ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী

বড়দিনের আনন্দ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

বড়দিনের আনন্দ

পবিত্র বাইবেলের শিক্ষা, স্র্রষ্টা ঈশ্বর সমস্ত জমির মালিক (লেবীয় পুস্তক ২৫), যার জন্য মোশির ব্যবস্থায় জমির মালিকানাস্বত্ব পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ ছিল বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ ছিল। তা কেবল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যেত অথবা তার অধিকার লোকেরা অবাধ্যতার ফলে হারাত (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:১৫-৩১)। নৈতিক সদ্ব্যবহার ও ঈশ্বরের ব্যবস্থা বা নিয়ম পালনের শর্ত সাপেক্ষে জমির ভোগদখল করার অধিকার ঈশ্বর দত্ত। মানুষ ঈশ্বরের সম্পদের দেওয়ান, অধ্যক্ষ বা ম্যানেজার মাত্র। কিন্তু মানুষ সেখানে বিশ্বস্ত ব্যবহারকারী না হয়ে জমির মালিকানা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক সময় কতই না ছল-বল ও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। দরিদ্র ও দুর্বল মানুষ প্রভাবশালী মানুষের দ্বারা জমিজমার মালিকানা হারায়, বঞ্চিত হয় আপন ন্যায্য অধিকার থেকে। নদীমাতৃক আমাদের এদেশে নদ-নদীর ভাঙ্গনের ফলে আমাদের দেশে প্রতি বছর অনেক মানুষ পৈতৃক অধিকার হারিয়ে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়, না হয় তারা ভূমিহীন শ্রমিক বা দাসে পরিণত হয়। পৃথিবীতে আজ কোটি কোটি মানুষ ভূমিহীন দাস বা কৃতদাস, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ২০ কোটি মানুষ আজ নিজের দেশ থেকে দেশান্তরী শরণার্থী হয়ে বছরের পর বছর অমানবীয় অবস্থায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এ পৃথিবীতে যিশু খ্রিস্ট এসেছিলেন ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত অগণিত মানুষের এ পৃথিবীতে। যিশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল অতি দীনহীন দরিদ্র পিতামাতার কোলে। সাধু লুক রচিত সুসমাচারে যিশুর জন্মের বিবরণে আমরা দেখতে পাই তাঁর জন্ম হয়েছিল যিহুদীয়া প্রদেশের বৈৎলেহামের এক গোয়ালঘরে। কারণ পান্থশালায় তাদের জন্য কোন স্থান ছিল না! সাধু মথি লিখিত সুসমাচার পড়ে আমরা জানতে পারি যে, নিষ্ঠুর হেরোদ রাজা ঐ সময়ে যিশুসহ দু’বছরের নিচের বয়সের সমস্ত শিশুকে হত্যার আদেশ দিলে পিতা-মাতা যোসেফ ও মরিয়মকে নবজাত শিশুকে নিয়ে প্রাণের ভয়ে মিসরে পালিয়ে গিয়ে তাঁদের আশ্রয় নিতে হয়। খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের মর্মমূলে আছে ঈশ্বরের প্রেম ও অনুগ্রহ। ঈশ্বর চূড়ান্তভাবে তাঁর অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁর পুত্রকে জগতের পরিত্রাণের জন্য দান করে। বড়দিন তাই ঈশ্বরের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। সে অনুগ্রহ সস্তা কোন অনুগ্রহ নয়, কিন্তু বড়ই মূল্যবান। ত্যাগহীন ধর্ম-কর্মে কেবল সস্তা অনুগ্রহই প্রকাশ পায়। খ্রিস্ট কেবল পাপের ক্ষমা দিতেই তাঁর জীবন দেন নাই; তিনি জীবন দিয়েছেন যেন জীবন পরিবর্তিত হয়। জীবনমূল্যে তিনি জীবন ক্রয় করেছেন; পাপের দাসত্ব থেকে জীবনকে মুক্ত করে পবিত্র ঈশ্বরের সঙ্গে ও তাঁর সৃষ্টির সঙ্গে সম্মিলিত করতে। আজকের পৃথিবীতে সম্পদ ও সুযোগের অসম বণ্টন রয়েছে সর্বত্র, দুর্বল মানুষের সামনে প্রতিদিন ভয়াবহ প্রতিযোগিতা, তার সঙ্গে রয়েছে অন্যায় ও অসৎ সবকিছুর ভিড়। তাই আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে তার মূল্যবোধে চলা ও তার প্রেরণায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে এবং সেইসব জীবনে আশার একটু আলো জ্বালাতে পারার কাজ সত্যিই ঈশ্বরের কাজ। ধর্মকর্মে যদি প্রেম ও ন্যায্যতার ব্যবহার না থাকে তাহলে সে ধর্মকর্ম থেকে মানুষ আশীর্বাদ পেতে পারে না। আমরা নিয়ম রচনা করি ও তা প্রয়োগ করি আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। অনুগ্রহের কথা জোড় গলায় বলি, কিন্তু অন্যকে শাসানোর বেলায় নিয়ম দেখাই। আমরা বড়দিনের আনন্দ বুঝি, অনুগ্রহের অর্থ আমরা বুঝি না! আমাদের হৃদয়ের পান্থশালায় আজও কি তাঁর জন্য, তাঁর প্রেম ও নিঃস্বার্থ সেবার আদর্শের স্থান আছে? সবাইকে জানাই বড়দিন ও নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা!
×