ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাচ্্ কোচ ক্রুইফের ফের সম্পৃক্ততা কতটা কার্যকর হবে!;###;ডাচ্ কোচ ক্রুইফের ফের সম্পৃক্ততা কতটা কার্যকর হবে!

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে সুবিন্যস্ত দল গঠনের লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২১ ডিসেম্বর ২০১৪

বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলে সুবিন্যস্ত দল গঠনের লক্ষ্য

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশটির জাতীয় ফুটবল দল তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ১৯৭৩ সালের ২৬ জুলাই। থাইল্যান্ডের সঙ্গে সেই প্রীতি ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে। তবে বাংলাদেশের সেই ম্যাচে কোন কোচ ছিলেন না। কোচের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ১৯৭৫ সালে প্রথম কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় আব্দুর রহিমকে। ১৯৭৫ থেকে ২০১৪। রহিম থেকে টিটু। এই ৩৯ বছরে জাতীয় ফুটবল দলের ডাগআউটে দ্রোণাচার্য্যরে ভূমিকায় দেখা গেছে ২৪ জনকে। যাদের মধ্যে বাংলাদেশী ৭ এবং বিদেশী ১৭ জন। ৭ বাংলাদেশীর মধ্যে একমাত্র আব্দুর রহিম, কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং সাইফুল বারী টিটুই একাধিকবার দায়িত্বে ছিলেন। রহিম ২ বার, সালাউদ্দিন ও টিটু ৩ বার করে। অথচ বাকি ১৭ বিদেশীর একজনকেও দ্বিতীয় দফায় কোচের ভূমিকায় ডাকেনি বাফুফে। তবে সম্ভবত এবার তার ব্যত্যয় হতে যাচ্ছে। ন্যাড়া নাকি একবারই বেলতলায় যায়। তবে বাফুফের বেলায় সংখ্যাটি সম্ভবত ‘দুই’ হতে যাচ্ছে। যে ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের সঙ্গে তিক্ততার মধ্য দিয়ে সম্পর্কচ্ছেদ করেছিল বাফুফে, সেই ক্রুইফেরই শরণাপন্ন হতে যাচ্ছে দেশীয় ফুটবলের এই সর্বোচ্চ সংস্থাটি। শুক্রবার এমনটাই জানান বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। পাশাপাশি জাপানের যুব দলের বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে নিজেদের সীমাবদ্ধতাকেও দায়ী করেন তিনি। গত ১৮ অক্টোবর ক্রুইফের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিল বাফুফে। অথচ দুই মাসের মধ্যেই সেই ক্রুইফেরই দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে বাফুফে। তবে এবার দীর্ঘমেয়াদী নয় বরং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপকে সামনে রেখে ক্রুইফকে এক মাসের জন্য দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবছে বাফুফে। সেই সঙ্গে কোন রকম ঝামেলা না থাকলে হয়ত এই ডাচ্ কোচকেই দেয়া হতে পারে জাতীয় দলের দায়িত্বÑ এমনটাই জানান সালাউদ্দিন, যিনি নিজেও একসময় জাতীয় ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব করেছেন তিন দফায় (১৯৮৫, ১৯৮৮ ও ১৯৯৩ সালে)। প্রশ্ন উঠেছেÑ যেখানে অতীত ইতিহাস অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোন বিদেশী কোচই মধুরভাবে বিদায় নিতে পারেননি, সর্বশেষ ক্রুইফেরও একই পরিণতি ঘটেছে, সেখানে আবার তাকে ফিরিয়ে আনার কথা কেনই বা ভাবছে বাফুফে? এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘সে (ক্রুইফ যখন নিজেই আগ্রহী, তাই আমরা তাকে এক মাসের জন্য দায়িত্ব দিয়ে দেখতে পারি। যদি তার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখি, তখন তা আরও বাড়ানো যাবে।’ গত ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফিফা প্রীতি ম্যাচে জাপানের যুবাদের কাছে ০-৩ গোলে হারের পরও জাতীয় দলের প্রশংসাই করেছেন সালাউদ্দিন। পাশাপাশি জানান নিজেদের বাধ্যবাধকতার বিষয়টিও, ‘আমাদের কোচিং স্টাফ এখনও তত দক্ষ নয়, তাই হয়ত এমনটি হয়েছে। তবে খেলতে খেলতেই আমাদের ফুটবলের পরিপক্কতা চলে আসবে। আমরা আগামীর খেলোয়াড়দের তৈরি করার জন্য কাজ করছি, এ ব্যাপারে পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছি।’ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে পঞ্চম বিদেশী দল হিসেবে পাকিস্তানকে আনার পরিকল্পনা ছিল বাফুফের। দেশটিকে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বাফুফেকে। সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি আমাকে ফোন করেছিলেন। ওই সময় তাদের একটি প্রীতি ম্যাচ আছে। তাই আসতে পারবে না।’ ৬ জাতির এ টুর্নামেন্টের ৫ বিদেশী দলের মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বাহরাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। পঞ্চম দেশটি দক্ষিণ এশিয়া থেকেই আনতে চাচ্ছে বাফুফে। পাকিস্তান অপারগতা প্রকাশ করার পর এখন মালদ্বীপকে আনার চেষ্টা করছে বাফুফে। ‘আমি মালদ্বীপের সঙ্গে কথা বলেছি। ২/১ দিনের মধ্যেই জানাবে তারা’Ñ বলেন বাফুফে সভাপতি। আগামী ১৬-২৭ জানুয়ারি ঢাকা এবং সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের তৃতীয় আসর। যদিও এই আসরটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল অক্টোবরেই! বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বাফুফের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে চ্যানেল নাইন। এ নিয়ে তারা বাফুফের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেছে। ইতোমধ্যেই এক কোটি টাকা অগ্রীম নগদ প্রদান করেছে বাফুফেকে। প্রতিবছর বাফুফে পাবে ৬ কোটি টাকা করে। চ্যানেল নাইন বিশ্বের ৫০ দেশে সরাসরি এ আসরটির খেলা দেখাতে আশাবাদী। জাতীয় ও অলিম্পিক দলগুলো খেলবে এ টুর্নামন্টে। ভবিষ্যতে বিদেশেও আয়োজিত হতে পারে এই টুর্নামেন্ট। চুক্তি অনুযায়ী মনে হচ্ছে বাফুফের এতে লাভই হবে। টিকেটমানি থেকে যে অর্থ আয় হবে, তা পুরোটাই পাবে বাফুফে। প্রচারের যাবতীয় দায়িত্ব এবং লাভ-লোকসান চ্যানেল নাইনের। ৬ দলের সব খরচ বহন করবে বাফুফে। টুর্নামেন্ট থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ফুটবলের দৈন্যদশা দূর করার স্বপ্ন দেখছে দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক এ প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি সিলেট, যশোর ও রাজশাহীতে বাংলাদেশ জাতীয় দল তিনটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলে। ম্যাচগুলো দেখতে প্রতিটি ভেন্যুতেই দর্শকদের অভাবনীয় ঢল নামে। সালাউদ্দিন আশা করছেন সিলেটে খেলা হলে দর্শকদের সেই বিপুল আগ্রহ এবারও পরিলক্ষিত হবে। তাঁর আগ্রহেই এবার বঙ্গবন্ধু কাপে বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের খেলাগুলো হবে সিলেটে। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, ক্রুইফ নিজেই গত ১০/১৫ দিন ধরে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং বাফুফের সহ-সভাপতি এবং ন্যাশনাল টিমস্ কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচের পদে আবারও ফেরার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। তবে সেটা শুধু জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের জন্য। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে ক্রুইফকে এক বা দেড় মাসের জন্য কোচ হিসেবে আনা যায় কি না, এ ব্যাপারে বাফুফে ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জাতীয় ফুটবল দলের ১৭তম বিদেশী কোচ ক্রুইফ। ক্রুইফের অধীনে জাতীয় ফুটবল দল ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ এবং এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসে অংশ নেয়। কোনটিতেই তাঁর দল আশাতীত রেজাল্ট করতে পারেনি। দায়িত্ব নিয়ে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০-এর মধ্যে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্রুইফ। অথচ ক্রুইফ অক্টোবরে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৮১! ক্রুইফকে বরখাস্তের বিষয়টি চূড়ান্ত হয় গত অক্টোবরেই, বাফুফের ন্যাশনাল টিম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায়। যদিও এর আড়াই মাস আগেই বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত ৯৮ শতাংশ সদস্যই প্রস্তাব করেছিলেন দুই ডাচ্ কোচকে বাদ দিতে। কিন্তু সালাউদ্দিন কোচদের আরেকটু সময় দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ তখন সামনেই ছিল এশিয়ান গেমস, ফিফা প্রীতি ম্যাচ। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল ক্রুইফদের মূল এ্যাসাইনমেন্ট, সেখানে সপ্তম হয় বাংলাদেশ। ব্যর্থ হন ক্রুইফ। তারপরও সালাউদ্দিন তাদের রেখেছেন ভাল কিছু পেতে। তাদের চাহিদা মোতাবেক ফিজিও, গোলকিপিং কোচ- সব দেন। ফলাফল শূন্য। তবে এশিয়ান গেমসে অনেক ভাল ফুটবল খেলে এবার বাংলাদেশ। সালাউদ্দিনও প্রীতি ছিলেন। কিন্তু ক্রুইফের ‘সিনসিয়াটি’র অভাবের কারণেই বাধ্য হন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত আবারও ক্রুইফের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাঁকে আবারও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দ্রোণাচার্য্য বানিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ফিরিয়ে আনতে রাজি হয় কি না বাফুফে। আর রাজি হলে ক্রুইফের অধীনে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কেমন রেজাল্ট করে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
×