ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

এলএনজি গ্যাস সরবরাহে পাইপলাইন হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহের জন্য মহেশখালী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্যাসের প্রবাহ বৃদ্ধি, বিভিন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র, সার কারখানা এবং শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করার জন্যই ৯১ কিলোমিটার এ লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৮৯ কোটি ১৪ লাখ এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) তহবিল থেকে ৩৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে জিটিসিএল। অন্যদিকে বিবিয়ানা-ধনুয়া গ্যাস ট্যান্সমিশন পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্পটি দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ বিষয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, এমটিবিএফ (মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো) এর আওতায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের অনুকূলে প্রস্তাবিত বরাদ্দ জ্বালানি বিভাগের এমটিবিএফের আওতায় ব্যবস্থা করা হবে মর্মে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে। তাছাড়া গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাস চাহিদা মেটানোর জন্য বিবিয়ানা-ধনুয়া প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া সরকারী খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি ২০০৮ এর ১৪ দশমিক ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যেসব প্রকল্পে বিশ একরের অধিক জমি অধিগ্রহণ বা ব্যবহারের বিষয় থাকবে সেসব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্বিশেষে তা বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করতে হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ২৭৭ একর জমি অধিগ্রহণের সংস্থান রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনযোগ্য। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের গ্যাসের ঘাটতি হ্রাস এবং বিভিন্ন বিদ্যুত কেন্দ্রে, সার কারখানা ও শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকার তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমদানিকৃত এ এলএনজি গ্যাসে রূপান্তরিত করার পর দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘটফুট হারে সরবরাহের লক্ষ্যে পেট্রোবাংলা কক্সবাজার জেলার মহেশখালী দ্বীপের কাছে গভীর সমুদ্রে এলএনজি টার্মিনাল তথা ফ্লটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উল্লিখিত ৫০০ ঘনফুট গ্যাস চট্টগ্রাম এলাকায় সরবরাহের জন্য মহেশখালী হতে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৯১ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য গাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সিস্টেমে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটির আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৩০ ইঞ্চিব্যাসের ৯১ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন, পাঁচটি নদীর তলদেশে হরিজোনাল ডাইরেক্টশনাল ড্রিলিং (এইচডিডি) পদ্ধতিতে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের দুই কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে একটি সিটি গ্যাস স্টেশন (সিজিএস) এবং কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি কাস্টুডে ট্রান্সফার মিটারিং স্টেশন (সিটিএমএস) স্থাপন, সিপি সিস্টেম স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম স্থাপন এবং ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য পূর্ত কাজ করা হবে। অপরদিকে কনস্ট্রাকশন অব বিবিয়ানা-ধনুয়া গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্পটি দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধন করে ব্যয় কমানো হচ্ছে ১০২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পটির বর্তমান ব্যয় এক হাজার ৮১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৭০৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের পূর্বাঞ্চলের গ্যাস ফিল্ডগুলো হতে উৎপাদিত গ্যাস পেট্রোবাংলার আওতাধীন গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে জাতীয় গ্যস গ্রিডে সঞ্চালিত হচ্ছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে শেভরন লিমিটেডের পিএসসি চুক্তির আওতায় বিবিয়ানা এবং জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র হতে উৎপাদিত অতিরিক্ত ৬৪০ ঘরফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে বিদ্যুত কেন্দ্র, শিল্প কারখানা এবং অন্যান্য গ্রাহকের চাহিদা মোটানোর জন্য বিবিয়ানা-দনুয়া ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩৭ কিলামিটার গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ লাইনের মাধ্যমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্যাস বৃহত্তর ঢাকা জেলা এবং দেশের পঞ্চিমাঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
×