জন্যও তারা দায়ী। এত কিছুর পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আইনী কোন হাতিয়ার সরকারের কাছে ছিল না। সে কারণেই প্রতিযোগিতা আইন করা হয়। প্রতিযোগিতা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা বৃদ্ধি, পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ের প্রসার, নতুন নতুন শিল্পোদ্যোক্তা গড়ে ওঠা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং মুক্ত বাণিজ্যের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারবেন। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে একটা স্বাধীন প্রতিযোগিতা কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই কমিশনের কাজ হবে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা এবং একচেটিয়া ব্যবসা রুখে দিয়ে ভোক্তাস্বার্থ রক্ষা করা। এছাড়া এ কমিশন আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে তা হলো- সিন্ডিকেট ভাঙ্গা, মূল্যের ওঠানামার ওপর নজর রাখা, অতিরিক্ত মুনাফার শিকার থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করা, বাজার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করা এবং সর্বোপরি ভোগ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা সম্ভব হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, প্রতিযোগিতা আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করার বিধান রয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা করাসহ যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে প্রতিযোগিতা কমিশন। এ ছাড়া আইনে সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করলে ১ বছরের কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির বয়স ৬৫ বছর হলে তাকে কমিশনের চেয়ারপার্র্সন বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বিলে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের চেয়ারপার্সন ও সদস্যদের মেয়াদ তিন বছর হবে।
×