ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন এরশাদ

জাপার মহাসমাবেশ থেকে রোড শো, রোড মার্চ কর্মসূচী আসছে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪

জাপার মহাসমাবেশ থেকে রোড শো, রোড মার্চ কর্মসূচী আসছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত কোন্দল থাকলেও নতুন বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এ ছাড়াও বছরব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচী নেয়া হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে ১ জানুয়ারি আহূত মহাসমাবেশ থেকে ২০১৫ সালের রাজনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রোড শো, রোড মার্চ, ট্রেন মার্চ, বিক্ষোভ ও দেশব্যাপী জনসংযোগ ছাড়াও সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সারাদেশে জনমত গঠন করাসহ বেশ কিছু কর্মসূচীর ঘোষণা আসতে পারে। বিভাগীয় পর্যায়ে মহাসমাবেশ করারও চিন্তা করছে দলটি। সমাবেশে ১০ লাখ কর্মী-সমর্থক জমায়েত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন দলের নেতারা। একে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে দলের অনেক সংসদ সদস্য ও শীর্ষ নেতারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। মহাসমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু জনকণ্ঠকে বলেন, দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্য থেকেই মহাসমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে। ১০ লাখ মানুষের এই আয়োজন সফল করতে সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি। এ থেকে দলের চেয়ারম্যান বছরব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করবেন। তিনি বলেন, দলীয় কর্মসূচীর পাশাপাশি সরকারবিরোধী কর্মসূচীও থাকবে। তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে দলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের ডাক দেয়া হবে। জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করলে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হবে। তবে কোন জ্বালাও পোড়াও সহিংসতায় জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে না। শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হতে পারে এর নজির আমরা স্থাপন করতে চাই। জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশে যে কর্মসূচী ঘোষণা করবেন এরশাদ তা অনেকটাই চূড়ান্ত হওয়ার পথে। আগামী মার্চ এপ্রিলের মধ্যে দলের কাউন্সিল করার ঘোষণা আসতে পারে সমাবেশ থেকে। যদিও তিনবার জাতীয় সম্মেলন করার তারিখ ঠিক করেও পেছানো হয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ২০ জেলায় সম্মেলন হয়েছে। বেশিরভাগ কমিটির মেয়াদ নেই। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-রংপুর-বরিশাল-ময়মনসিংহ-কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় রোড শো কর্মসূচী আসতে পারে। রাজশাহী, ফেনী, সিলেটসহ সুযোগ মতো বেশ কয়েকটি জেলায় ট্রেন মার্চ করার চিন্তা চলছে। নদী পথেও থাকছে কর্মসূচী। সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে দেশব্যাপী একযোগে কর্মসূচীর ডাক দেয়া। এর আগে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, কৌশলগত কারণে সরকারে আছে জাতীয় পার্টি। জাপা সরকারের পার্টনার নয়। তাই সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম ও খুনের দায়িত্ব নেবে না দলটি। তাছাড়া সারাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন চায় দলটি। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, শোনা যাচ্ছে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। আমরা বলতে চাই যেদিন থেকে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে, সেদিন থেকে জাতীয় পার্টি রাস্তায় নামবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ গণবিপ্লব চলবে। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। আগামী ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। জাপা নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠে তৎপর হতে চায় দলটি। সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে চায়? তারা বলছেন, রাজনৈতিক কারণে বিএনপি এখন অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায়। মাঠ পর্যায়ে তেমন কোন কর্মসূচী নেই। বারবার হুমকি দিয়েও আন্দোলনে যেতে পারছে না ২০ দলীয় জোট। এই সুযোগে দেশব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করে জনসমর্থন বাড়াতে চান চতুর এরশাদ। ২০ দলের নেতাকর্মীদের বাগে আনতে চান তিনি। শোনা যাচ্ছে বিএনপির সাবেক অন্তত ২০ সাংসদ প্রস্তুত আছেন জাতীয় পার্টিতে যোগদান করার জন্য। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে কিংবা রাজনৈতিক পরিস্থিতি ২০ দলীয় জোটের জন্য অনুকূলে না থাকলে তারা সবাই আসবেন জাপার পতাকাতলে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলের চেয়ারম্যান এরশাদ বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জাপার লক্ষ্য ১৫১ আসন। আমরা বিএনপির জায়গা দখল করতে চাই। বাড়াতে চাই দলের সমর্থন। দলের মহাসচিব বাবলু বলেন, আওয়ামী লীগের অত্যাচার, নির্যাতন আর গুম খুনের প্রতিবাদে সমাবেশে সারাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষের জমায়েত ঘটানো হবে। বিশাল লোক সমাবেশ ঘটিয়ে জানান দিতে চাই, সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ অবস্থান নিয়েছে।
×