ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ-অসম নিয়ে ইসলামিক স্টেট গঠনের পরিকল্পনা

জেএমবি-উলফা গোপন বৈঠকে হিটলিস্ট তৈরি

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

জেএমবি-উলফা গোপন বৈঠকে হিটলিস্ট তৈরি

শংকর কুমার দে ॥ নিষিদ্ধ ঘোষিত জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সঙ্গে অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ দুই নেতার অস্ত্র বিনিময় নিয়ে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জেএমবির মধ্যে গোপন সমঝোতায় ড্রোন হামলার মাধ্যমে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অসমের ৫০ জন প্রগতিশীল নেতা-নেত্রীকে হিট লিস্টের তালিকা তৈরি করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গত জুলাই মাসে হাইসিকিউরিটির মধ্যে একটি কারাগারে বন্দী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিনের সঙ্গে জেএমবির প্রধান সাইদুর রহমানের এক গোপন বৈঠকে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমকে নিয়ে ইসলামিক স্টেট গঠনের বিষয়ে সমঝোতা হয়। বাংলাদেশে সেনা অভুত্থানের পরিকল্পনায় অভিযুক্ত পলাতক জঙ্গি প্রশিক্ষক মেজর জিয়াউল হকের নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় আবারও অভ্যুত্থানের গোপন ষড়যন্ত্র করা হয়। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অসমে গ্রেফতারকৃত প্রায় ডজনখানেক জঙ্গী ও নারী জঙ্গীর দেয়া জবানবন্দী ও জঙ্গী ঘাঁটিতে পাওয়া নথিপত্র ঘেঁটে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র এ খবর দিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়ানো মেজর জিয়াউল হকের নাম পাওয়া গেছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের জবানবন্দীতে। পলাতক অবস্থায় মেজর জিয়া চাকরিচ্যুত, পলাতক সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের নিয়ে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অসমের জঙ্গীদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মেজর জিয়াই। তার সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জেএমবি প্রধানের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এমনকি গত জুলাই মাসে ঢাকার হাইসিকিউরিটিতে থাকা কারাগারে বন্দী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিনের মধ্যে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গোপন বৈঠকে তারা বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অসমকে নিয়ে ইসলামিক স্টেট গঠনের বিষয়ে সমঝোতা হয়। কারাগারে বন্দী দুই জঙ্গী নেতার বৈঠকের পর জঙ্গীরা আবারও তৎপর হয়ে ওঠেছে বলে তথ্য ও প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। অসম পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স (এসটিএফ)-এর এডিজি রামমোহন সিংহ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে সম্প্রতি উলফার নেতা পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ দুই নেতা জামা’আতুল মুজাহিদীনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। অসমে নাশকতা ঘটানোর ক্ষেত্রে জামাত ও উলফার হাত মেলানোর বিষয়টিতে পুলিশ উদ্বিগ্ন। দু’পক্ষের মধ্যে অস্ত্র বিনিময়ের ব্যাপারে গোপন চুক্তি হয়েছে। বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শাহনুর ডাক্তার, শহিকুল ইসলাম ওরফে আবদুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম-এই তিনজনের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও জবানবন্দীর ভিত্তিতে অসম থেকে কলকাতার আদালতে হাজির করার জন্য নেয়া হচ্ছে। নুরজামাল হক নামে আরেক সন্দেহভাজন জিহাদীকে ১৪ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। ভুটান সরকারের সহযোগিতায় সীমান্ত ঘেঁষা সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে ইউনিফায়েড কমান্ডের অধীনে বিশেষ কমান্ডো অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন এসটিএফ কর্মকর্তা। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণে নিহত জেএমবির জঙ্গী শাকিল আহম্মেদ ওরফে শাকিল গাজীর স্ত্রী প্রত্যক্ষদর্শী নারী জঙ্গী রাজিয়া বিবি ও জঙ্গী হাশেম মোল্লাকে কারাগার থেকে আবারও জেরা করার জন্য তাদের হেফাজতে নিচ্ছেন। জঙ্গী গোষ্ঠীর আরও কয়েক জন সদস্য সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে যা যাচাই-বাছাই করার জন্য রাজিয়া ও হাসেমকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দারা। শাকিল আহমেদের স্ত্রী, নদিয়ার করিমপুরের বাসিন্দা এই রাজিয়া ওরফে রুমি, আর হাসেম মোল্লাকে ঘটনার দু’দিন পর পূর্বস্থলী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ঢাকার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১৬ ডিসেম্বর যাত্রাবাড়ী থেকে বাংলাদেশের এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক দুই জঙ্গী তানজিম ও গোলাম মাওলাকে ড্রোনের প্লাস্টিক মডেলসহ গ্রেফতার করা গেলেও তাদের অপর আরও ৪ সহযোগী পালিয়ে গেছে।
×