ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় বর্ণিল আয়োজনে বিজয় উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

শিল্পকলায় বর্ণিল আয়োজনে বিজয় উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালীর অসীম বীরত্বে জন্ম নেয়া রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাসটিকে ঘিরে মুখর রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন। গান-কবিতা-নাটক কিংবা সেলুলয়েডে উঠে আসছে একাত্তরের স্মৃতি জাগানিয়া উত্তাল দিনের কথা। উৎসবমুখরতায় ভেতর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বিজয় দিবস উদযাপনের নানা আয়োজন। সেই সূত্রে রবিবার থেকে শুরু হলো শিল্পকলা একাডেমির ১৩ দিনব্যাপী বিজয় দিবসের উৎসব। শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নাটক, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মডেল অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনা দিয়ে সাজানো হয়েছে বর্ণিল এ উৎসব। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে, এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হল এবং জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। শেষ হেমন্তের সন্ধ্যায় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শুরুতেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর সুরের আবাহনে মঞ্চে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী মিতা হক। দরদমাখা কণ্ঠে শহীদদের স্মরণ করে গেয়ে শোনান মরণ সাগর পাড়ে, তোমরা অমর/ তোমাদেরই স্মরি। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আলোচনায় অংশ নেন শহীদ জায়া মিলি রহমান, শিক্ষাবিদ ও লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দীন। উদ্বোধনী বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমাদের গৌরবের মহান বিজয় দিবস স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্বের অবিস্মরণীয় একটি দিন, লাখো শহীদের রক্তস্নাত বিজয়ের দিন। পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ-নিপীড়ন ও দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে একাত্তরের এই দিনে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকিমিকি করে উঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শোষণ-বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়ের। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে ৪৪ বছর আগে উদিত হয়েছিল বিজয়ের লাল সূর্য। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সুরের ধারার শিল্পীদের সম্মেলক দুটি সঙ্গীতের মাধ্যমে এ পর্বের সূচনা হয়। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় ‘সম্মুখে শান্তির পারাবার’ ও ‘সংকোচের বিহ্বলতা’। এর পর ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে দিব্য সংগঠনের শিল্পীরা। খ্যাতিমান বংশীবাদক মনিরুজ্জামানের অর্কেস্ট্রার পরিবেশনাটি ছিল দারুণ মোহনীয়। এরপর লোকজ বাংলার সুর নিয়ে মঞ্চে আসে ভাওয়াইয়া গানের দল। গান শেষে পরিবেশিত হয় নৃত্য। আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে গানের সুরে নাচ করে দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা। ‘রক্ত দিয়ে কিনলাম বাংলা’ ও এই সূর্যের উদয়ের পথে শহীদের খুনে লাল’ শীর্ষক দুটি বৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিবেদিত নাটক পোড়ামাটি মঞ্চায়িত ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রবিবার শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়ে গেল পদাতিক নাট্য সংসদের নাটক পোড়ামাটি। বাবুল বিশ্বাসের রচনা ও আইরিন পারভীনের নির্দেশনায় এ নাটক পদাতিকের ৩১তম প্রযোজনা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসব ॥ ‘যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে ধার্য/গণহত্যাকারী সংগঠনের বিচার অনিবার্য’ সেøাগানে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ছয় দিনের বিজয় উৎসব। দ্বিতীয় দিনে রবিবার শহীদ মিনারের পাদদেশে শুরু হয় মূল আয়োজন। এদিন আয়োজনের সূচনাতেই ঘোষণাপত্র পাঠ ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন মানজার চৌধুরী সুইট। শিল্পকলা একাডেমি : শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলা একাডেমির আলোচনা ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণে রবিবার একাডেমির নজরুল মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক জিনাত হুদা অহিদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজয় উৎসব ॥ ‘রাষ্ট্র ও সমাজ মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করুন’ স্লোগান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালার পঞ্চম দিনে রবিবার ছিল আলোচনা, দলীয় আবৃত্তি, সঙ্গীত পরিবেশনা। জাহিদ রেজা নূরের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা অংশ নেয় শহীদ পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের দু’জন। ‘সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক প্রদর্শনী ॥ বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও আলোকচিত্র নিয়ে তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে ‘সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন হাবীব, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক আলমগীর হোসেন প্রমুখ। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে টিএসসিকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারী হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে টিএসসির সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ সংসদ আয়োজন করে ‘বিজয়ের চেতনায় পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে পরিচ্ছন্নতা অভিযান’, স্লোগান ’৭১-এর ‘আমার ভালবাসার পতাকা’ ও ‘রাজাকারের ব্যাঙ্গচিত্রে ডার্ট নিক্ষেপ’, ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম এ্যাকশন ‘এখনো বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্ট্রীট শো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ ‘শহীদ স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন’ কর্মসূচী পালন করে। শিল্পকলায় মুন্সীগঞ্জে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সঙ্গীতের আসর ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে, মুন্সীগঞ্জে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রবিবার শহরের সরকারী হরগঙ্গা কলেজসংলগ্ন বধ্যভূমি স্ম"তিসৌধে সঙ্গীতের আসর বসে। এতে ¯′ানীয় শিল্পীরা শহীদদের স্মরণে নানা গান পরিবেশন ও কবিতা আব"ত্তি করেন। এর আগে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলাবাসী। প্রশাসন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বীর শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং বিশেষ দোয়া করা হয়। এতে অংশ নেন এ্যাডভোকেট ম"ণাল কান্তি দাস এমপি, জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল, পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সওদাগর মুস্তাফিজুর রহমান, সরকারী হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান, সিভিল সার্জন ডাঃ শরিফুল আলম, প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মেজর নূরুল আমিন হেলাল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আনিস-উজ-জামান, এডিসি কদ্দুস আলী সরকার, এডিএম একেএম শওকত আলম মজুমদার, ইউএনও শারাবার তাহুরা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি মোঃ জামাল হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মেহেরুন্নেসা নাজমা, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমএ কাদের মোল্লা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মতিউল ইসলাম হিরু ও প্রেসকাব সভাপতি মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল প্রমুখ।
×