ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ এবার আজহারুলের মামলার রায়

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ এবার আজহারুলের মামলার রায়

বিকাশ দত্ত ॥ এবার মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিয্ক্তু জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বদর বাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজাহারুল ইসলামের পালা। তার মামলাটিসহ তিনটি মামলা বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছে ট্রাইব্যুনাল। তবে তিনটি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে আগে সিএভি রাখা হয়েছে আজাহারের মামলাটি। সে অর্থে তার মামলাটির রায়ই আগে হবে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ এমনটিই আশা করছে। অন্য যে দুটি মামলা সিএভি রাখা আছে- জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা পলাতক আব্দুল জব্বার ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুস সুবহান। প্রসিকিউটর সুলতান মাহামুদ সিমন জনকণ্ঠকে বলেছেন তিনটি মামলা সিএভি রাখা আছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের মামলাটি আগে বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য সিএভি রাখা হয়। সে কারণেই আমি আশা করছি আজাহারুল ইসলামের মামলার রায় আগে হবে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১৪টি মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন দ- প্রদান করেছে ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ছয়টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ আটটি রায় ঘোষণা করেছে। ট্রাইব্যুনাল -২ নয়টি মামলার বিচার কাজ পরিচালনা করলেও রায় হয়েছে আটটি। রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা আসামি একেএম ইউসুফ মারা যাবার কারণে তার মামলাটি আর পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নেয় ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে মোট তিনটি মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। বিচারিক কার্যক্রম শেষে জামায়াত নেতা এটিএম আজাহারুল ইসলামের মামলা সিএভি রাখা হয় ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। পলাতক জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা আব্দুল জব্বারের মামলাটি সিএভি রাখা হয় চলতি বছরের ৩ ডিসেম্বর। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের মামলা বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয় ৪ ডিসেম্বর। আজাহার ও জব্বারের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও আব্দুস সুবহানের মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে তদন্ত সংস্থা তদন্ত শুরু করে। একই বছরের ২২ আগস্ট আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৩ সালের ৪ জুলাই গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণসহ ছয়টি অভিযোগ তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশনে দাখিল করে। ঐ বছরের ১২ নবেম্বর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ২৬ ডিসেম্বর থেকে আজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৬ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এর পর একই বছরের ৩ আগস্ট আসামির পক্ষে একমাত্র সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান করেন। ১৮আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট ৬ কার্যদিবসে প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। এর পর ২৭ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ নয় কার্যদিবসে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখার আগে বদরবাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজাহারুলের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৬ কার্যদিবসে আজাহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। ২৭ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ কার্যদিবসে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আজাহারের আইনজীবী আব্দুস সুবহান তরফদার ও শিশির মোহাম্মদ মুনির। আইনী পয়েন্টের ওপর যুক্তিতর্ক করতে গিয়ে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি আজহারের নির্যাতনের শিকার এক বীরাঙ্গনাকে ক্ষতিপূরণ দিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে দাবি জানিয়েছেন। আজাহারের মামলায় ওই বীরাঙ্গনা প্রথম সাক্ষী হিসেবে ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর টাউন হলে স্থাপিত পাকিস্তানী ও রাজাকার ক্যাম্পে আজাহারের নেতৃত্বে ধর্ষণ ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। রংপুর টাউন হলকে নির্যাতন কেন্দ্রের পাশাপাশি একে রেপক্যাম্প উল্লেখ করে আইনী যুক্তিতর্কে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, ধর্ষিত নারীর বিষয়ে রাষ্ট্র সব সময়ই নীরব ভূমিকা পালন করেছে। সেখানে এই নারী ট্রাইব্যুনালে এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজে কিভাবে ধর্ষিত হয়েছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। সাক্ষ্যে তিনি বলেছেন, কিভাবে তাকে ও অন্য নারীকে নির্যাতন করা হতো।
×