ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড়দিনে গির্জাগুলো মিলনমেলায় পরিণত

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বড়দিনে গির্জাগুলো মিলনমেলায় পরিণত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাপ থেকে মুক্তি এবং সমগ্রজাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়েছে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিন। এদিনে সকাল থেকেই প্রতিটি গির্জা খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। প্রার্থনায় শরিক হতে সকাল থেকে তারা ভিড় করেন রাজধানীর বিভিন্ন গির্জায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতিটি গির্জায় ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রার্থনার পাশাপাশি একে অপরকে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় উৎসব। বড় দিন উপলক্ষে রাজধানীর প্রতিটি গির্জায় বড়দিনের প্রধান অনুষ্ঠান ছিল মূলত প্রার্থনা সভা। এ উপলক্ষে গির্জাগুলো সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। সকাল থেকেই শুরু হয় প্রার্থনা সভা। হাজার হাজার খ্রীস্টান অনুসারী প্রার্থনা সভায় যোগ দেন। খ্রীস্টান অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে যিশুখ্রিস্ট মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তাঁর জন্মদিনের আনন্দবার্তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য এ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি যে মুক্তির বাণী প্রচার করে গেছেন, তা এই প্রার্থনা সভার মধ্য দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয় বলে খ্রীস্টান ধর্মগুরুরা জানান। বৃহস্প্রতিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই শুরু হয় বড় দিনের উৎসব। তা চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এ উলক্ষে রাজধানীর প্রতিটি গির্জা সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। রাজধানীর বিভিন্ন গির্জায় ঘুরে দেখা গেছে বড়দিন উপলক্ষে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। বিজলীবাতি আর বিভিন্ন রঙের কাগজের ঝালর দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে। মূলত বড়দিন উপলক্ষে নান্দনিক সৌন্দর্য তৈরি করতেই মূলত ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করা হয়ে থাকে বলে জানান মিরপুর সেভেনডে’স এভেনটিস গির্জার পুরোহিতের সহযোগী। এছাড়া বড়দিনে শিশুদের আনন্দ দিতেও সাজানো হয় সান্তাক্লজকে। সান্তাক্লজ শিশুদের বড়দিনের বিভিন্ন উপহার দিয়ে মুগ্ধ করেন। সান্তাক্লজের আগমনের পরই গির্জায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। বড়দিনের অনুষ্ঠানে প্রার্থনার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি গির্জায় যিশুখ্রিস্টের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। বেথলেহেমের গোশালায় জন্ম নিয়েছিলেন বলে প্রতিটি গির্জায় তৈরি করা হয় গোশালা। সেখানে দেখানো হয় কুমারী মাতা মেরির কোলে শুয়ে রয়েছেন যিশুখ্রিস্ট। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দুপুরের গির্জার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয় পারিবারিক আয়োজন। এ উপলক্ষে প্রতিটি বাড়িতেই বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। বাড়িতে বাড়িতেও চলে কীর্তন আর পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়। মিরপুর ক্যাথলিক গির্জার এক সদস্য জানান, বড়দিন উপলক্ষে প্রতিটি খ্রীস্টান পরিবারে আগেই নতুন জামাকাপড় কেনা হয়। দুপুরে প্রত্যেকের বাড়িতে পিঠাসহ তৈরি করা হয় বিশেষ খাবার। বিকেলে পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাসাবাড়িতে চলে কীর্তন আর শুভেচ্ছা বিনিময়। শুধু গির্জায়ই নয় রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতেও বসে ছিল খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মিলন মেলা। এ উপলক্ষে পাঁচতারকা হোটেলগুলোও বিশেষভাবে সাজানো হয়। সোনারগাঁ, ঢাকা রিজেন্সি এবং ওয়েস্টিন হোটেল সাজানো হয় রঙিন বাতি, বেলুন ক্রিসমাস ট্রি আর ফুল দিয়ে। এছাড়া প্রায় খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতেও তৈরি করা হয় ক্রিসমাস ট্রি আর গোশালা। সংগীতের সুরে তেজগাঁওয়ের জপমালা গির্জায় সকাল সাড়ে ৭টায় প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয় শুভ বড়দিন উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা। প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভিড় করে গীর্জায়। বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জপমালা এই গির্জাটি পরিপূর্ণ হয় ওঠে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের মিলনমেলায়। গির্জার প্রধান ধর্মযাজক ফাদার আলবার্ট রোজারিওর সঙ্গে দিনের শেষ প্রার্থনায় হাজার হাজার পুণ্যার্থী অংশ নেন। এ সময় জপমালা গির্জার ভেতরে ও বাইরে ছিল খিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে প্রার্থনা সঙ্গীতের মাধ্যমে মিরপুরে শাহআলী বাগের সেভেনডে’স এভেনটিস গির্জায় যিশুখ্রিস্টকে স্মরণ করা হয়। বড়দিন উপলক্ষে সকাল থেকে কয়েকশ’ খ্রীস্টান অনুসারী এ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন। সকাল ৯টা থেকে বড়দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই এ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এছাড়াও রাজধানীর প্রতিটি গির্জায় প্রার্থনা শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। আহ্বান জানানো হয় শত্রুকে ভালবাসতে। আর সবার মাঝে ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে। এতে বলা হয় যিশুখ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল বিশ্ব শান্তির বার্তা নিয়ে। তাই আজকের দিনের সবার চাওয়া শান্তি ও ভালবাসার পৃথিবী। যাতে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। একতা, মিলন আর ভ্রাতৃত্ব হবে মূল কথা। সবাই হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। যিশুর এই আগমনী বার্তাকে স্মরণ করেই প্রতিবছর সারাবিশ্বে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করা হয়ে থাকে ক্রিসমাসডে। তার স্মরণে সারাবিশ্বেও খ্রীস্টান অনুসারীরা এই দিনকে বিশেষ দিন হিসেবে উদযাপন করে থাকে। এদিনের অপেক্ষায় তাদের সারাটি বছর কাটে। ডিসেম্বর মাস শুরু হলেই এ ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে উৎসবের সাড়া পড়ে যায়। ঘরবাড়ি নতুন করে সাজাতে শুরু করেন। নতুন পোশাক কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় করেন পরস্পরকে।
×