ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার লাঠি বহরসহ আদালতে হাজিরা ॥ বকশীবাজার রণক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

খালেদার লাঠি বহরসহ আদালতে হাজিরা ॥ বকশীবাজার রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বকশীবাজার থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত এলাকায় বিএনপি ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে এ সংঘর্ষ নাজিমউদ্দিন রোড, পলাশী মোড়, চানখাঁরপুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ দুইপক্ষে আহত হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্তত ৩৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও শর্টগান থেকে ৫০ রাউন্ড রাবারবুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এ সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যালের সামনে হামলার শিকার হয়েছেন নেত্রকোনা-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস। তাঁর গাড়িও পুড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ৫০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েক শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। অন্যদিকে, এই দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আবারও সময়ের আবেদন করলে ওই আবেদন মঞ্জুর করে দুই মামলার শুনানি পিছিয়েছেন এ মামলার নতুন বিচারক। শুনানির পরবর্তী দিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রসিকিউশন, আসামিপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বুধবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি নতুন দিন নির্ধারণ করেন। একই দিনে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও শুনানির দিন রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার হাজিরা ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই পুলিশ বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাস ও আশপাশের সড়কগুলোতে সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। যানবাহন ও মানুষ চলাচলের ওপরও আরোপ করা হয় কড়াকড়ি। এদিকে সকাল থেকেই বিএনপি, ছাত্রদল ও অঙ্গ সংঠনের নেতাকর্মীরা বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত রাস্তা দখল করে ব্যাপক শোডাউন করতে থাকে। বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে আদালতের পথে রওনা হন। তাঁর আসার খবরে বকশীবাজার থেকে ফজলে রাব্বি হল পর্যন্ত এলাকায় সকাল থেকে অবস্থানকারী বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল শুরু করে। মিছিল থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক সেøাগান দিতে থাকে তারা। এই মিছিলের মধ্যেই বকশীবাজার মোড়ে হঠাৎ শুরু হয় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া। বিএনপি ও ছাত্রদলকর্মীরা ধাওয়া খেয়ে পলাশী মোড় থেকে বুয়েটের দিকে এগোলে সেখানে ছাত্রলীগকর্মীরা আবার তাদের ধাওয়া দিলে ব্যাপক সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় দুইপক্ষেই বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। সড়ক দ্বীপের গাছ ও বেড়া ভেঙ্গে লাঠি বানিয়ে দুইপক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। মিনিট ১৫ সংঘর্ষ চলার পর লাঠি হাতে রাস্তায় নামে পুলিশ। সেই সঙ্গে শুরু হয় ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ। এরই মধ্যে ওই এলাকা দিয়ে বকশীবাজারে আদালতের দিকে অগ্রসর হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা (সিএসএফ) ছাড়াও এ সময় বিএনপির একদল কর্মীকে লাঠি হাতে গাড়ির সামনে এগোতে দেখা যায়। তাঁকে নিরাপত্তা দিতে সামনে পেছনে পুলিশের গাড়িও ছিল। খালেদা জিয়ার গাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের ফটকে পৌঁছলে বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরাও ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ আবার লাঠিপেটা করে শুরু করলে তারা দূরে সরে গিয়ে ঢিল ছুড়তে থাকে। আদালতের সামনে গাড়ি থেকে নেমে বিএনপি চেয়ারপার্সন এজলাসে চলে যান। এদিকে আদালতে শুনানি চলার মধ্যেই চানখারপুলের পশ্চিম পাশে বিএনপি কর্মীরা একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। তারা ঢাকা মেডিক্যালের ফজলে রাব্বি হলের দিকে এগোলে পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে তাদের তাড়া করে সরিয়ে দেয়। জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে নেভানো হয় মোটরসাইকেলের আগুন। পুলিশের টিয়ারশেলের গ্যাস এ সময় মেডিক্যালেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, পরিকল্পিতভাবে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে। এর পেছনে আরও কোন কারণ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকজনকে গ্রেফতারের কথাও জানান তিনি। এ বিষয়ে চকবাজার থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ ইলিয়াছ জনকণ্ঠকে জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এক মহিলা পুলিশসহ ২ পুলিশ গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা আশঙ্কামুক্ত। