ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তরে যুক্তরাষ্ট্রকে জাতিসংঘের আহ্বান

হ্যামারশোল্ডের মৃত্যু রহস্য উন্মোচনের সম্ভাবনা!

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪

হ্যামারশোল্ডের মৃত্যু  রহস্য উন্মোচনের  সম্ভাবনা!

গোয়েন্দা তথ্যই সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব দ্যাগ হ্যামারশোল্ডের মৃত্যু রহস্যের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে পারে। জাম্বিয়ায় ১৯৬১ সালে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হ্যামারশোল্ড নিহত হন। প্রকৃত সত্য নির্ধারণে গোয়েন্দাদের কথাবার্তার রেকর্ড হস্তান্তর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দ্যাগ হ্যামারশোল্ডের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা রহস্যের আড়ালে চাপা পড়ে আছে। তদানীন্তন জাতিসংঘ মহাসচিব বিচ্ছিন্নতাবাদী আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় অস্ত্রবিরতিতে মধ্যস্থতা করার জন্য যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। জাতিসংঘের নতুন অনুরোধ মেনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা কথাবার্তা সংবলিত তথ্য হস্তান্তর করলেই ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বরে রোডেশিয়ার উত্তরাঞ্চলে (বর্তমানে জাম্বিয়া) এনডোলার কাছে এক জঙ্গলে ঐ আলবার্টিনা ডিসি৬ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। দ্যাগ হ্যামারশোল্ডকে বহনকারী বিমানটির একজন ছাড়া সব আরোহী নিহত হন। বিমানটির ১৬তম যাত্রী ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সার্জেন্ট হ্যারল্ড জুলিয়েন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েকদিন পর আহত অবস্থা থেকে মারা যান। তিনি হাসপাতালে কর্মীদের বলেছিলেন, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তিনি আকাশে ‘আগুনের ফুলকি’ দেখতে পেয়েছিলেন। তিনটি পৃথক তদন্ত সত্ত্বেও ঐদিন রাতে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই ষড়যন্ত্রের ধারণাটি বেশ গুরুত্ব পেতে থাকে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরদিন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান সাংবাদিকদের বলেন, হ্যামারশোল্ড যখন কিছু করতে উদ্যত হন তখনই তারা তাকে হত্যা করে। ট্রুম্যান এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু এ থেকে তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। হ্যামারশোল্ড কাতাঙ্গার বিচ্ছিন্ন হওয়া বন্ধ করে কঙ্গোকে পুনরেত্রীকরণের যে উদ্যোগ নেন তা ভ-ুল করতে বহু দেশের স্বার্থ ছিল। সোভিয়েত সহায়তাপুষ্ট কঙ্গোতে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম খনি। খনি মালিকদের আশঙ্কা ছিল, কাতাঙ্গার স্বাধীনতার উদ্যোগ স্বীকৃতি না পেলে এতদিন ধরে তারা যে ছাড় পেয়ে আসছে তা ভ-ুল হয়ে যাবে। দেশটিতে তখন কেজিবি, সিআইএ এবং এমআইসিক্স’র মতো গোয়েন্দা সংস্থা সক্রিয় ছিল। এসব গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নিজ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ছিল। হ্যামারশোল্ড তদন্ত ট্রাস্টের প্রধান লর্ড লির সভাপতিত্বে খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞদের প্যানেল গত বছর জাতিসংঘে একটি রিপোর্ট দাখিল করে। ধারণা করা হয় যে, ইউরোপীয় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গ্রুপ চেয়েছিল তদানীন্তন জাতিসংঘ মহাসচিবকে বহনকারী বিমানটি এনডোলা থেকে দিক পরিবর্তন করে চলে যাক। কাতাঙ্গার স্বাধীনতার দাবি মেনে নিতে হ্যামারশোল্ডকে রাজি করানোর চেষ্টা করা হয় বলে কথিত রয়েছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা বিমানটিতে গুলিবর্ষণের চিহ্ন দেখতে পেয়েছিল বলেও দাবি করা হয়। বিমানটি শনাক্ত করতে নয় ঘণ্টারও বেশি বিলম্ব ঘটে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানে কারও পদার্পণ ঘটেছিল। কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তারা ছয় থেকে আট শ্বেতাঙ্গকে সামরিক পোশাক পরা অবস্থায় দেখেছিলেন। কেউ কেউ এমন ভয়ঙ্কর দাবিও করেছেন যে, হ্যামারশোল্ডসহ বিমানের কয়েক আরোহীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরও হ্যামারশোল্ড বেঁচে যান এবং ঘটনাস্থলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিধ্বস্ত বিমানটি থেকে কিছু দূরে একটি উঁইয়ের ঢিবিতে পাওয়া যায় তার মরদেহ। তার মরদেহের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়েছিলেন তারা। তার কলারেও পাওয়া যায় একটি টেক্কা। -গার্ডিয়ান।
×