ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে চলে, আয় আয় আয়...;###;আজ পয়লা পৌষ

পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে, আয় আয় আয়...

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

 পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে, আয় আয় আয়...

মোরসালিন মিজান ॥ পউষ এলো গো!/ পউষ এলো অশ্রু-পাথার হিম পারাবার পারায়ে।/ ঐ যে এলো গো...। এসেছে পৌষ। আজ প্রথম দিন। ১ পৌষ ১৪২১ বঙ্গাব্দ। শুরু হলো শীতকাল। ঋতুর হিসেবে চলবে মাঘ পর্যন্ত। দুই মাস আয়ুর হলেও, প্রিয় ঋতুর জন্য প্রতীক্ষা করে থাকে বাঙালী। এ সময় নগরে-গ্রামে আয়োজন করা হয় নানা উৎসব অনুষ্ঠানের। কবির ভাষায়- শীত এসেছে লাগলো কাঁপন, লাগলো দোলা প্রাণে/ শীত এসেছে হিমেল হাওয়া, আনন্দ আর গানে...। শীত উৎসবে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন কবিগুরুও। লিখেছেন- পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে, আ য় আ য় আয়...। আজ সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিক শুরু হলেও শীত জেঁকে বসেছে কয়েকদিন আগে থেকেই। দিন যত গেছে, বেড়েছে শীত। আজ আনুষ্ঠানিক শীতকাল শুরু। আবহাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশ বিষুবরেখার উত্তরে। প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রী অক্ষাংশে। কিন্তু শীতকালে অবস্থান পরিবর্তন করে সূর্য বিষুবরেখার দক্ষিণে চলে যায়। দক্ষিণে কিছুটা হেলে থাকে। দিন ছোট হয়। বড় হতে থাকে রাত। ফলে শীতের প্রকোপ বাড়ে। বাংলাদেশে যখন শীতকাল, পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশে তখন গ্রীষ্ম। ওসব দেশে বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তর গোলার্ধ থেকে ঠা-া বাতাস দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে বরফশীতল বায়ু এ দেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। আসে সাইবেরীয় ঠা-াও। আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে যে ঠা-া বাতাসের প্রবল প্রবাহ সৃষ্টি হয়; তা শৈত্যপ্রবাহ নামে পরিচিত। এ সময় তীব্র ঠা-া অনুভূত হয়। তবে মাঘের শীত সবচেয়ে বেশি আলোচিত। বলা হয়ে থাকে, মাঘের শীতে বাঘা পালায়! পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের শীতের সঙ্গে বাংলাদেশের শীতের পার্থক্য বিস্তর। কোন কোন দেশে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রীতে নেমে আসে। খুব কাছের দেশ চীনেও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নয়-দশ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়! মেরু অঞ্চল বা এন্টার্কটিকার কথা তো বলাই বাহুল্য। অথচ বাংলাদেশে তাপমাত্রা ছয় থেকে পাঁচ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে খুব একটা নামে না। সেদিক থেকে বাংলাদেশের শীত অনেকখানি উপভোগ্য। প্রিয় হলেও, শীত সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে গ্রামীণ জীবনকে। পৌষে কৃষকের ফসল ঘরে তোলার কাজ শেষ হয়ে যায়। হাতে তেমন কাজ থাকে না। সবাই উৎসব-আনন্দে মাতে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চালে ঘরে ঘরে চলে পিঠাপুলির আয়োজন। পৌষের প্রকৃতিও অদ্ভুত সুন্দর। প্রতিবারের মতো এবারও নতুন রূপে সেজেছে। বদলে গেছে অনেক ধরাবাঁধা নিয়ম। এখন সকাল হলেই সূর্যালোকের দেখা মেলে না। ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ। রাতে শিশির ঝরছে। প্রকৃতির এ রূপ বর্ণনা করেই জীবনানন্দ লিখেছিলেনÑ শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো...। অন্য কবির কবিতায় বর্ণনাটি এ রকমÑ বিষাদের প্রতিমূর্তি হে শীত, সবুজের পোষাক খসিয়েছ/ নিয়েছ জড়িয়ে কুয়াশার শুভ্র চাদরে তপসীর সাধনায়...। পৌষে এই কুয়াশা এত হয় যে প্রতিদিনের সূর্যওঠা ভোরও দেখা যায় না। সূর্যের আলোর জন্য প্রতীক্ষা করতে হয়। সুকান্ত তাই লিখেছিলেন, সকালের এক-টুকরো রোদ্দুরÑ/ এক-টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামী।/ ঘর ছেড়ে আমরা এদিক-ওদিকে যাইÑ/এক-টুকরো রোদ্দুরে তৃষ্ণায়...। গ্রামের সাধারণ কৃষক অবশ্য সূর্যের অপেক্ষা করে না। রাত পোহাবার আগেই ঘুম থেকে ওঠে আইলায় হাত সেঁকে নেয়। এভাবে যেটুকু সম্ভব উষ্ণতা সঞ্চয় করে চলে যায় ফসলের মাঠে। শীতে ফসলের মাঠও যেন নতুন প্রাণ পায়। প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা বলেন, এ সময় সরিষার ক্ষেতে চোখ আটকে যায়। চোখ ধাঁধানো রূপ, রঙের খেলা মনে করিয়ে দেয় শীত এসেছে। খেজুরের রসে ভরে ওঠে মাটির কলসি। ম ম গন্ধ ছড়ায়। শীতের হাওয়ায় কাঁপন ধরে আমলকীর বনে। কবিগুরুর ভাষায়Ñ শীতের হাওয়ার লাগলো নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে।/ পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে...।
×