ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুরে দিগন্তজুড়ে সরষে আবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৪

জামালপুরে দিগন্তজুড়ে সরষে আবাদ

নিজস্ব সংবদদাতা, জামালপুর, ১৯ ডিসেম্বর ॥ হেমন্তের শেষে শীতের প্রারম্ভে দুই ঋতুর মাঝ বরাবর বৈচিত্র্যময় স্নিগ্ধ সকালে শিশির ভেজা হলুদবর্ণের সরষে ফুলের ডগায় ফোঁটা ফোঁটা জল। হলুদ সরষে ফুলের পাপড়ির গায়ে প্রজাপতিরা পাখনা মেলে বসে। মাঠের চারদিকে শুধু হলুদ আর হলুদ। হলুদের এমন সমারোহে মধু সংগ্রহে মৌমাছির গুন গুন গান আর মৌ-মৌ গন্ধে যে কোন প্রকৃতি প্রেমিকের মনকে মুহূর্তের মধ্যে আন্দোলিত করে। ঋতুচক্রের এমন নতুন রূপকে কবি সাহিত্যিকরা নানাভাবে বর্ণনা করেন। জামালপুরের প্রত্যন্ত মাঠে এখন হলুদ রঙের ছড়াছড়ি। দিগন্তজুড়ে যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। জেলার মাঠ ঘাট বর্তমানে সরষে ফুলের সমারোহ। সরষে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ২২ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে। আর ২৪ হাজার ৪৯৭ মেট্রিক টন ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারে সরষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আর আবাদ দিন দিন বাড়ছেই। ইতোমধ্যে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সরষের ক্ষেত। মাঠের পর মাঠজুড়ে সরষে ফুলের হলদে আভা রাঙিয়ে দিয়েছে নয়নাভিরাম দিগন্ত। এ যেন হলুদ শাড়ি পরা তরুণীর সাজে সজ্জিত মাঠ। সরষে ক্ষেত থেকে ভেসে আসা হলুদ ফুলের কাঁচা মিষ্টি গন্ধে চারদিকে মাতোয়ারা। ফুলের ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত যেন প্রকৃতিকে আরও অপরূপ করে তুলেছে। দিগন্তজুড়ে ফুলে ভরা সরষে মাঠ দেখে কৃষককের মুখে হাসির ঝিলিক। কৃষকরা জানায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে সরষে বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এক সময় ভোজ্যতেলরূপে সরষে তেলের ব্যবহার ছিল ঘরে ঘরে। বিশেষ করে সরিষার খৈল গবাদী পশুর অন্যতম খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি সার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু দিনে দিনে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যাপক সয়াবিন ও পামওয়েল আমদানি হওয়ায় দেশে সরষের চাষ অনেকাংশেই কমে গেছে। গত শতকের ষাটের দশকের শুরু থেকে এদেশে সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি শুরু হয়। দামে সস্তা থাকায় খুব দ্রুত সয়াবিন ও পাম তেলের ব্যবহার বিস্তৃতি লাভ করে এবং পিছিয়ে পড়তে থাকে দেশীয় সরষে তেল। কিন্তু কয়েক বছরে আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। এর ফলে বাজারে সরিষার চাহিদা এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা আবারও সরষে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষিকর্মীদের মতে, শুষ্ক মৌসুমে ইরি-বোরো ধান চাষ বেড়ে যাওয়ায় দেশে রবি ফসলের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি কৃষকরা উপলব্ধি করছেন বোরো জমি ফেলে না রেখে আগাম রবি ফসল ফলান যায়। এসব জমিতে সরষে, পেঁয়াজ, মসুর, মটর, ডাল চাষ করা যায়। বিশেষ করে কার্তিক মাসে বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির আগাছা পরিষ্কার করে কোন হালচাষ ছাড়াই নরম জমিতে সরষে বপন করা যায়। গত বোরো ও আমনের বাম্পার ফলনের পর এ বছর তৈলজীব হিসেবে সরষের বাম্পার ফলন হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
×