ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপী ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই ॥ আতিউর

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

খেলাপী ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই ॥ আতিউর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, খেলাপী ঋণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কেননা মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের খেলাপী ঋণের কারণেই সার্বিক খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেশি মনে হয়। কিন্তু কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকসহ (রাকাব) কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে খেলাপী ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। দুই দিনব্যাপী ১৫তম জাতীয় পরিসংখ্যান সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগম। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিসংখ্যান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রফেসর ড. মোসলেহ উদ্দিন। বক্তব্য রাখেনÑ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও সহসাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মাহবুব আলী ও সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়ার অনিতা মেধাকার। ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল। গত ৫ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এ প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল। এশিয়ার মধ্যে এক্সচেঞ্জ রেট সবচেয়ে স্থিতিশীল। গত তিন বছর ধরে সামান্য ওঠা-নামা করছে। আমাদের রিজার্ভ অনেক রয়েছে। তাই সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক চিত্র ভাল। তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আমূল পরিবর্তন এসেছে। অন্ন, বস্ত্র যেমন মানুষের দৈনিক অপরিহার্য তেমনি নির্ভরযোগ্য, মানসম্পন্ন ও পর্যাপ্ত পরিসংখ্যান সামাজিক জীবনে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রধান অতিথির বক্তবে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন পরিশুদ্ধ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জবাবদিহিতামূলক সরকার হলে অর্থাৎ আমাদের মতো সরকার হলে প্রতিনিয়ত পরিসংখ্যানবিদদের কাছে আমাদের যেতে হবে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের সঙ্গে শাসকদের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। এটি তথ্যপ্রযুক্তি গণমাধ্যমের কারণে সম্ভব হয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সুরাইয়া বেগম বলেন, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিসংখ্যান ব্যুরো সঠিক ও আন্তর্জাতিকমানের তথ্য সরবরাহ করছে। এ কাজে পরিসংখ্যানবিদরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের অফিসিয়াল ট্রেডিং পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ দুই দেশের মধ্যে রফতানি বাণিজ্য অত্যন্ত লাভজনক। আমদানি ও রফতানির মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধনকে শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশ শুধু রফতানির ক্ষেত্রেই নয়, ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেও লাভবান হতে পারে। কেননা এতে আমদানি ব্যয় তুলনামূলক কম হবে। পণ্য পরিবহন খরচ কমে আসবে। প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। ভারতের যেসব রাজ্যে চাহিদা রয়েছে অথচ উৎপাদন ব্যয় বেশি সেসব রাজ্যে খোঁজখবর নিয়ে ওই সব পণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীদের সরকারী সহযোগিতা দিতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের রেল ও নৌসহ বিভিন্ন অবকাঠামো খাতে ভারত যাতে বিনিয়োগ করে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ড. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আমরা বিগ ডাটা বিশ্বে প্রবেশ করেছি। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই এই ডাটা ব্যবহার করে তাঁদের ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাঁরা ব্যবহার করতে পারছেন না তাঁরা পিছিয়ে পড়ছে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কর্মকা-ে উন্নতমানের পরিসংখ্যান সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আমেরিকায় এখনও ২ লাখ পরিসংখ্যানবিদের ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, এখন অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা পরিসংখ্যানবিদ নয় তাঁরাও ক্লাস নিচ্ছেন, এতে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি কারও কাম্য নয়। শুক্রবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ নির্বাচন। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সভাপতি পদে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ভিসি ড. নুরুল ইসলাম, জেনারেল সেক্রেটারি পদে বেলাল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পদে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক, সদস্য পদে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাসুদ আলম, মাকসুদ হোসেন, সহিদুল ইসলাম খান, ইফতেখায়রুল করিম, হাফিজুর রহমান, আবদুর রহিদ সিকদার ও গোলাম রহমান প্রমুখ।
×