ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কে আনা হচ্ছে উপজেলা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪

অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কে আনা হচ্ছে উপজেলা

ফিরোজ মান্না ॥ উপজেলা পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে তথ্যপ্রযুক্তি সেবার আওতায় আনতে সম্প্রসারিত হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক। ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমানে ২৯০টি উপজেলায় দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ৪৮২টি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের কাজ করার কথা রয়েছে। প্রথম ধাপে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে বাকি উপজেলায় কেবল স্থাপনের কাজে হাত দেয়া হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূর করতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পে কাজের গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে হারে কাজ চলছে তাতে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য অনেক কমে আসবে। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার কথা। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ কম থাকায় কাজ দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার বিষয়ে জোর তাগিদ রয়েছে। প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। এ প্রকল্পে ৪৮২টি উপজেলাকে বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭৯টি উপজেলার বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ আগেই ছিল। বাকি ৩০৩টি উপজেলার মধ্যে ১৩টি উপজেলায় এ মুহূর্তে ভৌগোলিক কারণে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অবশিষ্ট ২৯০টি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। বঞ্চিত এলাকার মধ্যে রয়েছে ভোলা সদর, সনদ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, লংদু, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, বরিশালের মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ এবং হিজলা এলাকা। প্রকল্পটিতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬১ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২২৫ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৯৬ কোটি এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। অবশ্য নতুন অর্থবছরে কোন টাকা ছাড় না হওয়ায়। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের গতি নেই বলেই চলে। অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কবিহীন এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দেয়ার জন্য ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল)। সারাদেশে নতুন করে ৭ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় টার্মিনাল নির্মাণের সরঞ্জাম স্থাপন করার জন্য একটি প্রস্তাবও করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেট ব্যবহারে শহরের সঙ্গে গ্রামের পার্থক্য অনেক খানি দূর হবে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে। দ্রুতগতির ই-সেবা ছড়িয়ে পড়বে দেশে প্রত্যন্তাঞ্চলে। অবাধ তথ্যপ্রবাহের কারণে তাদের জীবনমানের উন্নতি হবে। পাশাপাশি নতুন এ অপটিক্যাল কেবল সম্প্রসারণের ফলে বিদ্যমান কেবলের ওপর চাপ কমবে। তথ্যপ্রযুক্তির চরম বিকাশের পরও দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়েছে। দেশে বিদ্যমান ৪৮৬টি উপজেলার মধ্যে ৪টি মেট্রোপলিটন শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা) প্রশাসনিক উপজেলা নেই। সূত্র জানিয়েছে, সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিলেও এই ধরনের প্রকল্পগুলোর কোনটিতেই কাজের গতি বাড়ছে না। দেশের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় আনার জন্য সরকার সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন পর্যায়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল পেয়েছে দেশের মানুষ। মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ৪৫ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জীবনমানের আরও উন্নতি হবে। এদিকে বিটিসিএলের হাতে নেয়া সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে (ইউপি) ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার প্রকল্পটিও ঝুলে গেছে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে জেলা ও থানা শহরের উপকণ্ঠের মাত্র এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও সেটিও বাস্তবায়ন করতে পারছে না বিটিসিএল। বাকি সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম এখন বন্ধ রয়েছে। ২০১০ সালে হাতে নেয়া গোটা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে হাতে নেয়া এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদকেই নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পারেনি বিটিসিএল। বিটিসিএল বলছে, টাকার অভাবে তারা সব ইউনিয়ন পরিষদকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে পারেনি। তাছাড়া বহু ইউনিয়নে বিদ্যুত না থাকার কারণে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্লেস নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ৭১৯ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রাম পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কাজটি বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রণালয়ের কাছে কয়েক দফা চিঠি লিখেও কোন সাড়া পায়নি। প্রথম পর্যায়ে দেশের প্রতিটি জেলার ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদকে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি বিভাগে ১১০টির বেশি ইউনিয়ন এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত থাকবে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। আধুনিক, শক্তিশালী ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামোর মাধ্যমে জনগণের কাছে এ সুবিধা সহজলভ্য এবং নিরবচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে কার্যালয় স্থাপন করে তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘অপটিক্যাল ফাইবার সেল’ গঠন করা হবে। এসব সেল থেকে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে ২শ’ লাইনের এক্সচেঞ্জ বসানোর কথা রয়েছে।
×