ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকের সুদহার আরও কমানোর আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

ব্যাংকের সুদহার আরও কমানোর আহ্বান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ব্যাংকের ঋণের সুদহার ধীরে ধীরে কমছে। তবে তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় নয়। এখনও ঋণের গড় সুদহার ১২.৪৯ শতাংশ। তিনি বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে সুলভ বিনিয়োগ আবশ্যক। তাই শিল্প ঋণের সুদহার কিভাবে যুক্তিসঙ্গত মাত্রায় আরও কমানো যায় কিনা সে বিষয়টি বিবেচনার জন্য ব্যাংকারদের আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় তিনি এসব কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে গবর্নর বলেন, ব্যাংকের ঋণের সুদহার ধীরে ধীরে কমছে। তবে তা কাক্সিক্ষত মাত্রায় নয়। এখনও ঋণের গড় সুদহার ১২.৪৯ শতাংশ। আগের ব্যাংকার্স সভায় আমি বলেছিলাম, দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে সুলভ বিনিয়োগ আবশ্যক। তাই শিল্পঋণের সুদহার কিভাবে যুক্তিসঙ্গত মাত্রায় আরও কমানো যায় সে বিষয়ে আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে আমানতের সুদহারের চেয়ে ঋণের সুদহার অধিক মাত্রায় কমায় গত চার মাসে আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড ৫.৩১ থেকে কমে ৫.০৯ শতাংশীয় পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এখনও ২০টির মতো ব্যাংকের স্প্রেড ৫ এর ওপর রয়েছে। আপনারা এই স্প্রেড দ্রুত কমিয়ে চারের কাছাকাছি আনার জন্য সচেষ্ট থাকবেন। সেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কম তাদের স্প্রেডও কেন এতটা বেশি? অতি মুনাফার এই প্রবণতা অবশ্যই রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাছে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযোগ আসছে কোন কোন ব্যাংক বিভিন্ন সেবার বিপরীতে মাত্রাতিরিক্ত চার্জ/ফি নিচ্ছে। গ্রাহকদের সঠিক ধারণার অভাবেও এ অভিযোগ আসতে পারে। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি লিঙ্ক তৈরি করেছি। এ সংক্রান্ত আমাদের নির্দেশনাগুলোও এখানে একীভূত করা হয়েছে। এই লিঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি সব ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সিডিউল অব চার্জেস সংযুক্ত করার ব্যবস্থাও আমরা গ্রহণ করেছি। এ ব্যাপারে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। সভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে প্রচলিত নিয়ম মেনেই। সোনালী ব্যাংকের কাছে যেসব ব্যাংকের স্বীকৃত বিলের পাওনা রয়েছে তা এক মাসের মধ্যে কমিয়ে আনা হবে। প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর হিসাব থেকে কেটে রাখা হবে। ব্যাংকার্স সভায় লিখিত বক্তব্যে গবর্নর বলেন, এ বছর সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় থাকলেও ব্যাংকিং খাতে শ্রেণীকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণের হার প্রতি প্রান্তিকেই সামান্য করে বেড়ে সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। সামনে বছরে শেষ প্রান্তিক ডিসেম্বর ২০১৪। তাই আপনারা এর আগেই খেলাপি ও শ্রেণীকৃত ঋণের হার কমানোর লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন এটাই আশা করছি। এজন্য আদায়ের ওপর সর্বশক্তি প্রয়োগ করুন। তিনি বক্তব্যের শেষে বলেন, আমি আবারও বলছি, ডিসেম্বর প্রান্তিকে আপনাদের প্রধান লক্ষ্য হবে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ও হার উভয়টাই কমানো। এ লক্ষ্যে আপনারা আপনাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দূরদর্শিতা প্রয়োগ করবেন বলে আমি আশা করছি। সভা শেষে এ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ যে কোনভাবে ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন গবর্নর। এজন্য ঋণ নীতিমালায় কোন শিথিলতা করা হবে না। তবে বড় গ্রুপের বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে নীতিমালার কিছুটা ছাড় দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সভা সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ সময়ই শ্রেণীকৃত ঋণ কমানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে যে কোন উপায়ে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ও আদায়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। কয়েকজন এমডি এজন্য ঋণ নীতিমালা আবারও শিথিল করার প্রস্তাব দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে নাকচ করে বলা হয়, প্রয়োজনে বড় ঋণের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হবে। তবে সবার জন্য নয়। এরপরও যে কোন উপায়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। সভায় কয়েকজন এমডি অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়ার বিরোধিতা করে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে গ্রাহকের ওপর চার্জ আরোপ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে তা নমনীয় পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। এছাড়া ব্যাংকের সেবার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাসুল আদায় না করার আহ্বান জানানো হয়।
×