ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মালয়েশিয়ার সঙ্গে এবার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

মালয়েশিয়ার সঙ্গে এবার  মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

এম শাহজাহান ॥ মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে এবার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা হতে পারে। জনশক্তি রফতানির পাশাপাশি এবার পণ্য রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এই চুক্তি করা গেলে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বড় অঙ্কের যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে তা কমে আসবে। একই সঙ্গে এদেশে মালয়েশিয়ার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। এ লক্ষ্যে আগামী ১২ জানুয়ারি দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্পবিষয়ক মন্ত্রী দাতো মোস্তফা মোহাম্মদ তিন দিনের এক সফরে বাংলাদেশে আসছেন। তাঁর সফরকালে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ), মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি ও চলমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, ব্যবসায়িক সুসম্পর্কের মাধ্যমে বাণিজ্যে সমতা আনতে সম্প্রতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার এ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। সেই প্রস্তাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুক্ত বাণিজ্য এফটিএ এবং চট্টগ্রাম ও পেনাং বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল চালু করা। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হয়েছে ২০০ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ১৯০ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। আর তার বিপরীতে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ১০ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ডলার। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে ঘাটতি ১৮০ কোটি ১৯ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবে মালয়েশিয়ায় মানবসম্পদ রফতানিতে বাংলাদেশকে কার্যকরী উৎস হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। দেশটির কিছু কোম্পানিকে বাংলাদেশে রিলোকেশন করাসহ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা তুলে ধরে মালয়েশিয়াতে সেমিনার করার প্রস্তাব করা হয়। তাদের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারস্পরিক সুসম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা দরকার। তাছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারী পদক্ষেপ জরুরী বলেও মনে করছে সংগঠনটি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরের সময় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া একটি চুক্তি, একটি প্রটোকল ও দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এসব চুক্তি যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হতে পারে সে বিষয়েও এখন জোর দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৬ লাখের মতো বাংলাদেশী কর্মী রয়েছেন। ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত প্রটোকলের আওতায় দেশটির সারাওয়াক প্রদেশে আরও ১২ হাজার বাংলাদেশীর কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৬০ হাজারে উন্নীত হবে। এদিকে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের এফটিএ’র প্রস্তাব নিয়ে এবারও জোরেশোরে আলোচনা করবে সরকার। এ কারণে দাতো মোস্তফা মোহাম্মদের এ সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ১২ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাঁর একাধিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে এবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এফটিএ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় আলোচনা হয়েছে। আমরা তো এফটিএ চাই। তবে আলোচনা কালে এবারও বিষয়টি তোলা হবে। আমরা এফটিএ করতে প্রস্তুত। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিকে সফরকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওষুধ, পাট পণ্য, সিমেন্ট, সিরামিক, ফুটওয়ারের বাজার খুলে দিতে মালয়েশিয়ার কাছে অনুরোধ করা হবে।
×