ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রজন্মযোদ্ধাদের উল্লাস ॥ সব রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪

প্রজন্মযোদ্ধাদের উল্লাস ॥ সব রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন মামলায় রায় হলেও তা এখনও কার্যকর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেছেন, ‘মামলার রায় হচ্ছে কিন্তু বিচার নয়। বিচার তখনই হবে যখন এই রায় কার্যকর হবে।’ বিদেশীদের ইশারায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে দ্রুত রায় কার্যকর চায় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। কুখ্যাত রাজাকার কায়সার বাহিনীর প্রধান কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর শাহবাগের চিত্র পাল্টে যায়। উল্লাসে ফেটে পড়েন প্রজন্মযোদ্ধারা। চলে স্লোগানের পর স্লোগান। সবাই সমস্বরে বলতে থাকেন, ‘জয় হলো রে জয় হলো-শাহবাগের জয় হলো। এই মাত্র খবর এলো-খুনী কায়সারের ফাঁসি হলো। কফিন রেডি বডি চাই’। এ সময় সবাই বিজয় চিহ্ন দেখান। কোলাকুলি করেন। আকাশে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণ করেন। বের করা হয় আনন্দ মিছিল। মিছিলটি শাহবাগ থেকে চারুকলা-টিএসসি হয়ে আবারও প্রজন্ম চত্বরে ফিরে আসে। মিছিল শেষে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, সকল যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর করে বাঙালী জাতিকে দায় মুক্ত করতে হবে। রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হলো ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত। এখন সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, কোন অপশক্তির কাছে তারা (সরকার) মাথানত করেনি। রায় কার্যকরের ক্ষেত্রেও তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। গণজাগরণ মঞ্চ প্রত্যাশা করছে কামারুজ্জামানসহ যেসব যুদ্ধাপরাধীর রায় বাস্তবায়ন ঝুলে আছে, সেগুলো কার্যকর ও বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল করে সত্যিকারের দায় মুক্তির পথে এগুবে সরকার। এর আগে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টা থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চ। ফাঁসির দাবিতে চলে স্লোগান আর গণসঙ্গীত। ইমরান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় হচ্ছে কিন্তু বিচার নয়। তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ দ্রুত কার্যকর করা হবে এমন বক্তব্য আমরা শুনেছিলাম। কিন্তু বিদেশী দূতাবাসের একটি চিঠিতে সেই রায় কার্যকর করার কথা রাতের অন্ধকারে চাপা পড়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময় যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় নিয়ে জনমনে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন হয়েছে। এখন রায় কার্যকর না হওয়ায় জনমনে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত রায় কার্যকর চায় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ॥ একাত্তরে হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। পাশাপাশি দ্রুত রায় বাস্তবায়নের প্রত্যাশাও জানিয়েছে একাত্তরের রণাঙ্গনের কমান্ডারদের এ সংগঠন। মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া দেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান কেএম সফিউল্লাহ। ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন মুসলিম লীগ নেতা কায়সার। তার ওই সব অপরাধের কথা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার সফিউল্লাহ বলেন, আমার সেক্টরে কায়সারের নেতৃত্বে নারকীয় হত্যাকা- আমি দেখেছি। তার ফাঁসির আদেশে আমরা সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত রায় কার্যকরের প্রত্যাশায় আছি। প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্তের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সুযোগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। রাজাকার কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি রায় দ্রুত বাস্তবায়নেও দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, জোবায়দা হক অজন্তা, রাশেদুজ্জামান শাহীন প্রমুখ।
×