ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দূর বনের পাখিরা মন বোঝে, পাশে থাকে প্রিয়জনের মতো

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

দূর বনের পাখিরা মন বোঝে, পাশে থাকে প্রিয়জনের মতো

মোরসালিন মিজান ॥ সবই যদি ভুলে যাবি রে পাখি/কেন তবে হায় দিলি রে আশা/উইড়া যদি যাবি ওরে ও পাখি/কেন বাইন্ধা ছিলি বুকেতে বাসা...। আসলেই শুধু বনের হয় না পাখিরা। মানুষের বুকেও বাসা বাঁধে। পরম যতœ আদরে বড় হয়। আবেগ ভালবাসার অংশ হয়ে ওঠে। হয়ত তাই পোষা পাখিগুলো একটু অন্যরকম। ছুঁতে গেলে উড়ে দূরে চলে যায় না। হাতের উপর প্রিয়জনের স্পর্শ হয়। নিশ্চিন্তে বসে থাকে। এমনকি কথা বলে। সব মিলিয়ে অদ্ভুত। এভিকালচারাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ অদ্ভুত এই পাখিদের একত্রিত করেছিল। জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজন করেছিল প্রদর্শনীর। শিরোনাম- বিদেশী পোষা পাখি প্রদর্শনী। শিরোনামই বলে দেয়, ভিনদেশ থেকে আসা পাখি। তবে আদরের কোন দেশ বিদেশ হয় না। তাই চমৎকার পোষ মেনেছে। প্রদর্শনী ঘুরে সেটি অনুমান করা যায়। প্রদর্শনীতে ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির পাখি। ম্যাকাও, কাকাতুয়া, লাভবার্ড, বাজরিগার, রোজেলা, ফিঞ্চ, জাভা, প্যারট, লরিÑ কত কত নাম! বেশি চোখে পড়ল ম্যাকাও। পাখিগুলো আকারে বেশ বড়। ততধিক দীর্ঘ লেজ। গায়ের রঙও একটি নয়; হরেক। তবে নড়ে চড়ে ওঠতে হয় এ তথ্য জেনে যে, এরা ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে! সে রেকর্ডও নাকি আছে। আর মোটামুটি আয়ু ৮০ থেকে ৯০ বছর। ম্যাকাউয়ের আবার নানা জাত পাত। ব্লু এ্যান্ড গোল্ড ম্যাকাউ নামের একটি পাখির কাছে গিয়ে দেখা গেল, এর শরীরের উপরের অংশ নীল। বুকে সোনালী রঙ মাখা। একইভাবে গ্রীন উইংড ম্যাকাউ পাখির সবুজ রঙ ডানা। মাথার উপরের অংশটুকু লাল। বুকের নিচ থেকে লেজ পর্যন্ত একই রঙ। পাখিটির আরেক নাম তাই রেড এ্যান্ড গ্রীন ম্যাকাউ। ব্লু এ্যান্ড গোল্ড নামেও ম্যাকাউ আছে। একই পাখি ব্লু এ্যান্ড ইয়োলো ম্যাকাউ নামে পরিচিত। একটু নিচ থেকে দেখলে একে ‘হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ’ মনে হয়। গলা থেকে লেজ অবদি হলুদ রঙ। বিশাল ডানা মাঝে মধ্যেই ঝাপটা দিচ্ছিল। তখন লুকিয়ে রাখা হলুদটুকুও বেরিয়ে আসে। তবে আয়োজকরা জানান, ম্যাকাউ ওড়ে না। ওড়ে না মানে, ওড়ে অভ্যস্ত নয়। পায়ে হাঁটে। মানুষের খুব কাছাকাছি থাকে। কত কাছাকাছি, সেটিও দেখা গেল প্রদর্শনীতে। এক তরুণ নিজের ঠোঁটে কী একটা দানা গুজেছিলেন। পাখির সামনে গিয়ে ইঙ্গিত করেছিলেনÑ নাও। ওমনি সাড়া মিলল। পাখিটি নিজের লম্বা আর বাঁকা ঠোঁট দিয়ে দিব্যি খাবার সংগ্রহ করল। দেখে অনেকেরই চোখ ছানাবড়া। জানা গেল, ম্যাকাউ বরাবরই এমন বন্ধুসুলভ। আদর স্নেহ ধরতে পারে। কথাও বলে ম্যাকাও, যা শেখানো হয়, নিজের মতো করে আওড়াতে পারে। প্রদর্শনীতে আসা আফ্রিকান গ্রে প্যারট দেখতে অত সুন্দর নয়। তবে আছে বিরাট এক গুণ। জানা গেল, এই পাখি ভীষণ বুদ্ধি রাখে। কেউ প্রশ্ন করলে প্রশ্নটাই আওড়ায় না; উত্তর দেয়। নিজের নাম বলে। