ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পোশাক রফতানি করে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় অসম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

পোশাক রফতানি করে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় অসম্ভব নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পোশাক রফতানি করে ৫০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা অসম্ভব কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সরকার এবং এ শিল্পের উদ্যোক্তারা এ লক্ষ্য অর্জনে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর এটি বাস্তবায়িত হলে উন্নয়নের মাইলফলক উন্মোচিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। শনিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিকেএমইএ’র উদ্যোগে প্রকাশিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র প্রকাশনা ‘গ্লোবাল বায়ার্স ইনফরমেশন ডিরেক্টরি’র মোড়ক উন্মোচন ও বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ১৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক আয় রেখে গেছে। বর্তমানে তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর রিজার্ভ রেখে গিয়েছিল ৬ বিলিয়ন। বর্তমানে তা ২২ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার পর মাত্র ১৭টি পণ্য রফতানি করত বাংলাদেশ। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কোরিয়া, চিলি, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হচ্ছে যা উন্নত দেশের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের জরিপে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে শিক্ষা, শিশু মৃত্যু হার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দিকে এগিয়ে আছে। জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য বিএনপিকে দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিন শর্তে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা দিয়েছিল। শর্ত তিনটি হলো তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে ফেব্রিকস আর ফেব্রিকস থেকে পণ্য উৎপাদন করা। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে ভারত থেকে সুতা আমদানি করে তা উৎপাদন করা হয়েছে বলা হয়েছিল। সেটা ধরা পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়েছে। জিএসপি সুবিধা বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিকল্প রফতানি বাজার তৈরি করা হয়েছে। আর এজন্য ব্যবসায়ীদের ৩ শতাংশ সরকারী প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর জন্য চাপ দিচ্ছে, সেদেশেই ৭ শতাংশ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন বাস্তবায়ন হয়নি। কম্বোডিয়ার একটি কারখানায় প্রায় ৪০টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। আমরা তাদের মতো হতে চাই না। চার-পাঁচজন শ্রমিক নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন হবে না। ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে ৩০ শতাংশ শ্রমিক একত্রিত হতে হবে। তা না হলে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিকেএমইএ’র দাবির প্রতি সম্মতি জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা শীঘ্রই নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসসহ আধুনিক শিল্পাঞ্চল গঠন করব। ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জে আড়াই শ’ শিল্প কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বিকেএমইএ’র সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, বিকেএমইএ’র সহসভাপতি আসলাম সামি, জি এম ফারুক প্রমুখ। এছাড়া প্রকাশিত বইটিতে পৃথিবীর ১৬০টি দেশের ২৫ হাজারের বেশি বায়ারের ঠিকানা এবং ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। বইটিতে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর আমদানি, পরিসংখ্যান, মূল আমদানিকৃত পণ্যের তালিকা, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার, বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল বৈচিত্র্য এবং সর্বোপরি আমদানিকারকদের ঠিকানা প্রদান করা হয়েছে। এ্যাপারেল সামিট নিয়ে বিজিএমইএ’র সংবাদ সম্মেলন ॥ সম্প্রতি শেষ হওয়া এ্যাপারেল সামিট নিয়ে শনিবার বিকেলে বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকার নারায়ণগঞ্জের শান্তির চরে পোশাক পল্লী গড়ে তুলতে চায়। সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমা পোশাক ক্রেতা জোট এ্যালায়েন্সের প্রতিনিধি মেজবাহ রবিন, বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ফজলুল আজীম, বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতিদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের পোশাক শিল্প অনেক এগিয়েছে। একে আরও এগিয়ে নিতে বাউশিয়ার মতো নারায়ণগঞ্জের শান্তির চরে একটি পোশাক পল্লী স্থাপন করা হবে। প্রায় ১ হাজার একর জমির ওপর এই পল্লী স্থাপন করা হবে। বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, এ্যাপারেল সামিটের মূল লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে পোশাক রফতানি ৫০ বিলিয়নে নিতে রোডম্যাপ তৈরি করা। রোডম্যাপ অনুযায়ী নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে পারলে ৫০ বিলিয়নের চেয়ে আরও বেশি রফতানি করা সম্ভব।
×