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে পুলিশকে বাধ্য হয়ে শটগান থেকে অন্তত ৫০ রাউন্ড রাবারবুলেট ছুড়তে হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার ধরন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পর্যালোচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, হামলার ঘটনাটি পরিকল্পিত। এর পেছনে আরও কোন কারণ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের মধ্যে অনেককেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্তত ৫০ জনকে এজাহারনামীয় এবং অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ও রাজধানীর কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের নেতা ইসহাক আলীসহ অনেক স্থানীয় নেতা রয়েছেন। এমপির গাড়িতে হামলা ॥ এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরী বিভাগের সামনে বিএনপি কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন নেত্রকোনা-১ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস। হামলাকারীরা তাঁর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। লাঠির আঘাতে তিনি নিজে মাথা ও কানে আঘাত পেয়েছেন। এই সংসদ সদস্য হাসপাতালের একটি কেবিনে ভর্তি হয়েছেন এবং নিউরোসার্জারি বিভাগের ডাঃ রাজিউল হকের অধীনে চিকিৎসাধীন বলে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান। তিনি বলেন, বাইরে থেকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। পরে তারাই সংসদ সদস্যের গাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকে আহত করে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করে তাৎক্ষণিকভাবে দুই বছরের কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন আরও অন্তত ছয়জন। ছবি বিশ্বাসের গাড়িচালক মোহাম্মদ হাসনাইন জানান, তাঁরা গাড়ি নিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে হাসপাতালে এসেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য। তিনি বলেন, গাড়িতে স্যারসহ (সাংসদ) আটজন ছিলেন। তাদের মধ্যে অসুস্থ একজন ছিলেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর ঝামেলা দেখে স্যার গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু ফটক দিয়ে বের হওয়ার পরপরই ৩০-৪০ জন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ির ওপর হামলা চালায়। তারা গাড়ি ভাংচুর ও চালককে মারধর শুরু করলে অন্য আরোহীরা দ্রুত নেমে সরে যান। তারপর হামলাকারীরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হাসনাইন জানান, হামলার পর পুলিশ, সংবাদকর্মী ও হাসপাতালের কর্মীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা সটকে পড়ে। পরে সাংসদকে হাসপাতালের ভেতরে পুলিশ ফাঁড়িতে নেয়া হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রায় আধাঘণ্টা পর তাঁকে জরুরী বিভাগে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় বলে জানান হাসনাইন। হামলাকারী সন্দেহে কয়েকজনকে ধরে পুলিশেও সোপর্দ করেন হাসপাতালের কর্মীরা। এদিকে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় গ্রেফতার আফজাল হোসেন (২২) নামের এক যুবককে দুই বছরের কারাদ- দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের হাকিম সারোয়ার আলম। ঢাবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বকশীবাজারের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও দিনভর চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। ওই সংঘর্ষের পর ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে ঢোকা প্রতিহত করতে ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টা ৭ মিনিটের সময় টিএসসিতে চার রাউন্ড গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারে এমন খবরে বুধবার সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের নেতারা জড়ো হতে থাকে। বকশীবাজারের সংঘর্ষের খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। এরপর দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। এতে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি জয়দেব নন্দি, জিয়াউল হক জিয়া, দক্ষিণের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস, ঢাবি সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্যা, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা শিহাবুজ্জামান শিহাব, অহিদুর রহমান জয়, আবিদ আল হাসান, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, সদস্য এনামুল হক প্রিন্সসহ বিভিন্ন হল ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছাত্রদলের অছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এদেরকে প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই মহড়া অব্যাহত থাকে। ছাত্রলীগের মহড়া সম্পর্কে সংগঠনটির সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রদলের কিছু অছাত্র ও উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসের দিকে আসতে চেষ্টা করেছিল। তাদেরকে প্রতিহত করা হয়েছে। এরপর যদি এই ধরনের কোনো চেষ্টা করা হয়, তাহলে আর সহ্য করা হবে না। সঙ্গে সঙ্গে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয় যানজট ॥ সংঘর্ষকালে আলিয়া মাদ্রাসা, বকশীবাজার, পলাশী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ও চানখাঁরপুল এলাকার অনেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহনের চলাচল। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ আজিমপুর মোড়, নীলক্ষেত মোড়, পলাশী মোড়, বকশীবাজার, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনের রাস্তা ও চানখাঁরপুল এলাকায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পুরো এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যার প্রভাবে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, সচিবালয়ের সামনের রাস্তা, গুলিস্তান, চানখাঁরপুল, নিউমার্কেট, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও আলিয়া মাদ্রাসার সামনের রাস্তাসহ পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খালেদার আবেদন মঞ্জুর ॥ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছে আদালত। ওই দিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদীর অসমাপ্ত সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া একই দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলারও শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। হাল্কা গোলাপি রংয়ের শাড়ি পরিহিত খালেদা গাড়ি থেকে নেমে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সেøাগানের মধ্যে এজলাসে ঢোকেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। খালেদা জিয়া আদালতে আসার আগেই এ মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের কথা জানিয়ে সময়ের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। এ মামলার দায়িত্ব পাওয়া নতুন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ১৫ মিনিটের সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে খালেদার আবেদন মঞ্জুর করেন। খালেদার আইনজীবীদের একের পর এক আবেদনের মধ্যে মামলার বাদী ও প্রধান সাক্ষী হারুন-অর-রশীদ চারটি ধার্য তারিখেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে না পারায় এদিন তার বাকি জবানবন্দী শোনার তারিখ ছিল। তবে বিচারক শুনানি মুলতবি করে আগামী ৭ জানুয়ারি বাদীর সাক্ষ্য শোনার নতুন তারিখ রাখেন। বেলা সোয়া একটার দিকে খালেদা যখন আদালত ত্যাগ করেন ততক্ষণে আদালতের বাইরের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসে। তিনি নির্বিঘেœই গুলশানের বাড়িতে ফেরেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা, রাজনৈতিক মামলা। ইতিহাসে এই মামলাটি থাকবে, সেখানে আপনাদের নাম যেমন থাকবে, আমাদের নামও পাশাপাশি থাকবে। সেই ইতিহাসে যেন দেখা যায় যে, দেশে আইনের শাসন আছে, মানুষ ন্যায়বিচার পাচ্ছে। বাইরে থেকে কে কি বলল, কতটা কি প্রভাব আছে সেদিকে আপনি দৃষ্টি দেবেন না, এটাই আমরা আশা করি। এর আগে শুনানিতে তিনি আদালতকে বলেন, আপনি এ মামলায় নতুন, সবকিছু এখনো জানেন না। আমরাও আপনার সম্পর্কে জানি না। এজন্য আমাদের কিছু সময় দিন। আপনিও মামলা সম্পর্কে জেনে নিন। খালেদার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতে বলেছি যে, আইনের ব্যত্যয় করে, অনিয়ম করে দুই মামলায় চার্জ ফ্রেম করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে হাইকোর্টে আমাদের একটি আবেদন বিচারাধীন। তিনি বলেন, বিচারক আমাদের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ৭ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি অভিযোগ গঠনকারী বিচারক ঢাকার বিশেষ জজ বাসুদেব রায়। তাঁকে সরকার সম্প্রতি বদলি করলে খালেদার মামলার দায়িত্ব পান আবু আহমেদ জমাদার। বাসুদেব রায়কে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি বিচারক বদল নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলে, এটা বিচারের ওপর সরাসরি প্রভাব বিস্তারের শামিল। গত ১৯ মার্চ বাসুদেব রায়ের আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করে। এরপর সময়ের আবেদনের কারণে কয়েক দফা তারিখ পিছিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যে খালেদার অনুপস্থিতিতেই অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ দুটি দুর্নীতি মামলা বাতিলে উচ্চ আদালতে গিয়ে বিফল হওয়ার পর বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন খালেদার আইনজীবীরা। কিন্তু সব আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পরও বিভিন্ন আবেদন করতে থাকেন তাঁরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি। সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশীদ এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ। এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।
×