ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলন লিমায় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, ধরণীকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ প্যারিস

প্রকাশিত: ০৭:২১, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪

সংবাদ সম্মেলন লিমায় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি, ধরণীকে  বাঁচানোর শেষ সুযোগ প্যারিস

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সবুজ জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে হলে বাংলাদেশকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা না হলে এ তহবিল থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া সম্ভব হবে না। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সিভিল সোসাইটি আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ড. সলিমুল হক বলেন, লিমা জলবায়ু সম্মেলন আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। এখন প্যারিস হচ্ছে এ ধরণীকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তি আলোচনার মাধ্যমে হবে না। এ চুক্তি করতে হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ছাড় দিতে হবে। মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যে, সবাই মিলে একটি ভাল কিছু করা হচ্ছে। ড. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ভয়ানক হুমকির মুখে। তাই প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনকে সফল করতে হবে। এজন্য নাগরিক সমাজ ও সরকারকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। গোলাম রাব্বানী বলেন, সবুজ জলবায়ু তহবিলের অর্থ পেতে হলে বাংলাদেশের প্রকল্প বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তা না হলে পর্যাপ্ত তহবিল পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ এখনও স্মল গ্রান্ট কর্মসূচীতে প্রবেশ করতে পারেনি। এ কর্মসূচীতে প্রবেশ করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ম্যাকানিজম করতে হবে। বুধবার ডেইলি স্টার ভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। অন্তর্ভুক্তিমূলক রোডম্যাপ দাবি ॥ এর আগে সকালে আটটি নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে সরকারকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন যে, বিগত সম্মেলনগুলোতে দেশ ও জনগণের স্বার্থ তুলে ধরতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে যে সাফল্য বাংলাদেশ অর্জন করেছিল এবারের প্রতিনিধি দল তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আগামী ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে একটি স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোস্তফা কামাল আকন্দ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডি’র সৈয়দ আমিনুল হক। এতে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন এফইজেবি’র কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিপনেটসিসিবিডি’র উষা চক, অক্সফামের তানভীর আহমেদ, পিআরডিআই’র শামসুজ্জোহা, বিসিজেএফ’র কাওসার রহমান, সিডিপির সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম এবং নেটওয়ার্ক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ বাংলাদেশের মিজানুর রহমান বিজয়। কামরুল ইসলাম চৌধুরী একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে লিমা সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের ভূমিকা স্পষ্ট করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবি জানান। উষা চক জলবায়ু আলোচনা ও পরিকল্পনায় আদিবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি করেন। অক্সফামের তানভীর আহমেদ দারিদ্র্য বিমোচন এবং মানব উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পিআরডিআই’র শামসুজ্জোহা বলেন, উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে। স্বল্পোন্নত ও জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোকে তাই এখন পৃথক অবস্থান নিতে হবে। সিডিপির সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম বলেন, সমুদ্র বিজয়ের জন্য যে ধরনের উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, জলবায়ু আলোচনার ক্ষেত্রেও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিনিধি দলে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিসিজেএফ’র কাওসার রহমান বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল গঠন করার ক্ষেত্রে কারিগরি বা বিশেষজ্ঞ জ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। নেটওয়ার্ক ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ বাংলাদেশের মিজানুর রহমান বিজয় বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু ক্ষমতার যাবার লড়াই না করে দেশের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়েও লড়াই করা উচিত। ইক্যুইটিবিডি’র রেজাউল করিম চৌধুরী উল্লেখ করেন, লিমা সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যে ভূমিকা পালন করেছে সেটা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের সঙ্গেও খাপ খায় না। আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী সব সময় বাংলাদেশের জনগণের অধিকার হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছেন।
×