ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রাহককে বিদ্যুত সাশ্রয়ী য্ত্রাংশ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

গ্রাহককে বিদ্যুত সাশ্রয়ী য্ত্রাংশ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের চেয়ে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত বাঁচানো সহজ বলেই গ্রাহকের সাশ্রয়ী হওয়ায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যদিও দেশে বিদ্যুত সাশ্রয়ী মানসিকতা গড়ে ওঠেনি সাধারণের মধ্যে। কি প্রক্রিয়ায় বিদ্যুত সাশ্রয় করা যায় তাও জানেন না বেশিরভাগ গ্রাহক। কি শহর বা গ্রাম কোথাও বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশর ব্যবহারের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সরকার কিংবা বিদ্যুত বিভাগে কাজ করছেন এরা সাশ্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই তেমন। এজন্য প্রতিবছর বিদ্যুত বিভাগ আয়োজন করছে বিদ্যুত সপ্তাহের। এক ছাদের নিচে এসে মানুষ বিদ্যুতের সকল সেবা নিতে পারবেন এখান থেকে। জানতে পারবেন প্রয়োজনীয় নানা তথ্য। দেখতে পারবেন কিভাবে বিদ্যুত সাশ্রয় করে নিজের বিদ্যুত বিল কমিয়ে আনার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করা যায়। বিদ্যুত সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, দেশের বিদ্যুতের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিতরণÑ সকল পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে উন্নত দেশকে অনুসরণ করবে বাংলাদেশ। শুধু গ্রিড এলাকায় নয়, অফগ্রিড এলাকায় মানুষ যাতে বিদ্যুত পায় এজন্য সৌর প্যানেলের মাধ্যমে মিনিগ্রিড স্থাপন করা হবে। কিন্তু দেশের বাজার নিম্নমানের সৌরপ্যানেলে ছেয়ে গেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী স্রেডাকে নিম্নমানের প্যানেলের বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মানুষ তার প্রাপ্য সেবা সম্পর্কে জানতে চায়। এজন্য গ্রাহকদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজাতে হবে। সকল ধরনের গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রয়োজনে বিতরণকারী কর্তৃপক্ষকে মানুষের কাছে যেতে হবে। আগামী প্রজন্মকে সাশ্রয়ী মনভাপন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। আগে মানুষ ঘরে সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করত এরপর সাশ্রয়ী সিএফএল জনপ্রিয় হলো কিন্তু আলো জ্বালাতে এর পরের প্রযুক্তি এলইডি এরমধ্যে বিশ্ববাজারে চলে এসেছে। কিন্তু এই বাতি ব্যবহারের তেমন উদ্যোগ আমাদের দেশে নেই। বলা যায় ১০০ ওয়াটের সাধারণ বাতিতে যে আলো পাওয়া যায় সিএফএল-এ সমপরিমাণ আলোর জন্য প্রয়োজন হয় ২০ ওয়াটের বাতি আর এলইডিতে তার খরচ আরও কম যা মাত্র ১২ ওয়াটের মতো। আবার ৪০ ওয়াটের সাধারণ বাতির বদলে নয় ওয়াটের সিএফএল আর পাঁচ ওয়াটের এলইডি বাতি ব্যবহার করলে সমান আলো পাওয়া যায়। কিন্তু বিদ্যুত খরচ অনেক কমে আসে। যদিও সাধারণ বাতির তুলনায় সিএফএল এবং এলইডি বাতির দাম খানিকটা বেশি। এভাবে সাধারণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের পাশাপাশি সাশ্রয়ী যন্ত্রাংশ রয়েছে। প্রথমে ওই যন্ত্রাংশ ক্রয়ের সময় একটু বেশি দাম পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে ওইসব যন্ত্রাংশর ব্যবহারে বিদ্যুত কম খরচ হয়। যাতে করে গ্রাহকের বিদ্যুত বিল কমে আসে। সরকারের পরিকল্পনা বলছে আগামী বছরের মধ্যে ১০ ভাগ, ২০২১ এরমধ্যে ১৫ ভাগ এবং ২০৩০ এর মধ্যে অন্তত ২০ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য উৎপাদন পর্যায়ে জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সঞ্চালন-বিতরণ-ব্যবহার সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য মিলকারখানা থেকে শুরু করে রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত উন্নত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিদ্যুত মেলার শেষ দিনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের স্টল ঘুরে তারই আয়োজন দেখা গেল। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এবার মেলায় সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকা- দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন। তবে সব থেকে নজর কেড়েছিল ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসির আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ এবং লোড বৃদ্ধির কার্যক্রম। মেলাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ যারাই সংযোগের আবেদন করেছেন তাদেরই সংযোগ দেয়া হয়েছে। এভাবে মেলার শেষ দিন শনিবার বিকেল পর্যন্ত সংযোগ পেয়েছে ২৬৭টি । যদিও কাল শেষ বিকেলে আবেদনকারীদের আজ সংযোগ দেবে ডিপিডিসি। তবে গ্রাহকরা বলছেন একই প্রক্রিয়ায় অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো তাৎক্ষণিক সংযোগ দেয়ার সুবিধা রাখলে উপকৃত হতেন সকলে। আয়োজকরা বলছেন ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও সম্প্রসারিত হবে। ঢাকার বংশালের বাড়িতে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে চান আবু সালেহ মন্টু। কিন্তু বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে বিড়ম্বনার শেষ নেই। যায়গায় যায়গায় ঘোরাঘুরি তো আছেই, তার উপর আছে উৎকোচ উপঢৌকন। কিন্তু মেলায় আবেদন করলে সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ পত্রপত্রিকায় পড়ে তিনি এলেন বিদ্যুত মেলায়। শুক্রবার বিকেলে তিনি সকল পক্রিয়া শেষ করে পেয়ে যান চাহিদাপত্র (ডিমান্ড নোট)। আবু সালেহ মন্টু বললেন, এতো একদম জাদুর মতো সত্য। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, এতটা আশাও করেননি তিনি। বিদ্যুত প্রত্যাশী সায়েদাবাদের বাসিন্দা এ কে এম আশরাফ বিদ্যুত সংযোগ নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে জানালেন, স্থানীয় বিদ্যুত অফিস থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষও চেয়েছে। মেলায় এসে তাৎক্ষণিকভাবেই পেয়ে গেলেন নতুন সংযোগ। জানালেন নতুন মিটারের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু পাইনি। মানুষের ভোগান্তি কমাতে বছরে দুই বা তিন দিন না হয়ে সারাবছরই এই সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। মেলায় ঘুরে দেখা গেল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শনী করছেন। এসব পণ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবহিত করছেন মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেকে আবার পণ্য বিক্রি করার ব্যবস্থাও রেখেছিলেন। মেলা থেকে কিনলে এসব পণ্যে ছিল বিশেষ ছাড়। একটি ৫৬ হাজার টাকার জেনারেটর মেলায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার টাকায়। বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণসহ সকল কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি প্রতিষ্ঠান এই মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলায় যেমন এসেছিলেন সাধারণ আগ্রহীরা তেমনই ছিলেন প্রকৌশলীরা। তিন দিনের মেলায় শুক্র এবং শেষ দিন শনিবার উপচেপড়া দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল।
×