ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাঙ্গুনিয়া শেখ রাসেল এ্যাভিয়ারি ইকোপার্ক

উঁচু নিচু পাহাড়ী পথ কৃত্রিম লেক, অপরূপ সৌন্দর্য

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

উঁচু নিচু পাহাড়ী পথ কৃত্রিম লেক, অপরূপ সৌন্দর্য

মাকসুদ আহমদ, রাঙ্গুনিয়া থেকে ফিরে পাহাড় আর বনাঞ্চলে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের ‘বন বাগান’। সাড়ে ১৩শ’ হেক্টরজুড়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অঞ্চলে পরিণত হওয়া এই ভূমিতে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতেই এ লেককে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলবাগান আর জীব বৈচিত্র্যের সমারোহ। এ বনাঞ্চলের প্রকৃতিকে ঘিরে উঁচু-নিচু পাহাড়ী পথ ধরে প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কও তৈরি হয়েছে পর্যটকদের পথ চলায়। উঁচুনিচু হাঁটা এক সময়কার মেঠো পথ শেখ রাসেল এ্যাভিয়ারি এ্যান্ড ইকো পার্ক হওয়ার কারণে তা ইট সলিং রাস্তায় পরিণত হয়েছে। ফলে দাবড়ে বেড়াচ্ছে পর্যটকরা। দিগি¦দিক হয়ে পর্যটকরা ছুটে চলেছেন দুপুরের খররোদে শেষের ঠিকানা খুঁজতে। বন আর পাহাড় ঘেরা এ বনভূমির সম্মুখভাগে লেক না থাকায় অনেকটা পর্যটক আকর্ষণে ব্যত্যয় ঘটছিল। ফলে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। কিন্তু পাহাড়ী পথ বেড়ে নিচে নামলেই অনতি দূরে রয়েছে প্রাকৃতিক হ্রদ। শেষ পর্যন্ত এ হ্রদটিও চলে আসবে পর্যটকদের আওতায়। গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। গোল ঘরের ছাউনিতে গড়ে তোলা এসব স্পটে পর্যটকরা তাদের মনের আনন্দ সারতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জম্পেস আড্ডাও চালাচ্ছেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে যে কোন বাহনে কাপ্তাই সড়কে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিলেই দক্ষিণ বন বিভাগের এই পার্ক। প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে চোখে পড়বে ফুল বাগানের পাশ ধরে বয়ে গেছে কৃত্রিম লেক। সিমেন্টের তৈরি বক্স পাথরে লেকের চারধার আবদ্ধ করা হয়েছে। লেকের মাঝখানে রয়েছে বৃত্তাকার একটি স্পট। যেখানে পর্যটকরা অনাবিল আনন্দে ছবি তোলাসহ সিঁড়ি বেয়ে লেকে নেমে পানি ধরার সুযোগও করা হয়েছে। লেকের ডানদিক ধরে সামনে গেলেই রোপওয়ের বেইস স্টেশন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ বেইস স্টেশন থেকে ১২টি ক্যাবল কার প্রতিটিতে ৬ জন করে একের পর এক যাত্রা শুরু করে আবার ফিরে আসে। কয়েকটি পাহাড় পেরিয়ে ভূমি থেকে প্রায় ৫শ’ ফুট উচ্চতায় পথ চলা রোপওয়ে দিয়েই পর্যটকরা অবলোকন করতে পারেন প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য। প্রায় ৭/৮টি টাওয়ার পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা শেষ প্রান্তের বেইস স্টেশনে পৌঁছাতে পারে পর্যটকরা। কিন্তু সুদৃঢ় মনোবল আর সাহসিকতায় পর্যটকরা কেবল কারে পরিভ্রমণ করছেন। তবে শিশুদের আকর্ষণ অনেক বেশি। সৌন্দর্যম-িত এসব কেবল কার চতুর্দিক থেকে স্বচ্ছতায় ঘেরা। ফলে কেবল কারের ভেতর থেকেই শুধু চারদিক নয়, উর্ধ এবং অধ সবদিকেই অবলোকন করা যায়। প্রথম বেইস স্টেশন থেকে কেবল কার রোপওয়ের মাধ্যমে এগুলো টাওয়ারগুলোতে মৃদু ধাক্কার কারণে কোন কোন পর্যটক কিঞ্চিত ভীতির সম্মুখীন হন। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেই বিপত্তি থাকে না মনে। দুয়েকটি টাওয়ার পার হলেই স্বাভাবিকতা চলে আসে পর্যটকদের মাঝে। রাঙ্গুনিয়ার হোসেনাবাদ ইউনিয়নের কোদালা বিটের আওতাধীন দক্ষিণ বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গত বছরের ১১ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ইকোপার্কের উদ্বোধন করেন। চলতি বছরের গত ৪ ডিসেম্বর ইকোপার্কের প্রায় ২৫ ভাগ সমাপ্ত সময়ে রোপওয়েতে ১২টি কেবল কারের উদ্বোধন করেন সাবেক বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। পার্কে জনপ্রতি ২৩ টাকা টিকেট ক্রয়ের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার পান পর্যটকরা। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও বনাঞ্চল এমনকি নবউদ্যমে পাখ পাখালির জন্য গড়ে তোলা স্থাপনাসহ পুরো পার্ক বিচরণ করা যায়। কিন্তু রোপওয়ের কেবল কারে ছড়তে হলে প্রাপ্ত বয়স্কদের জনপ্রতি ২৩০ ও ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য ১১৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি কেবল কারে ৬ জন পর্যটক প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ ২০ থেকে ২৫ মিনিটে আপনি ঘুরে আসতে পারবেন। রোপওয়েতে কেবল কারের বেইস স্টেশন থেকে শেষ বেইস স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া আসা এই ভাড়ায় চলে। পর্যটকরা ইচ্ছে করলে শেষপ্রান্তে থাকা বেইস স্টেশনে নেমে প্রাকৃতিক অভয়ব দেখে পুনরায় অন্য কেবল কারে ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু শেষ প্রান্তের বেইস স্টেশন থেকে কিছুতেই প্রারম্ভিক স্টেশনে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, টিকেট কাউন্টার রয়েছে শুধুমাত্র প্রারম্ভিক বেইস স্টেশনে। আগামীতে সংযোজন হচ্ছে আরও বিভিন্ন ধরনের রাইডস এমনকি লেকে নামতে পারে স্পীড বোট। সেক্ষেত্রেও রাইডসগুলোর ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। তবে এখনও এই পার্কের ৭৫ ভাগ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল সূত্র। শতভাগ সমাপ্তিতে পূর্ণতা আসবে এ পার্কের। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫-০৬ সালে সাড়ে ১৩শ’ হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হয় বন বাগান। লাখো বৃক্ষরাজির এ বাগানকে অনেকে জঙ্গল দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া বন বাগান বলেও অভিহিত করেন। বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজিতে ভরা এ বাগানে এখন গড়ে তোলা হয়েছে শেখ রাসেল এ্যাভিয়ারি এ্যান্ড ইকো পার্ক।
×