ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় নিশান উড়ছে ওই

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বিজয় নিশান উড়ছে ওই

‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই উড়ছে, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলো ওই জ্বলছে।’ সেই আলোর ঝর্ণাধারায় প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল বিশ্ব মানচিত্রে এক নতুন দেশ। গৌরবের, আনন্দের, অহঙ্কারের, আত্মমর্যাদার ও আত্মোপলব্ধির দিন আজ। দেদীপ্যমান, প্রসন্ন, আলোকিত বিজয় দিবস। বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসরদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করার দিন। আর বাঙালী জাতির চূড়ান্ত বিজয়ের দিন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের আজ আমরা স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধায়। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসীম ত্যাগ আর সাহসিকতার ফসল ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অকুতোভয়, সংগ্রাম, রাজনৈতিক নির্দেশনায় লড়াই করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, যাঁদের অবদানে এই দেশ। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর মেশিনগান, কামান, ট্যাঙ্ক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুরু করেছিল নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ। রুখে দাঁড়িয়েছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে বাঙালী। তুলে নিয়েছিল হাতে প্রতিরোধের অস্ত্র। সম্মুখ সমরে বাজি রেখে লড়াই করেছিল। সেদিন কেবল পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গেই নয়, তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস, রাজাকার, শান্তি কমিটির বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়েছে। এরা যুদ্ধকালে পাকিস্তানী হানাদারদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছে গ্রাম, শহর, নগর, বন্দর, ঘরবাড়িতে। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ ও হত্যাসহ অমানুষিক সব কর্মকা- সংঘটিত করেছে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে আলবদর, রাজাকাররা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরও হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের সহযোগীরা পর্যুদস্ত হয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। রেসকোর্স ময়দানে ১৬ ডিসেম্বর তারা নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। মুক্ত হয় বাংলাদেশ দখলদার বাহিনীর হাত থেকে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথা তুলে দাঁড়ায়। সামরিক স্বৈরশাসকরা তাদের পুনর্বাসিত শুধু নয়, রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদারও করে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত ছিল। কিন্তু সামরিক জান্তা শাসকরা সে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। সাজাপ্রাপ্তসহ বিচারাধীনদের কারাগার থেকে মুক্ত করে রাজনীতির চৌহদ্দিতে নিয়ে আসে। শাসকরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত কেবল নয়, ধামাচাপা দিয়ে রাখে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম ইতিহাস ধারণ করতে না পারে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ক্রমশ প্রকট হতে থাকে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেন নির্বাচনী ওয়াদানুযায়ী। বিচারের বাণীকে আর নীরবে নিভৃতে কেঁদে ফেরার পথ রুদ্ধ করে দেন। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের মামলায় দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে একের পর এক রায় প্রদান করা হচ্ছে। কয়েকজনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। একজনের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যে রাষ্ট্রের মর্মবাণী হবে গণতন্ত্র, যে রাষ্ট্রে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মুক্তির আস্বাদ নিয়ে বসবাস করবে। উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে চলবে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মান্ধ মৌলবাদকে প্রতিহত করে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওইসব অপশক্তিকে সমূলে উৎখাত করাই এখন লক্ষ্য। এবারের বিজয় দিবসের শপথ হোক সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও শাস্তি, গণতন্ত্রের অব্যাহত অগ্রযাত্রার পথে সব বাধা দূর করা। মুক্তি ও স্বাধীনতার নতুন চেতনায় আলোকিত হোক বাংলাদেশ। বাংলার ঘরে ঘরে যত ভাইবোন এক হয়ে গড়ে তুলুক উন্নত বাংলাদেশ।
×