ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চিহ্নিত ক্যাডারদের সরিয়ে নিচ্ছে ছালামতের লোকজন

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চিহ্নিত ক্যাডারদের সরিয়ে নিচ্ছে ছালামতের লোকজন

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায় স্থাপিত ক্যাম্প এবং বস্তি থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আগেই আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের (আরএসও) ক্যাডাররা চিহ্নিত কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের আয়ত্তে। ইতোমধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া-লেদা ক্যাম্প বস্তি থেকে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা গা ঢাকা দিয়েছে। কিছু সংখ্যক কুখ্যাত সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের দিয়ে প্রায় সময়েই ফায়দা হাসিল করেছে মৌলবাদীগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রুপ। তাদের হাতছাড়া না করতে ক্যাম্প ও বস্তি থেকে সরিয়ে কক্সবাজার বান্দরবানের রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ও বিভিন্ন ভাড়া বাসায় তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে জঙ্গীরা। আরএসও বাংলাদেশের সমন্বয়ক ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছালামত উল্লাহর সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাত করে তার পরামর্শে শরণার্থী ক্যাম্প ও বস্তি থেকে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে অন্যত্র। এ কাজে অর্থ ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে চলছে মিয়ানমারের বলিবাজারের বাসিন্দা শহরের বাজারঘাটায় বসবাসকারী আরএসওর সহসভাপতি মৌলভী শাকের উল্লাহ, ছালামত জঙ্গীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ইতোপূর্বে জামিনে মুক্ত পাহাড়তলীর জঙ্গী মৌলভী আবু ছালেহ, তারাবনিয়াছড়ায় বসবাসকারী মৌলভী আয়াছ, শাপলাপুরের মৌলভী আজিজ, মৌলভী ইকবাল, বাঁচামিয়ারঘোনার মৌলভী মাহমুদুল হাসান ও মৌলভী আবদুল আজিজ। সূত্রে জানা গেছে, ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছালামত উল্লাহ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দী জীবন কাটালেও তার সহযোগীদের অপকর্ম থেমে নেই মোটেও। জঙ্গী ছালামতের মুহুরিপাড়ার রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুলিশ একবার শুধু তল্লাশি চালিয়ে দায়িত্ব শেষ করায় ওই জঙ্গীর স্থাপনাসহ সকল কার্যক্রম ঠিকই চলছে দেখে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও জঙ্গী ছালামতের জুমনগরে নির্মাণাধীন রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরএসও ক্যাডারদের নিয়মিত বৈঠক হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ঈদগাও পুলিশ ফাঁড়ির কয়েক অসৎ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী আবু সালমান (মোঃ আলম), ছালামত উল্লাহসহ পাঁচ জঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার সপ্তাহ খানেক পর থেকে অবৈধভাবে বনজসম্পদ দখল করে জুমনগরে নির্মাণাধীন ওই জঙ্গী কারখানায় তাদের টোকেনধারী লোকজন ছাড়া কাউকে সেখানে যেতে দেয়া হয় না বলে জানা গেছে। তাদের ওইসব স্থাপনা উচ্ছেদ না করতে বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি জঙ্গীর সহযোগীরা। সেখানে সংবাদকর্মীদের সম্পূর্ণরূপে যাওয়া-আসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে আরএসও ক্যাডাররা। এদিকে টেকনাফ ও উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প থেকে আরএসও ক্যাডাররা সন্ত্রাসী ২ শতাধিক রোহিঙ্গাকে সরিয়ে জুমনগর, মুহুরিপাড়া, জঙ্গী আবু ছালেহর নির্মাণাধীন পাহাড়ি জনপদ ছলখোলার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, পাহাড়তলী, পেশকারপাড়াসহ শহরে একাধিক স্থানে ভাড়াবাসায় গোপনে আশ্রয় দিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। কোরবানির ঈদের সময়ে যাদের মাধ্যমে (স্থানীয় ব্যক্তি) লাখ লাখ টাকার গরু কিনে জঙ্গীরা রোহিঙ্গাদের বশে রেখেছে, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের সহযোগিতায় ভাড়া বাসা ঠিক করে দেয়া হচ্ছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। টেকনাফ-উখিয়ার আশ্রিত ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গা পালানোর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয়দের অনেকে বলেন, শরণার্থী ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলার বালাই নেই। রোহিঙ্গারা যে কোন সময় যত্রতত্র যাওয়া আসা করে থাকে। তবে সরকারীভাবে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার আগে সড়কপথে কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, শরণার্থী ক্যাম্পের চতুর্দিকে রয়েছে অসংখ্য পথ- মেঠোপথ। ক্যাম্পে নেই বাউন্ডারি সীমানা প্রাচীর, নেই কাঁটা তারের ঘেরাও। আর পাশে রয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের বস্তি। কে কোথায় যায় এবং আসে, তার খবর রাখা মুশকিল। কিছু কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়েছে স্বীকার করে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) স্থানান্তরের সময় গণনা করলে বোঝা যাবে। সচেতন মহল জানান, বাংলাদেশী বলে দাবিদার জাতীয় পরিচয়পত্র বহনকারী আরএসও ক্যাডারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। ভয়ঙ্কর জঙ্গী ছালামতের সহযোগী জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের ওইসব জঙ্গীদের তালিকা রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। টাস্কফোর্স গঠন করে আগে ওসব জঙ্গীদের গ্রেফতার করা হলে রোহিঙ্গা বিষয়ে সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা অধিকতর সহজ হবে। ইতোপূর্বে কিছু কিছু আরএসও জঙ্গী প্রশাসনের হাতে আটক হলেও তারা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে এবং কতিপয় ধান্ধাবাজ নেতার তদ্বিরে ছাড়া পেয়ে গেছে।
×