ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ছিলেন জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ তাঁর সংস্পর্শে শিক্ষার্থীদের জানার ইচ্ছা বেড়ে যেত। তাঁর সান্নিধ্যে এসে এতকিছু জানা যেত যে একটি পুরো লাইব্রেরির বই পড়েও তা জানা সম্ভব হতো না। এ যুগের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখান কিভাবে পরীক্ষায় পাস করে বেশি নম্বর পেতে হবে, তিনি শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিতেন। তাঁর জানাশোনার পরিধি ছিল সুবিশাল। সময় পেলেই বই পড়তেন। তাঁর মধ্যে তীব্র সমাজ সচেতনতা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামাজিক জাগরণের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। তাঁর খ্যাতি দেশের সীমারেখা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। দেশ-বিদেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী-গবেষক ও জ্ঞান পিপাসু ব্যক্তি তাঁর কাছে আসতেন। তিনি ছিলেন যেন এক জীবন্ত এনসাইক্লোপডিয়া। শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মৃতি বক্তৃতা অনুষ্ঠানে দেশের বিরল প্রতিভাবান এই অধ্যাপক সম্পর্কে বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। এতে ‘অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ। স্মৃতি বক্তা অধ্যাপক সলিমুল্লাহ বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম যুগ রোমন্থন করেছেন কিন্তু এই অধ্যায়টি তাঁকে পেছনে টেনে ধরেনি। এটি তাঁর বুদ্ধির পরিপক্বতাই প্রমাণ করে। বাঙালী মুসলমান সমাজকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সাবালক করার পেছনে তাঁর যে অবদান, এর সঙ্গে অন্যকারও তুলনা হতে পারে না। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। মূল প্রবন্ধে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের বিভিন্ন ঘটনা ও কার্যক্রম বিভিন্ন উৎস থেকে তুলে ধরেন। বিভিন্ন লেখক যারা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে লিখে গেছেন, তাদের থেকে উদ্ধৃতি দেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে এসে আমি অনন্ত স্নেহ লাভ করেছি। তিনি একই সঙ্গে শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। গবেষণার শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ছিলেন দিকনির্দেশনার এক অসামান্য প্রতিষ্ঠান। তাঁর সংস্পর্শে আসলেই সাধারণ অসাধারণ হয়ে যেত। সভাপতির বক্তব্যে এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সংস্পর্শে এসে আমরা এত বিষয়ে জানার সুযোগ পেয়েছি যে একটি লাইব্রেরির সব বই পড়েও তা জানা সম্ভব নয়। তিনি পড়তে খুবই ভালবাসতেন, সময় পেলেই পড়তেন। কেউ কোন দিকনির্দেশনার জন্য গেলে সংশ্লিষ্ট তিন-চারটা বইয়ের নাম বলে দিতেন। পরে আরও সহজ করে জানতে চাওয়া হলে তিনি একটি বইয়ের নাম বলতেন। তিনি আমাদের ভেতরে বিভিন্ন বিষয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামাজিক জাগরণের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এ বছর অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জন্মের শত বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এ স্মৃতি বক্তৃতার আয়োজন করে।
×