ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারেকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪

তারেকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বেসামাল ও বেপরোয়া হয়ে পড়েছে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে সমালোচনার ঝড় তোলেন। আর এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার ও তিনি সমঝোতা করে পাকিস্তান চলে গিয়েছিলেন এবং তিনি ইয়াহিয়াকে মেনে নিয়েছিলেন বলে বেসামাল মন্তব্য করে ধৃষ্টতার সকল সীমা লঙ্ঘন করেছেন। এ নিয়ে সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আর তারেক রহমানের এ ধরনের বক্তব্যের কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরাও বিব্রত হয়েছেন। এদিকে বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে দেয়া তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। এভাবে ইতিহাস বিকৃত করে দেয়া তারেক রহমানের বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারেক রহমান কেন এমন বেসামাল কথা বলছেন তা নিয়ে কেবল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই নয়, খোদ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে দলের কোন নেতাকর্মী প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করছেন না। বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে তারেক রহমানের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তারেক আদপে বদ্ধ উন্মাদ। তাকে উন্মাদ বললেও সম্মান করা হয়। এই উন্মাদ অবস্থাতেই তার শেষ পরিণতি ঘটবে। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেন, ক্ষমতা হারিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তাই তাঁরা এখন কি বলতে কি বলছেন তা বুঝতে পারছেন না। তারেক যখন জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য দিয়েছিলেন তার ক’দিন পর ঢাকায় বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বলে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি তারেককে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের বক্তব্য না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইতিহাস জেনে কথা বলতে হবে। আর ইতিহাস জানার জন্য তারেক রহমানকে আরও পড়াশোনা করতে হবে। এরপর কিছুদিন তারেক রহমান ইতিহাস বিকৃত করে কথা বলা থেকে বিরত থাকলেও ইদানীং আবার শুরু করেছেন। কয়েকটি মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকায় এবং বিএনপি ক্ষমতা থেকে অনেক দূরে থাকায় ইচ্ছে করলেও তিনি এখন দেশে ফিরতে পারছেন না। আর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে লবিং করে শীঘ্র নির্বাচনের জন্য সরকারকে কোন চাপও দিতে পারছে না বিএনপি। এমনকি সাংগঠনিক দুর্বলতায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করতে পারছে না দলটি। আর এ কারণেই তারেকসহ দলের অনেক নেতা এখন বেসামাল কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যে রাজনৈতিকভাবে কোন ফায়দা হাসিল করতে পারবে না এ কথা বোঝানোর মতো নেতাও এখন বিএনপিতে নেই। আর যাঁরা আছেন তাঁরাও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের গুডবুকে নেই। এ কারণে ওসব নেতা এখন দলীয় কর্মকা- থেকেও দূরে থাকছেন। আর দলের তরুণ নেতাদের মধ্যে একটি অংশ আছেন যাঁরা তারেক রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দলের এসব নেতা তারেক রহমান যা বলেন তাই অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে কখনও কখনও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তাঁদের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এক সময় হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের সঙ্গে কাজ করতেন এমন লোকজনের বেশিরভাগই এখন বিদেশে পলাতক। তবে তাঁদের সঙ্গে তারেক রহমানের বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। আর তাঁরাই বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের নামে মাঝেমধ্যেই তারেক রহমানকে দিয়ে বিভিন্ন কথা বলিয়ে রাজনীতিতে তাঁকে আলোচনায় রাখার চেষ্টা করেন। হাওয়া ভবনসংশ্লিষ্ট এসব লোকের কারণে তারেক ও বিএনপি অতীতেও জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছে। সে ধারা এখনও অব্যাহত আছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। সোমবার রাতে বিজয় দিবস উপলক্ষে পূর্ব লন্ডনের আর্টিয়াম হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মিথ্যাচার ও বিষোদগার করায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট মমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী। লিগ্যাল নোটিসে তারেককে সাতদিনের মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা ও বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী মমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী বুধবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে তারেক রহমানকে লিগ্যাল নোটিস পাঠান। লিগ্যাল নোটিস পাঠানোর পর মেহেদী সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তারেককে এ লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায়। উল্লেখ্য, এর আগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক লন্ডনের এক হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য রাখেন। যেদিন তারেক রহমান লন্ডনে এ বক্তব্য রাখেন একই দিনে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা তারেক রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে বক্তব্য রাখেন। পরে দলীয় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও বলেন, জিয়াই দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক। জানা যায়, বিএনপির একাংশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়ে জোটের শরিক দল জামায়াতের কথায় দলীয় হাইকমান্ড নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠন করায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা নেমে আসে। এ কারণে এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনও করতে পারছে না দলটি। এ ছাড়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা একে একে বিভিন্ন মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় তাঁরা এখন ভবিষ্যতের পথ অন্ধকার দেখছেন। আর এ কারণেই বিএনপির ভবিষ্যত কা-ারি তারেক রহমান বেসামাল হয়ে বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করাসহ এ ধরনের কথা বলছেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারেক রহমান কেন বার বার বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিচ্ছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজে তার জীবদ্দশায় যেখানে বঙ্গবন্ধুকে অগাধ সম্মান প্রদর্শন করেছেন সেখানে তারেক রহমান কেন এমন কথা বলছেন তা নিয়ে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। দলের সর্বস্তরের সাধারণ নেতাকর্মী তারেক রহমানের এ ধরনের বক্তব্যে বিব্রত। বিএনপির আরেক নেতা হাসতে হাসতে বলেন, তারেক রহমান এখন অনেক দূর লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাই তিনি কি কারণে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তা বলতে পারব না। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, কেন তারেক রহমান শেখ মুজিবকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন তা আমি জানি না। তাই আমি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।
×