ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রেলের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক ॥ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি মিলেছে এডিবি ও ইআইবি থেকে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২২ ডিসেম্বর ২০১৪

রেলের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক ॥ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি মিলেছে এডিবি ও ইআইবি থেকে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আঞ্চলিক রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনে বড় অঙ্কের সহায়তা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি)। এর মাধ্যমে আখাউড়া-লাকসাম নতুন ডবল রেললাইন হচ্ছে। সেই সঙ্গে বর্তমানে যে লাইন রয়েছে সেটিরও মানোন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ দেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা (৫০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। সহযোগী অর্থায়নকারী হিসেবে ইউআইবি বিনিয়োগ করছে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা (১৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। বাকি টাকা সরকারী তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের আখাউড়া-লাকসাম সেকশনে নতুন ৭২ কিলোমিটার দ্বৈত রেললাইন নির্মাণ, বিদ্যমান ৭২ কিমি পুরান রেললাইন পুনর্বাসন এবং কম্পিউটারবেজড সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে সেকশনাল ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিসহ রেলপথের মান উন্নয়ন হবে। এতে যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন সহজ হবে। সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেকশনটি ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডরের একটি বড় অংশ। এ উপ-অঞ্চলে পরিবহন এবং ট্রানশিপমেন্টের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডর দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে মাল পরিবহনের সুবিধা প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে এদেশে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন, সাউথ এশিয়ান এ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন এবং দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বৃহৎ ট্রেড করিডর অবস্থিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডর যাত্রী ও মাল পরিবহনের চাহিদা মেটাতে অবিচ্ছিন্ন ডবল লাইন একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। টঙ্গী-ভৈরব বাজার এবং লাকসাম-চিনকি আস্তানা সেকশনে ডবললাইন নির্মাণের কাজ চলছে, যা ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। এসব কাজ শেষ হলে আখাউড়া-লাকসাম সেকশন বাকি থাকবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ডবল লাইন নির্মিত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডর সম্পূর্ণ ডবল লাইনে উন্নীত হবে। আখাউড়া-লাকসাম সেকশনে বিদ্যমান লাইনের পাশে একটি নতুন মিটারগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে। উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এ ঋণ নিয়ে এডিবির সঙ্গে মিনিটস অব নেগোশিয়েশন স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হলেই চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। তিনি জানান, সংস্থাটির মোট ঋণের মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এডিএফ) থেকে একেবারেই সহজশর্তে পাওয়া যাবে প্রায় ৮৪০ কোটি টাকা (১০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আর অর্ডিনারি রিসোর্চ ফান্ড (ওসিআর) থেকে কিছু বেশি সুদে পাওয়া যাবে প্রায় ৩ হাজার ২শ’ কোটি টাকা (৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। সহজশর্তের এ ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। ইউআইবির ১৭ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ প্রাপ্তির বিষয়ে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী তিন বছরে (২০১৫-১৭ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে সহজশর্তে দশ হাজার এবং তুলনামূলক কিছুটা কঠিন শর্তে দশ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত করতে এডিবি নতুন কৌশল নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়েছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং এডিবির বাংলাদেশ অফিস সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব সাইফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা করে ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। এর মধ্যে ওসিআর এবং এডিএফ ঋণ থাকবে ফিফটি ফিফটি।
×