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাও নাকি দেখে বলে দিতে পারে! এ জন্য শুধু শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হয়। পোষা পাখি প্রদর্শনীর বিশেষ আকর্ষণ লাভ বার্ড। নামের কারণেই এদের নিয়ে খুব কৌতূহল। পাখিগুলো ছোট দেখতে। অনেক রঙ। বলা বাহুল্য, প্রেমটার খুব মূল্য দেয়। যেসব খাঁচায় এদের রাখা হয়েছিল, অনেক জায়গা। অথচ ভালবাসাবাসির কারণেই হয়ত দু’জন গা ঘেঁষে এক কোনে আলাদা হয়ে বসেছিল। কী যে মিষ্টি দেখতে জুটি! ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দেখতে আরও বেশি কিছু পাখি আনা হয়েছিল প্রদর্শনীতে। একটু কাছে গিয়ে দেখলে এদের রূপে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। বাংলাদেশের মুরগের মতো দেখতে কিছু পাখি ছিল। নাম সিলভার ফিস্যান্ট। পুরুষ পাখিটি আশ্চর্য সুন্দর। গায়ের উপরিভাগের রঙ রূপালী। তার উপর কালো রঙের কারুকাজ। নিচের অংশ পুরোটা কালো। সাদা দীর্ঘ লেজ। একই প্রজাতির নারী পাখিটিও পাশেই বসেছিল। মুরগির মতো দেখতে। একে অন্যের খুব আপন হয়ে আছে শুরু থেকেই। কাকাতুয়াও ছিল বেশ কয়েকটি। মাথার জুটি দুলিয়ে উচ্চকণ্ঠে কাকে যেন ডাকছিল। এভাবে হরেক নাম আর জাত-পাতের পাখি। দর্শনার্থীরাও এসেছিলেন দল বেঁধে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তো মেলা বসেছিল। বাবা-মায়ের কোলে চড়ে এসেছে অনেকেই। সবাই পাখি দেখে মুগ্ধ। প্রিয়ন্তী নামের এক শিশু এই খাঁচা ওই খাঁচার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তার হাতে বাবার মোবাইল ফোন। পছন্দের পাখির ছবি তুলছিল সে। খুব পছন্দ? জানতে চাইলে মাথা নাড়ল। বলল, হ্যাঁ, সব পাখিই সুন্দর। তাই ছবি তুলে রাখছি। বাসায় গিয়ে দেখব। বন্ধুদেরও দেখাব। জোহানও এসেছিল বাবার সঙ্গে। তারা মতিঝিল থেকে এসেছিল। বলল, বাবা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এখানে অনেক পাখি। বড় বড়। আমি সব দেখব। এমন সরল উচ্চারণই তুলে ধরে ওদের আনন্দকে। আয়োজকদের পক্ষে রাইসুল হাসান অন্তু জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পোষা পাখিগুলো নিয়ে এই প্রদর্শনী। আমরা বছরের পর বছর ধরে এদের পরম মমতায় লালন পালন করে আসছি। আর তারপর সাধারণ মানুষ ও পাখিপ্রেমীদের দেখার সুযোগ করে দিতে আয়োজন করেছি প্রদর্শনীর। দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী শুক্রবার শেষ হয়েছে।
×