ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলি

আর মাত্র কয়েকটা দিন। এর পর বিদায়। কালের গর্ভে হারাবে ২০১৪। যথেষ্ট ঘটনাবহুল ইংরেজী বছর ব্যক্তিজীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে। সঙ্গত কারণেই এখন পেছন ফিরে তাকানোর পালা। বিগত দিনের ভাল-মন্দ খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা হচ্ছে। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেব নিকেশ কষছেন সকলেই। পাশাপাশি বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় চলছে বর্ষ বিদায় ও নতুন বছর বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর গিফটশপগুলোতে বাড়তি ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্ধু প্রিয়জন ও সহকর্মীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে সকলেই খুঁজছেন পছন্দের গ্রিটিংস কার্ড ডায়েরি ক্যালেন্ডার ইত্যাদি। বৃহস্পতিবার পুরনো পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, বেশ ভাল সংগ্রহ। ছোট বড় মাঝারি আকারের কার্ডের ওপর চমৎকার করে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৫’ লেখা। ভেতরে বাড়তি কাগজ। সেখানে ছন্দে গীতিতে লেখা শুভেচ্ছা বার্তা। দামও খুব বেশি নয়। অনেকেই পছন্দেরটির খোঁজে ব্যস্ত ছিলেন। আকরামুল হক নামের এক এনজিও কর্মকর্তা এসেছিলেন কার্ড কিনতে। জানালেন, এখন ব্যক্তিগতভাবে আর কাউকে কার্ড পাঠিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো হয় না। অফিসের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের শুভেচ্ছা জানানো হয়ে থাকে। এ কারণেই কার্ড ও ডায়েরি কিনতে আসা। শোরুমের ম্যানেজারও জানালেন, আগের সেই সময়টা নেই। সারা বছর মূলত বিয়ের কার্ড বিক্রি করি। তবে এখনকার কথা ভিন্ন। নববর্ষ সামনে রেখে কার্ড ডায়েরি ক্যালেন্ডার ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে যেমন, তেমনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বর্ষ বিদায় ও নতুন বছর বরণ করে নেয়ার আলোচনায় এখন সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ‘থার্টিফার্স্ট নাইট’। পুরনো বছরের পরিসমাপ্তি এবং নতুন বছরের শুরুর মুহূর্তটি আনন্দঘন করতেই এ উদ্যাপন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরজুড়েই চলছে প্রস্তুতি। এ ক্ষেত্রে অভিজাত হোটেলগুলো সবচেয়ে এগিয়ে। প্রতিবারের মতো এবারও পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও, রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন, ওয়েস্টিনসহ নামী দামী হোটেলগুলোতে চলছে থার্টিফার্স্ট নাইটের বিশেষ প্রস্তুতি। হোটেল সোনারগাঁও-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা সালমান কবির জানান, এবারও পার্টিসহ বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকবে তাঁদের হোটেলে। উদ্যাপনে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার ২৫ ডিসেম্বর ছিল যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। ক্রিসমাস ডে। উৎসবটি দারুণ উদ্যাপিত হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব এ উপলক্ষে সকাল থেকেই বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিল হোটেল সোনারগাঁওয়ে। ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজের চকোলেট বিতরণ- ছবি তোলা তো ছিলই। সেইসঙ্গে এবারই প্রথম হোটেলের সুইমিংপুলের পাশে খোলা জায়গায় আয়োজন করা হয় লোকজ সংস্কৃতির মেলা। ছিল বাইস্কোপ দেখার সুযোগ। ছোট বড় নেই, সকলেই কৌতূহল নিয়ে ছোট্ট ফুটোতে চোখ রাখছিলেন। দেখছিলেন মজার মজার সব দৃশ্য। খেলা দেখাতে আনা হয়েছিল বানর। কখনও সে দর্শনার্থীদের সালাম আদাব দিয়েছে। কখনও রিংয়ের ভেতর দিয়ে দুর্দান্ত ঝাঁপ। শ্বশুরবাড়ি যাওয়া, নদী পার হওয়া, চিন্তার ভঙ্গি- সবই করে দেখিয়েছে। নতুন বছর সামনে রেখে ভাগ্য গণনারও ব্যবস্থা ছিল। নিয়ে আসা হয়েছিল গণক টিয়া পাখি। ঠোঁট দিয়ে চিঠির খাম উঠিয়েছে সে। বলার চেষ্টা করেছে কী আছে সামনে! এর বাইরেও বিভিন্ন হোটেলে ছিল ব্যতিক্রমী আয়োজন। বাসায় বাসায়ও চলেছে অতিথি আপ্যায়ন। শুধু খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীরা নন, অন্য ধর্মের মানুষও নেমন্তন্ন পেয়েছেন। যোগ দিয়েছেন উৎসবে। ধর্ম যার যার। উৎসব সবার। অসাম্প্রদায়িক এই চেতনার জয় হোক।
×