ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্মরণসভায় আনিসুজ্জামান

কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পকর্ম চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁকে বিশিষ্টতা দান করেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪

কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পকর্ম চিত্রশিল্পী হিসেবে তাঁকে বিশিষ্টতা দান করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্মরণ করা হলো সদ্যপ্রয়াত বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির ফেলো এই শিল্পীর স্মরণসভাটি অনুষ্ঠিত হয় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। স্মরণানুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত গুণী এই চিত্রকরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। শোকসভায় স্মৃতিচারণ করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কবি সৈয়দ শামসুল হক, একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, গবেষক মোনায়েম সরকার প্রমুখ। কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রকর্ম নিয়ে মূল্যায়নমূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। বাবার স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন কাইয়ুম চৌধুরীর পুত্র মইনুল ইসলাম জাবের। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। আনিসুজ্জামান বলেন, কাইয়ুম চৌধুরীর প্রচ্ছদপটে নিজস্বতা ও মৌলিকত্ব ছিল লক্ষণীয়। রঙের সমারোহ, রেখার চারুত্ব ও বিন্যাসের অনন্যতা তাঁকে চিত্রশিল্পী হিসেবে বিশিষ্টতা দান করেছে। সৈয়দ শামসুল হক বলেন, কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব দীর্ঘ ছয় দশকের। তাঁর মৃত্যু আমাকেও শূন্য করে দিয়ে গেছে। জয়নুলের মানবিক অঙ্গীকার, কামরুলের রূপময় বাংলার বোধ কাইয়ুম চৌধুরী চিত্রকর্মে উত্তরাধিকার হিসেবে বহন করেছেন। প্রচ্ছদপটে তাঁর অসাধারণত্ব সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তুলনীয়। বাংলাদেশের চিত্রকলায় জয়নুল, কামরুল ও এস এম সুলতানের পরেই তাঁর স্থান। তিনি বলেন, জীবনের তুলিতে কাইয়ুম চৌধুরী মৃত্যুকে জয় করে গেছেন। হাশেম খান বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন এক শুদ্ধ শিল্পী। ক্রমাগত তিনি নিজেকে আবিষ্কার ও অতিক্রম করেছেন। তাঁর চিত্রকলা এবং প্রচ্ছদশিল্পে যেন বাংলাদেশের আত্মা ফুটে উঠে। সেলিনা হোসেন বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রকলায় ভাস্বর হয়েছে অনন্য ব্যঞ্জনায়। তাঁর চিত্রকলা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে ধারণ করেছে বিপুল বৈভবে। মইনুল ইসলাম জাবের বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন চিরসুন্দরের সাধক। শিল্পের নির্মাতা নয়, সৃষ্টিকারক হিসেবেই তাঁকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি। নিজের শিল্পসৃষ্টিকে তিনি সাধনা-জ্ঞান করতেন। তিনি পিতা ও শিল্পীর ভূমিকা ছাপিয়ে একজন ইন্সটিটিউট হয়ে উঠেছিলেন। মোনায়েম সরকার বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন একজন দায়বদ্ধ শিল্পীর প্রতিকৃতি। শামসুজ্জামান খান বলেন, চিত্রকলার উদ্ভাবনময়তা, শিল্পসংগঠন শক্তি ও নান্দনিক ভাবনায় কাইয়ুম চৌধুরী পরিণত হয়েছিলেন আমাদের সাংস্কৃতিক রুচির এক অনন্য নির্মাতায়। তাঁর শিল্পসত্তা ছিল বহুমাত্রিক বিচিত্রমুখী। লোকজ উপাদানকে তিনি তাঁর চিত্রকলায় ফুটিয়ে তুলেছেন অপূর্ব চারুদক্ষতায়। সভাপতির বক্তব্যে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের আধুনিক চিত্রকলার পরিসর বৃদ্ধি করেছেন। লোকজ আঙ্গিককে তিনি ভেঙেচুরে নতুন মাত্রা দান করেছেন। তেল ও জলরঙে তাঁর তুলির বিপ্লব বহুদিন মনে রাখার মতো ঘটনা হয়ে থাকবে। তাঁকে কেবল প্রচ্ছদপটের শিল্পী হিসেবে দেখলে খাটো করে দেখা হবে। সম্পূর্ণ কাইয়ুম চৌধুরীর সন্ধান পেতে তাঁর চিত্রকর্মের একটি সামগ্রিক প্রদর্শনী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। শোকসভা সঞ্চালন করেন শিল্পী মামুন কায়সার। এছাড়া শোকসভার পাশাপাশি বাংলা একাডেমি প্রকাশিত কাইয়ুম চৌধুরীর প্রচ্ছদকৃত চার শতাধিক বই, পোস্টার ও আনুষঙ্গিক শিল্পকর্মের এক প্রদর্শনীও শুরু হয় বৃহস্পতিবার। প্রদর্শনীটি আগামী ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
×